খেলা
মেরি কমের পথে
নেকেই ভাল চোখে দেখতেন না। তবুও দমে যায়নি মেয়েটি। দাঁত চেপে রিং-এ লড়াই চালিয়ে গিয়েছে হাওড়ার প্রিয়াঙ্কা মাঝি। এসেছে সাফল্যও।
প্রিয়াঙ্কার খেলাধুলোর প্রতি উৎসাহ ছোটবেলা থেকে। বাবা এগারো বছর বয়সে হাওড়া খুরুট ব্যায়াম সমিতির ভলিবল ক্যাম্পে ভর্তি করে দেন। শুরু হয়ে ভলিবল চর্চা।
সেখানেও সফল হয়েছেন প্রিয়াঙ্কা। তবে ভলিবলে তাঁর মন টেকেনি। তাঁর কথায়: “২০০৬-এ টিভির পর্দায় মহম্মদ আলির মেয়ে লায়লার বক্সিং দেখে খেলাটাকে ভালবেসে ফেলি। মাকে জানাই। মা প্রথমে রাজি হননি। বাবা রাজি হয়ে যান।” প্রিয়াঙ্কার মা তপতীদেবী বলেন, “ওর বাবা বাবলু মাঝি বক্সার ছিলেন। সহজেই রাজি হয়ে যান।”
বাবলু মাঝির কথায়: “ও বক্সিং শিখতে চাইলে এক কথায় রাজি হয়ে যাই। তবে কিছু সমস্যাও ছিল। হাওড়ায় ছেলেদের জন্য একাধিক বক্সিং চর্চার কেন্দ্র থাকলেও মেয়েদের কোনও বক্সিং চর্চার কেন্দ্র নেই। ওকে সাউথ ক্যালকাটা ফিজিক্যাল কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনে ভর্তি করে দিই। সপ্তাহে দু’দিন ওখানে অভ্যাস করতে যেত। বাকি দিনগুলি আমার কাছে বাড়ির ছাদে অভ্যাস করত।”
বক্সিং সেন্টারের দুই কোচ অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় ও সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে বছর দুয়েক অনুশীলনের পরে ২০০৮-এ জুনিয়র ইন্টার ডিস্ট্রিক্ট মিটে যোগ দেওয়ার সুযোগ পায় প্রিয়াঙ্কা। প্রথম বারেই রুপো জেতে। ওই বছর স্টেট মিটেও প্রথমে নেমে রুপো জেতে। ২০০৯-এ জুনিয়রে স্টেট মিটে ও ন্যাশনাল মিটে চ্যাম্পিয়ন হয়। ’১০ এবং ’১১-এ সিনিয়র স্টেট মিটে ও ন্যাশনাল মিটে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সোনা জেতে।
বর্তমান কোচ রাজেশ বাসনেট প্রিয়াঙ্কার লড়াইয়ের প্রশংসা করে বলেন, “ও যে ভাবে খেলছে তাতে সামান্য উন্নতি করতে পারলে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়ও ভাল ফল করতে পারবে।”
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ পড়েন প্রিয়াঙ্কা। মেরি কমের সাফল্য তাঁকে নতুন উৎসাহ জুগিয়েছে। আত্মবিশ্বাসের সুুরে প্রিয়ঙ্কা বললেন, “এখন লক্ষ্য মেরি কমের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পদক জেতা। সকালে বাড়ির ছাদে বাবার কাছে আর বিকেলে হাওড়া ওয়েস্ট এন্ড ক্লাবের রিং-এ অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছি।”


ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.