মাছবাজার
নরক গুলজার
মে আছে নোংরা জল। চার পাশে ছড়ানো থার্মোকলের বক্স। দুর্গন্ধে পাশের রাস্তা দিয়ে হাঁটা যায় না। এ ছবি হাওড়ার মাছবাজারের। অভিযোগ, হাওড়া পুরসভা আবর্জনা পরিষ্কার না করায় এই অবস্থা। পাশাপাশি রয়েছে দূষণের সমস্যাও।
হাওড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে বঙ্কিম সেতুর নীচ দিয়ে এসি মার্কেটে আসার পথে ডান দিকে দেড় একর জমির উপর রয়েছে এই মাছবাজার। দীর্ঘ দিন ধরে এখানে মাছের ব্যবসা চললেও ১৯৯৭-এ পাকাপাকি ভাবে বাজার গড়ে ওঠে। এখানে ব্যবসা করেন দু’শোর বেশি ছোট-বড় পাইকারি মাছ ব্যবসায়ী। প্রতি দিন প্রায় ৭০০-৮০০ মেট্রিক টন মাছের কেনাবেচা চলে। এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিয়ে ক্ষুব্ধ মাছ ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
এই বাজারের পাশেই জিটি রোড। বাজারের এক নম্বর প্রবেশপথের বাঁ দিকে রয়েছে নোংরা ফেলার জায়গা। সেখানে আবর্জনার স্তূপ। নোংরা রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে। ঝাঁঝালো দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। কোনওক্রমে নাকে চাপা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়।
গোটা চত্বর জুড়ে ছড়িয়ে থাকে মাছ আনার থার্মোকলের বক্স। খাবারের সন্ধানে কাক, কুকুর, বিড়াল ভিড় জমায়। পাশের নর্দমা জঞ্জাল, কাদায় জমে গিয়েছে। স্থানীয় বুবুন মজুমদার বলেন, “এই রাস্তা দিয়ে যাওয়া যায় না। একে তো মাছের গন্ধ! তার পরে নোংরা। কয়েক মিনিট দাঁড়ালেই শরীর খারাপ লাগে।”
বাজারের ভিতরে নোংরা বরফ গলা জল, কলাপাতা, মাছের আঁশ। ঠিকমতো আলো ঢোকে না। নর্দমা না থাকায় জল বেরতে পারে না। ক্ষুব্ধ মাছ ব্যবসায়ীরা জানালেন, বাধ্য হয়ে নোংরা জলের মধ্যে দিয়েই চলাফেরা করতে হয়। চর্মরোগ লেগেই থাকে। মাঝেমধ্যে তাঁরাই লোক লাগিয়ে পরিষ্কার করান। কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। হাওড় পাইকারি মাছবাজার সমবায় সমিতির ডিরেক্টর শঙ্কর প্রসাদ বললেন, “আমরা লোক লাগিয়ে ভিতরের অংশ পরিষ্কার করাই। থার্মোকলের বক্স বাইরের ভ্যাটে ফেলে আসা হয়। নিকাশি ভাল না হওয়ায় জল বের করা যায় না।”
পাইকারি হাওড়া মাছবাজার সমবায় সমিতির সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মকসুদ বলেন, “প্রত্যেক ব্যবসায়ী প্রতি বছর ১৫৬৫ টাকা আবর্জনা কর দেন। প্রত্যেকের ট্রেড লাইসেন্সও আছে। তার পরেও পুরসভা ঠিকমতো জঞ্জাল পরিষ্কার করে না। বহু বার মেয়রকে জানিয়েছি। কোনও কাজ হয়নি। অগত্যা রাজ্য সরকারকেও জানিয়েছি।”
হাওড়ার মেয়র মমতা জয়সোয়াল বলেন, “ভ্যাটটি পুরসভার তালিকায় নেই। তা ছাড়া ভ্যাটটি বাজারের ভিতরে। তাই পুরসভা ভ্যাটটি পরিষ্কার করে না। মাছ ব্যবসায়ীদের একাংশ নিয়মিত কর দেন না।” যদিও সৈয়দ আনোয়ার মকসুদের দাবি, “ভ্যাটটি বাজারের বাইরেই রয়েছে। তা ছাড়া সবাই ঠিকমতো কর দেন।” হাওড়া পুরসভার বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের অরুণ রায় বলেন, “মাছ ব্যবসায়ীরা পুরসভাকে আবর্জনা কর দিচ্ছেন। ওঁদের ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে। পুরসভার উচিত বাজার পরিষ্কার করা।”
পরিবেশবিদ সুভাষ দত্তের কথায়: “১৯৯৫-এ মাছবাজারের পাশে সব্জিবাজারের দূষণ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। ১৯৯৬-এর সেপ্টেম্বরে এই চত্বরকে পরিষ্কার রাখার নির্দেশও দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু বিশেষ উন্নতি হয়নি। মাছের বাজারটির অবস্থা আরও খারাপ।” পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান বিনয়কৃষ্ণ দত্ত বলেন, “হাওড়া মাছবাজারের দূষণের বিষয়ে জানি। পুরসভার ভূমিকাও জানি। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।”

ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.