আজমল কসাবের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হইয়াছে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, যেন কসাবের মৃত্যুদণ্ডের সঙ্গে-সঙ্গেই ভারতের বিভিন্ন স্থানে জেহাদি সন্ত্রাস আছড়াইয়া পড়ার আশঙ্কাও দূরপরাহত হইয়া পড়িয়াছে। অন্তত জনসাধারণের একাংশের মধ্যে এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার ঘটনা যে স্বস্তি ও সন্তুষ্টির উদ্যাপন প্ররোচিত করিয়াছে, তাহাতে এমন সংশয় জাগা স্বাভাবিক। আর এখানেই সমস্যা।
কসাব ও তাহার সহচররা কোথা হইতে আসিয়াছিল, তাহা জানা। কিন্তু ভারতে, মুম্বইয়ে তাহারা কাহাদের সাহায্য পাইয়াছিল, তাহা কি সম্যক জানা গিয়াছে? মুম্বইয়ে তাহারা যে হত্যালীলা চালায়, যে-বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক ব্যবহার করে, যে দীর্ঘস্থায়ী দুঃসাহসিকতায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাবলয়ে বেষ্টিত জনস্থানে হামলা করিয়া দেড়শতাধিক মানুষের প্রাণ হরণ করে, তাহাকে একটি ছোটখাটো যুদ্ধই বলা যায়। সীমান্তের বাহির হইতে জলযানে করিয়া আসিয়া ইহা করা সম্ভব নয়, ভারতীয় সহযোগীরা না থাকিলে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের হামলার ক্ষেত্রে যে অনুরূপ সহযোগীদের অভাব হইবে, ইহা কি নিশ্চিত করা গিয়াছে? কসাবের ফাঁসির খবর প্রচারিত হইতে-না-হইতেই লস্কর-এ-তইবা এবং পাক তালিবানের কমান্ডাররা গণমাধ্যমকে বার্তা দিয়াছেন, অতঃপর ভারতীয় লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা শুরু হইবে। শুধু তাহাই নহে, কসাবের মৃতদেহ পাকিস্তানে না-পাঠাইবার প্রতিক্রিয়ায় ওই জেহাদিদের হুমকি, নিহত ভারতীয়দের দেহও পাঠানো হইবে না। হুমকি টেলিফোন মারফত দেওয়া হইলেও এই দুই সংগঠনের ঘাঁটি যে পাক ভূখণ্ডে এবং তাহারা যে আত্মগোপনকারী সংগঠন নয়, ইহা সুবিদিত। তাঁহারা বহাল তবিয়তে পাকিস্তানের নিরাপদ আশ্রয়ে বসিয়া সন্ত্রাসবাদী হামলার ছক কষিয়া চলিয়াছেন।
লস্কর-এ-তইবা তথা জামাত-উদ্-দাওয়ার নেতা হাফিজ সইদ এখনও পাকিস্তানে সাদরে প্রতিপালিত। কসাব ও তাহার সহযোদ্ধাদের মতাদর্শগত এবং সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া কমান্ডার জাকি-উর-রহমান লাক্ভি-ও পাকিস্তানের জেলেই সাদরে বাস করিতেছে। মুম্বই হামলায় জেহাদি পাক নাগরিকদের জড়িত থাকার তদন্তে ইসলামাবাদ কোনও সহায়তাই করে নাই। পাকিস্তানের ভূখণ্ড ভবিষ্যতে ভারত-বিরোধী জঙ্গি ক্রিয়াকলাপের জন্য ব্যবহৃত হইবে না, এমন আশ্বাসও ইসলামাবাদ হইতে শুনা যায় নাই। বরং পাকিস্তান হইতে কাশ্মীর সীমান্ত দিয়া নিয়মিত প্রশিক্ষিত জেহাদিদের ভারতে অনুপ্রবেশ করানোর প্রয়াস অব্যাহত। পাকিস্তানে আশ্রিত তালিবান কমান্ডার এহসানুল্লা এহসান এবং লস্কর-ই-তইবার নেতৃত্ব যে ভাবে কসাবকে ‘শহিদ’ বানাইয়া তাহার মৃত্যুর বদলা লইতে জেহাদিদের উস্কানি দিতেছে, তাহাতে ভারতে ইসলামি জঙ্গিরা সক্রিয় হইয়া উঠিতে পারে। কসাবের ফাঁসি তাই উপমহাদেশের সন্ত্রাস-দমন অভিযানে একটি অস্থায়ী যতি-চিহ্ন হইলেও কোনও পূর্ণচ্ছেদ নয়। ভারতের সরকার ও জনসাধারণ, উভয়েরই সতর্কতা শিথিল করা চলিবে না। |