ভর্তুকির সিলিন্ডার হয়তো ৯টি
বিরোধীদের রুখতে
হেঁশেলের মনরক্ষা
বিরোধী আক্রমণ ভোঁতা করতে ভর্তুকিতে দেওয়া গ্যাস সিলিন্ডারের সংখ্যা বাড়াতে পারে মনমোহন সিংহের সরকার।
আজ এক প্রশ্নের উত্তরে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী বীরাপ্পা মইলি বলেছেন, “ভর্তুকিযুক্ত সিলিন্ডারের সংখ্যা বাড়ানোর দাবিটি বিবেচনা করছে সরকার।” সংসদের চলতি অধিবেশনেই এই সংক্রান্ত ঘোষণা হতে পারে বলে সরকারি সূত্রে খবর। আর্থিক সংস্কারের পথে পা দিয়ে গত সেপ্টেম্বরে ভর্তুকির সিলিন্ডারের সংখ্যা পরিবারপিছু বছরে ছ’টিতে বেঁধে দিয়েছিল কেন্দ্র। তার পরেই প্রতিবাদে সরব হয় বিরোধীরা। উষ্মা প্রকাশ করে এমনকী সরকারের শরিক এবং কংগ্রেসের একাংশও। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন।
এ দিকে, সূরজকুণ্ডে দলীয় বৈঠকে গ্যাসের দাম পুনর্বিবেচনার দাবিতে সরব হন কংগ্রেসের একাধিক শীর্ষ নেতা। তাঁদের বক্তব্য ছিল, এই সিদ্ধান্তে আম-জনতার উপরে চাপ বাড়ছে। ভোটের মরসুমে যার মূল্য চোকাতে হতে পারে কংগ্রেসকে। এই অবস্থায় হিমাচল প্রদেশে ভোটের ঠিক আগে ভর্তুকিবিহীন রান্নার গ্যাসের দাম বাড়িয়েও পিছিয়ে আসতে হয় সরকারকে। এ বার ভর্তুকির সিলিন্ডারের সংখ্যা বাড়ানোর ভাবনাচিন্তাও শুরু হয়েছে। কেন্দ্র সিলিন্ডারের সংখ্যা ছ’য়ে বেঁধে দেওয়ার পরে কংগ্রেসশাসিত রাজ্যগুলি নিজেরা আরও তিনটি সিলিন্ডারে ভর্তুকি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল। বলা হচ্ছে, কেন্দ্র এ বার নিজেরাই ৯টি সিলিন্ডারে ভর্তুকি দিতে পারে। এবং আগামী সপ্তাহেই সংসদে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।
কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, ভর্তুকির সিলিন্ডারের সংখ্যা বাড়ানোর ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত এক প্রকার হয়েই গিয়েছে। দু’টি বিষয় নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে। এক, ঊর্ধ্বসীমা কতটা বাড়ানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পরে সনিয়ার বক্তব্য, ৯টি সিলিন্ডার দেওয়া হোক। কিন্তু কংগ্রেসের অধিকাংশ নেতার দাবি, ১২। দ্বিতীয়ত, ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্তের জন্য উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষা করা হচ্ছিল। যাতে ওই ঘোষণা কংগ্রেসকে রাজনৈতিক সুফল দেয়। সেই সময়টা এখন এসে গিয়েছে বলেই মনে করছেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতারা।
কারণ, এক দিকে গুজরাতে ভোট দোরগোড়ায়। অন্য দিকে, মমতার অনাস্থাকে নস্যাৎ করে দিলেও খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি নিয়ে সংসদে সরব হতে চাইছে বাম-বিজেপি। এই বিষয়ে ভোটাভুটি-সহ আলোচনার দাবি জানাচ্ছে তারা। কংগ্রেস নেতাদের একাংশের মতে, এই অবস্থায় ভর্তুকির সিলিন্ডারের সংখ্যা বাড়ালে গুজরাতে যেমন দলের সুবিধা হবে, তেমনি সংসদেও বিরোধীদের পালের হাওয়া অনেকটাই কেড়ে নেওয়া যাবে। আর এই কৌশলের মধ্যে কংগ্রেস-মুলায়ম সমঝোতার গন্ধও পাচ্ছেন রাজনীতির কারবারিরা। সমাজবাদী পার্টির প্রধান রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের বিরোধী। এখন ভর্তুকির সিলিন্ডারের সংখ্যা বাড়িয়ে তাঁর মন জয় করতে পারলে সংসদে কোনও ভোটাভুটিতেই সরকারের সমস্যা হবে না।
অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ হয়ে যাওয়ার পর তৃণমূলও এ বার রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে সরব হতে চাইছে। প্রবীণ বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণীর সঙ্গে দেখা করে তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় আজ জানিয়ে দেন, এফডিআই নিয়ে বিরোধীদের ১৮৪ ধারায় আলোচনা ও ভোটাভুটিতে তাঁদের আস্থা নেই। বছরে পরিবারপিছু ২৪টি ভর্তুকির সিলিন্ডার দেওয়ার দাবি জানিয়ে তাঁরা এ বার সংসদ অচল করবেন। কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, সিলিন্ডারের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ালে তৃণমূলের সেই পরিকল্পনাও অনেকটাই ভোঁতা করে দেওয়া যাবে।
অবশ্য সংস্কারের পথে এগিয়েও এই ভাবে পিছিয়ে এলে শিল্পমহলের সমালোচনার মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে সরকারের। কিন্তু কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, রাজনীতির দাবির কাছে এটুকু মাথা নোয়াতেই হবে। তা ছাড়া সংস্কার থেকে তো পুরোপুরি পিছু হটছে না সরকার। একটা মধ্যপন্থা নেওয়া হচ্ছে মাত্র।
রাজনীতির দাবির চাপ ভর্তুকি তোলার পর ইস্তক অনুভব করছেন সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব। বিরোধী-শরিক তো বটেই, কংগ্রেসের মধ্যেও এ নিয়ে প্রবল অসন্তোষ তৈরি হয়। অন্তত চার জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ দাবি করে সনিয়া গাঁধীকে চিঠি লেখেন। সেই সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যের কংগ্রেস সভাপতি ও মুখ্যমন্ত্রীরাও চিঠি লিখে সনিয়ার কাছে ক্ষোভ জানান। সে সময় সনিয়া কংগ্রেস-শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের নির্দেশ দেন, ওই সব রাজ্যে বছরে আরও তিনটি সিলিন্ডার ভর্তুকি মূল্যে দিতে হবে এবং রাজ্য সরকারকেই সেই ভর্তুকি বহন করতে হবে।
তার পরেও সূরজকুণ্ডের বৈঠকে সনিয়া-মনমোহনের সামনেই কংগ্রেসের একাধিক শীর্ষ নেতা জানান, ভর্তুকিযুক্ত সিলিন্ডারের ঊর্ধ্বসীমা না বাড়ালে লোকসভা ভোটে ভরাডুবি অনিবার্য। কারণ খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ লগ্নির বিষয়টি অনেকেই বোঝেন না। কিন্তু রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি ছাঁটাই সরাসরি গৃহস্থের হেঁশেলে আঘাত করেছে। আর তার পরেই ভর্তুকি বাড়ানোর এই ভাবনা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.