ভাড়া-বিতণ্ডায় মারই খাচ্ছেন কন্ডাক্টর, পাট গোটাচ্ছে বাসও
শঙ্কাই সত্যি হল। বাসভাড়া নিয়ে বচসা গড়াল হাতাহাতিতে। প্রহৃত হলেন কন্ডাক্টর। শেষমেশ বাস আর চললই না!
বস্তুত দ্বিতীয় বার সংশোধিত ভাড়া ঘিরে বিভ্রান্তির জেরে গণ-পরিবহণে টালমাটাল দশা। মালিক সংগঠনের দাবি, গত তিন দিনে কলকাতা-শহরতলিতে হাজারখানেক বেসরকারি বাস বসে গিয়েছে। জেলায় পরিস্থিতি আরও সঙ্গিন। সোমবার থেকে হুগলির ৪৭টি রুটেই বাস তুলে নেওয়া হচ্ছে। ফলে হাওড়া-বাঁকুড়া-বর্ধমান-উত্তর ২৪ পরগনা ও দুই মেদিনীপুরের মানুষের জন্যও বিস্তর ঝক্কি অপেক্ষা করছে।
রাজ্য সরকার বলেছিল, শনিবার থেকে বাসভাড়ার নতুন সংশোধিত তালিকা প্রতিটি রুটে পৌঁছে দেওয়া হবে। হয়নি। ফলে যখন-তখন কন্ডাক্টর ও যাত্রীদের মধ্যে গণ্ডগোল বাধতে পারে বলে বাস-মালিক ও কর্মীদের একাংশ আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। আশঙ্কা যে অমূলক নয়, রবিবার আক্রা ফটক থেকে হাওড়াগামী ২৫৯ নম্বর রুটে তার প্রমাণ মিলল।
পরিবহণ-সূত্রের খবর: সকালে ওই রুটের এক বাসের কন্ডাক্টর ৬ নভেম্বরের তালিকামতো ভাড়া আদায় করছিলেন। কিছু যাত্রী সংশোধিত চার্ট দেখতে চান। কয়েক জন সংবাদপত্রের কাটিং দেখিয়ে জানান, এক টাকার বেশি দেবেন না। কথা কাটাকাটির সময়ে কন্ডাক্টর মহম্মদ সিরাজুল ইসলামের মুখে এক যাত্রী ঘুষি মারেন বলে অভিযোগ। তারাতলা মোড়ের কাছে এক ট্র্যাফিক সার্জেন্টকে দেখে চালক বাস থামিয়ে দেন।
সার্জেন্টের মধ্যস্থতাতেও সমস্যা মেটেনি। শেষমেশ চালক-কন্ডাক্টর মিলে বাস বসিয়ে দেন। এ দিন যাদবপুর-হাওড়া রুটে সরকারি ই-১ বাসেও যাত্রী-কন্ডাক্টর তুমুল বিতণ্ডা হয়েছে। হুগলি জেলা পুলিশ সূত্রে খবর: আরামবাগের হরিণখোলায় গোঘাট-তারকেশ্বর রুটেও এক কন্ডাক্টর যাত্রীদের হাতে মার খান। বাসুদেব ঘোষ নামে ওই কন্ডাক্টরকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। প্রতিবাদে বাস-কর্মীরা রাস্তা অবরোধ করলে তাঁদের মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। সরকার কী বলছে?
পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে। একটি সরকারি বাসেও বচসার খবর পেয়েছি। কোনওটাই তেমন বড় ঘটনা নয়। প্রশাসন সঙ্গে সঙ্গে হস্তক্ষেপ করেছে।” কিন্তু সংশোধিত ভাড়া-তালিকা রবিবারেও পৌঁছল না কেন?
মন্ত্রীর জবাব, “শনি-রবি সরকারি ছুটি। তাই সমস্যা হয়েছে। চেষ্টা হচ্ছে, যাতে সোমবার সন্ধের মধ্যে সংশোধিত ভাড়ার তালিকা সর্বত্র পৌঁছনো যায়।”
তবে মালিকেরা আশু সুরাহা সম্পর্কে বিশেষ আশাবাদী নন। ‘জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেট্স’ সূত্রের খবর: কলকাতায় ৭৭, ৩৭ ইত্যাদি রুটে বাস বসে যাচ্ছে। ২৫৯ রুটের বাসটির মালিক ইন্দ্রনীল পালের কথায়, “এখনও সংশোধিত ভাড়া-তালিকা পেলাম না! অথচ যাত্রীরা চার্ট দেখতে চাইছেন।” কন্ডাক্টর সিরাজুলের মন্তব্য, “মেরে মুখ ফুলিয়ে দিয়েছে! এর পরেও বাস নামাতে হবে?” আরামবাগের ঘটনার প্রেক্ষিতে এ দিন চুঁচুড়ায় মালিক সংগঠনের সভায় স্থির হয়, সরকার বিজ্ঞপ্তি না-দেওয়া পর্যন্ত জেলার ৪৭টি রুটেই বাস বন্ধ থাকবে।
চার্ট না হয় পৌঁছল। পুনঃ সংশোধিত ভাড়া-তালিকা মালিকেরা কি আদৌ মানবেন? তপনবাবু জানান, “২৩ নভেম্বর বৈঠক ডেকেছি। সেখানে পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে।” কাউন্সিল-সূত্রের দাবি: গত বছরে বৃহত্তর কলকাতায় দৈনিক গড়ে সাত হাজার বেসরকারি বাস চলত। ভাড়া না-বাড়ায় এক বছরে কমে দাঁড়ায় হাজার পাঁচেক। ৩১ অক্টোবর নতুন ভাড়া ঘোষিত হওয়ার পরে (যার তালিকা বেরিয়েছে ৬ নভেম্বর) কিছু বাস ফের রাস্তায় নেমেছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাজ্য ভাড়া সংশোধন করায় হাজারখানেক বাস ফের বসে গিয়েছে। যদিও পরিবহণমন্ত্রী বলছেন, “ইউনিয়নগুলো সরকারের উপরে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। মন্ত্রিগোষ্ঠী ব্যাপারটা দেখছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.