আনন্দবাজার-এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার
‘ধোনি, সিলি পয়েন্ট এত সহজে সরিও না’
মুম্বইয়ের অ্যাপার্টমেন্টে যখন তাঁকে ফোনে ধরা গেল, বিকেল ৬.০১। শিবাজি পার্কে প্রয়াত বাল ঠাকরের শরীরে এখনই অগ্নি প্রজ্জ্বলন ঘটল। টিভিতে খুব মনমরা ভাবে সেটাই দেখছিলেন ঠাকরের অন্যতম প্রিয় ক্রিকেটার। বিষাদের মধ্যেও সামান্য খুশি হলেন জেনে যে, এ দিন নভজ্যোৎ সিংহ সিধু ধারাভাষ্যে বারবার তাঁর নাম বলেছেন। এ-ও জানতেন না, ব্রিটিশ মিডিয়া যে তাঁকে যোগাযোগের চেষ্টা করে যাচ্ছে এবং বালাসাহেবের জন্য সারা দিন ফোন বন্ধ না থাকলে পেয়েও যেত। কারণ? তিনি অজিত ওয়াড়েকর যে উনিশ বছর আগে শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে এ দেশে ৩-০ চূর্ণ করার অন্যতম স্থপতি ছিলেন। ইংরেজ বধের মাস্টারপ্ল্যানটা তৎকালীন ম্যানেজার হিসেবে তাঁরই ছিল। আমদাবাদে ধোনিদের হতাশার কয়েক প্রহরে ওয়াড়েকরের নামটা সফল স্ট্র্যাটেজিস্ট হিসেবে বারবার উঠল। ধোনির দলকে প্রথম টেস্টের শেষ দিন আর বাকি সিরিজের জন্য ৫ টিপসও দিলেন আজহারের চাণক্য...

১) ধোনি, তিন স্পিনার কালবিলম্ব না করে খেলাও: ইংল্যান্ডের যে টিমকে আমরা ৩-০ চুরমার করেছিলাম সেটা অনেক ভাল টিম ছিল। গুচ-গ্যাটিংয়ের মতো স্পিন খেলার দুর্ধর্ষ দু’টো প্লেয়ার ছিল। তবু আমরা ওদের সিরিজে দাঁড়াতে দিইনি। কপিল দেব সেই টিমে ছিল। অনিল কুম্বলের মতো ম্যাচ জেতানো স্পিনার ছিল। তবু আমরা সঙ্গে রাজু আর রাজেশ চৌহানকে খেলিয়েছিলাম। প্রত্যেকটা টেস্টে তিন স্পিনার খেলেছে। ইংল্যান্ড আমাদের দেশে স্পিনার খেলতে ভয় পায়। ওরা যেটা ভয় পায় সেটাই তো বেশি করে ওদের দিকে এগিয়ে দিতে হবে। তাই না? আজ যেটুকু খেলা দেখলাম, তাতে তিন নম্বর স্পিনারের অভাবটা খুব প্রকট হচ্ছিল। হরভজনকে মুম্বই এবং বাকি সিরিজে অবশ্যই খেলানো উচিত।

২) অপ্রীতিকর সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পেও না, সচিনকে বলো ওপেন করতে: আমার কথা হল, তিন নম্বর স্পিনার খেলাতে গেলে ধোনি তোমায় অপ্রীতিকর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাদ দিতে হবে এক জন ব্যাটসম্যানকে। সেটা দেবে। আমার মতে গম্ভীরকে বসানো যেতে পারে। নইলে যুবরাজ। গম্ভীর সেঞ্চুরি পার্টনারশিপে অংশীদার ছিল আমি জানি। ও আমার স্কিমে থাকবে। তা বলে সিরিজ জেতাটা আমার প্রথম চাহিদা। ওপেনারের জায়গাটা পূজারাকে অফার করা যেতে পারে। বা সচিনকেও বলে দেখা যেতে পারে যে, তুমি কি একটা চূড়ান্ত চ্যালেঞ্জ নিয়ে দেখবে? সচিন-সহবাগ টেস্টে ওপেন করতে নামছে। ইংল্যান্ডের জন্য দৃশ্যটা ভাবতে পারছেন? সচিন বড় রান চাইছে। ওপেন করে সেটা করুক না।
২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৩ ১৮ নভেম্বর, ২০১২
সে দিন আর এ দিন। ইডেনে ইংল্যান্ড বধে ওয়াড়েকরের তিন অস্ত্র চৌহান-রাজু-কুম্বলের উল্লাস।
ডান দিকে মোতেরায় হতাশ ওঝা। - ফাইল চিত্র ও উৎপল সরকার
৩) ওদের রান শুকিয়ে দেওয়ার স্ট্র্যাটেজি চাই: ১৯৯৩-র সেই সিরিজের আগে আমরা বসে আলাদা প্ল্যানিং করেছিলাম, ঠিক কোথায় কোথায় বল করে ওদের রান করাটা আমরা কমিয়ে দেব। এরাও নিশ্চয়ই করেছে। কিন্তু সেটার রূপায়ণে অনেক বেশি পেশাদারিত্ব লাগবে। আমি ব্যাঙ্কের ম্যানেজার ছিলাম বলে বোধহয় এই কথাটা আরও বেশি বলতাম, ‘এভরি রুপি সেভড ইজ এভরি রুপি আর্নড।’ তেমনই মাঠে ‘এভরি রান সেভড ইজ এভরি রান আর্নড’। রোববার দেখছিলাম, অন্তত ৪০-৫০ রান এমন গেছে যেগুলো বাঁচানো গেলে ওরা অন্তত আজকের খেলার শেষে ভাবতে পারত না, আর যাই হোক, ইনিংসে হারছি না। আমি অপোনেন্ট টিমের ক্যাপ্টেন কোন দুঃখে ওদের এত সুন্দর, সুখী ভাবনা উপহার দিতে যাব?

৪) স্পেশ্যালিস্ট ক্লোজ ইন ফিল্ডার চাই: স্পিন নির্ভর আক্রমণে ঠিকঠাক ক্লোজ ইন ফিল্ড তৈরি রাখা ভীষণ জরুরি। আমি আর আজহার সিরিজ শুরুর আগে সেটা খুব ভাল ভাবে ছকেছিলাম। ১৯৭১-এ ইংল্যান্ডে সিরিজ জেতার সময় থেকেই হাড়ে হাড়ে জানি, ক্লোজ ইন-এ স্পেশ্যালিস্ট রাখা কত জরুরি। আমার দুশ্চিন্তা হল, ডানকান ফ্লেচার কি সেটা তৈরি করেছেন? করে থাকলে খুব ভাল। মাঠে তার বাস্তব প্রয়োগ যদিও দেখিনি। ক্লোজ ইন-এ এক-এক জন আসছে। আবার বদলে যাচ্ছে। এটা কিন্তু গো অ্যাজ ইউ লাইক কম্পিটিশন নয়। নিখুঁত লোক লাগবে এক-একটা জায়গায়। আর তাদের টানা ওই পজিশনেই অনুশীলন করাতে হবে। রাতারাতি মাঠে গিয়ে সেটা হয় না। আমি যেমন আমার ক্লোজ ইন ফিল্ডারদের ক্যাচিং দেওয়াটা নিজে করাতাম। অন্যদের করাত সহকারী কোচ। ওই জায়গাটা আমি নিজে দেখতাম। কারণ, ওই ফিল্ডাররা না হলে স্পিনাররাও বেকার।

৫) ঠাকরে খুশি হবেন এমন আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলো: ক্রিকেট নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বারবার বালাসাহেবের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। মানুষটা ক্রিকেটঅন্ত প্রাণ ছিলেন। আমি ছিলাম ওঁর অন্যতম ফেভারিট ক্রিকেটার। দু’দিন আগে মাতশ্রীতে ওঁকে দেখতে গিয়ে কত পুরনো কথা মনে আসছিল। দাদারের রানাডে রোডে ওঁর পুরনো বাড়ি। তখন আমরা প্রতিবেশী। ওঁর বাড়ির কাচটাচ কত ভেঙেছি। কখনও কিছু বলেননি। বরঞ্চ কাঙ্গা লিগেও নিয়মিত আমার খেলা দেখতে এসেছেন। দাদার থেকে চার্চগেট নিত্য সহযাত্রী ছিলেন ওঁরা তিন জন। বালাসাহেব, বাপু নাদকার্নি আর মাধব মন্ত্রী। ষাট দশকের কথা। তখন থেকেই কিন্তু উনি মুম্বইয়ের ‘সেফ্টি ফার্স্ট’ নয়, আক্রমণাত্মক জঙ্গি ক্রিকেটের ভক্ত। পাকিস্তান সম্পর্কে ওঁর কী মনোভাব ছিল আমরা সবাই জানি। অথচ জাভেদ মিয়াঁদাদকে অসম্ভব ভালবাসতেন। মিয়াঁদাদের লড়াকু ব্যাপারটা ওঁকে টানত। ভিভকে ভালবাসতেন। চাইতেন সচিন চালিয়ে খেলুক। আজহারের কবজির পেলবতা খুব প্রিয় ছিল। বলতেনও। কিন্তু আজহারের ক্যাপ্টেন্সির প্রশংসা কখনও ওঁর মুখে শুনিনি। বরঞ্চ বালাসাহেবের মুখে সৌরভের কথা অনেকবার শুনেছি। বলতেন, ছেলেটার কিন্তু দম আছে। ক্যাপ্টেনকে এ রকম দাপুটেই হতে হয়। সৌরভকে বোধহয় বাড়িতে বারদুয়েক একান্তে খেতে ডেকেও ছিলেন। রোবরার ধোনিকে যেমন ভিতু-ভিতু ফিল্ডিং সাজাতে দেখলাম সেটা টিভিতে বালাসাহেবের নজরে এলে নির্ঘাত আমায় ফোন ঘোরাতেন, “অজিত, কী হচ্ছে? একটা সিলি পয়েন্ট থাকবে না?” এত বড় ক্রিকেটপ্রেমিকের স্মৃতিকে উপযুক্ত সম্মান জানানো যাবে যদি আমরা টেস্টটা জিততে পারি। তার জন্য আক্রমণাত্মক ফিল্ড রেখে স্পিনারদের সাহায্য করাটা খুব জরুরি। চাপ তৈরি হবে, পরিস্থিতি+স্পিনার+ব্যাটের কাছে ফিল্ডার সব নিয়ে মিলিত ভাবে। ধোনি যেন মনে রাখে, ইন্ডিয়ান ক্যাপ্টেন আক্রমণাত্মক হয়ে বিপক্ষকে চেপে ধরেছে এটা ক্রিকেটপ্রেমী বালাসাহেবের সবচেয়ে ফেভারিট দৃশ্য ছিল। সিলি পয়েন্টটা ধোনি এত সহজে সরিও না। দেখবে উইকেট পড়ছে আর ওপর থেকে বালাসাহেব হাততালি দিচ্ছেন!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.