শিল্পবন্ধু হতে দিল্লিতে সম্মেলনের প্রস্তুতি মমতার
তিনি শিল্পবিরোধী তাঁর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলে সরব একাধিক মহল। সেই দলে বিরোধীদের সঙ্গে শিল্পমহলও রয়েছে। তাঁর সরকারের জমি নীতি এবং সম্প্রতি হলদিয়া ছেড়ে এবিজি-র চলে যাওয়ার মতো ঘটনার পরে এই অভিযোগের সুর আরও চড়া হয়েছে। এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বিজয়া সম্মেলনে শিল্পপতিদের সঙ্গে আলোচনার পরে সর্বভারতীয় স্তরে নিজের সরকারের শিল্পবন্ধু ভাবমূর্তি তুলে ধরতে নতুন করে উদ্যোগী হলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা ঠিক করেছেন, ডিসেম্বরে দিল্লিতে একটি শিল্প সম্মেলন করবেন। পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট কিছু শিল্পপতি এই ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছেন। সেই দলে রয়েছেন শিল্পপতি সঞ্জীব গোয়েন্কা এবং হর্ষ নেওটিয়া। তাঁরা ওই মঞ্চ থেকে গোটা দেশের শিল্পমহলের কাছে রাজ্যে বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানাবেন। মমতা নিজে উপস্থিত থেকে বোঝাবেন, কেন এবং কী ভাবে পশ্চিমবঙ্গে শিল্পায়ন সম্ভব।
পরপর তিনটি ঘটনা। ১৪ ডিসেম্বর ওয়ার্ল্ড প্রেসিডেন্টস অর্গানাইজেশন (ওপিও) এবং ইয়ং প্রেসিডেন্টস অর্গানাইজেশনের (ওয়াইপিও) আন্তর্জাতিক সম্মেলন হতে চলেছে কলকাতায়। এর এক দিন পরেই, ১৫ ডিসেম্বর দিল্লিতে ফিকি-র বার্ষিক অধিবেশন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহেরও আসার কথা। সম্প্রতি ফিকি-র প্রতিনিধিরা কলকাতায় গিয়ে মমতাকে আমন্ত্রণ জানান। মমতা আসার ব্যাপারে সম্মতি জানিয়েছেন। এই সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি দিল্লি এলে তখনই শিল্পপতিদের সম্মেলনটি করে ফেলার চেষ্টা চলছে। মোটামুটি ভাবে ১৭ তারিখ সম্মেলন করার কথা মাথায় রেখেই এগোচ্ছেন সকলে। তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন এই সম্মেলন সফল করতে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং বিশিষ্ট শিল্পপতিদের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষার কাজ করছেন।
আমরা শীঘ্রই নতুন শিল্পনীতি ঘোষণা করব। প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তি সব সময় কম হয়। কিন্তু আমাদের সদিচ্ছা ও চেষ্টা নিরন্তর।
এখন প্রশ্ন, শিল্প বৈঠকের এই হ্যাট্ট্রিক কি রাজ্যের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে পারবে? দু’টি বিষয় নিয়ে এখনও প্রশ্ন রয়েছে শিল্পমহলের। প্রথমত, মমতার সরকারের জমি নীতি। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বারবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন, বেসরকারি শিল্প তো বটেই, যৌথ উদ্যোগের ক্ষেত্রেও তাঁর সরকার জমি অধিগ্রহণ করবে না। এক লপ্তে বড় জমি না পেলে পশ্চিমবঙ্গে ভারী শিল্প হবে কী করে? দ্বিতীয়ত, ভারতের অন্যান্য রাজ্যে তুলে দেওয়া হলেও পশ্চিমবঙ্গে ‘আরবান ল্যান্ড সিলিং অ্যাক্ট’ এখনও বহাল। এই আইন থাকাকালীন কি শিল্পায়ন সম্ভব? জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে শিল্পায়নকে, বিশেষত ভারী শিল্পকে আমি অগ্রাধিকার দিতে চাই। কিন্তু কৃষকদের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে, তাঁদের ইচ্ছার উপর বুলডোজার চালিয়ে শিল্প করতে চাই না।” তাঁর বক্তব্য, “আরবান ল্যান্ড সিলিং অ্যাক্ট-এর জন্য যাতে কোনও সমস্যা না হয়, আমরা তাই কেস টু কেস পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।”
জমি নিয়ে পুরনো অবস্থানেই অনড় মমতা। তবে পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগমের ল্যান্ড ব্যাঙ্কে থাকা জমি এবং ভূমি সংস্কার আইনের ১৪ওয়াই ধারা সংশোধন যে শিল্পের পথে অনেক বাধা সরিয়ে দেবে, সে কথাও মনে করিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এর ফলে শিল্পপতিরা নতুন নতুন ক্ষেত্রে প্রয়োজনে অতিরিক্ত জমি পেতে পারেন। তবে অনুমতি সাপেক্ষে।” শিল্পমহলের একটি অংশের বক্তব্য, মমতা যা-ই বলুন না কেন, রাজ্যের ল্যান্ড ব্যাঙ্কে বেশির ভাগ জমিই অসমান মাপের। বড় শিল্পের জন্য এক লপ্তে অনেকটা জমি পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তার উপরে রয়েছে দালালরাজ। দালাল দৌরাত্ম্যে আটকে যাওয়ার সব চেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে কাটোয়া তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প। তা ছাড়া, এই রাজ্যে জমি ছোট ছোট টুকরোয় বিভক্ত। এখানে তাই বেসরকারি শিল্পের জন্য সরকারকেই জমি অধিগ্রহণ করে দিতে হবে। অথচ মমতা সে পথ মাড়াবেন না।
এর পরেও অবশ্য সঞ্জীব গোয়েন্কা, হর্ষ নেওয়াটিরা জাতীয় ক্ষেত্রে রাজ্যকে তুলে ধরতে উদ্যোগী হয়েছেন। কেন? সঞ্জীব বলছেন, “এই রাজ্যে আমরা যে নানা ধরনের প্রকল্প নিচ্ছি, সংস্থার সম্প্রসারণ ঘটাচ্ছি, অনুকূল পরিবেশ না থাকলে কি সেটা সম্ভব হত? তাই শুধু অভিযোগ না করে ইতিবাচক মানসিকতা থেকে রাজ্যকে দেখার সময় এসেছে।” হর্ষ বলছেন, “মাত্র দেড় বছর হয়েছে এই সরকারের। যাতে এই সরকার উন্নয়নের কাজে সফল হতে পারে, সে জন্য সব ভেদাভেদ ভুলে সরকারকে সাহায্য করা আমাদেরই কর্তব্য।” ডেরেক ও’ব্রায়েনও বলেছেন, “মমতাই একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী যিনি কৃষি ও শিল্পে ভারসাম্য রক্ষা করে এগোতে চাইছেন। গোটা দেশেরই এটা সামাজিক দাবি।”
ভারতের একাধিক প্রথম সারির শিল্পপতি, মুকেশ অম্বানী, অনিল অম্বানী, শাপুরজি মিস্ত্রি, এমনকী শাপুরজি-পুত্র তথা টাটা গোষ্ঠীর ভবিষ্যৎ কর্ণধার সাইরাসও মমতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। অনিল কলকাতায় অ্যানিমেশন ছবি তৈরির স্টুডিও গড়তে চান। টিভিএস সংস্থার বেণুগোপাল জানিয়েছেন, উলুবেড়িয়ায় মহাভারত মোটরবাইকের কারখানায় উৎপাদনের কাজ পুরোদমে চলছে।
তবে অন্য চিত্রও আছে। হলদিয়া পেট্রোকেম নিয়ে জট এখনও কাটেনি। ইনফোসিস জমি পায়নি। ছাড়পত্র পায়নি নয়াচরের বিদ্যুৎ প্রকল্প। শিল্পপতি প্রসূন মুখোপাধ্যায়কে নতুন বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য জমি দেওয়ার কথা হয়েছিল। তিনি এখনও তা পাননি। শিল্পসচিব হওয়ার পর আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু সব জট খোলেনি। অভিযোগ উঠেছে, মুখ্যমন্ত্রী চলচ্চিত্র প্রদর্শনী বা অন্য বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান নিয়ে যতটা আগ্রহী, শিল্পকে ততটা অগ্রাধিকার দিচ্ছেন না। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এই অভিযোগ অসত্য। চলচ্চিত্র উৎসবের সঙ্গে শিল্পায়নের সংঘাত নেই।” একই সঙ্গে তিনি জানান, “খুব শীঘ্রই আমরা একটি নতুন শিল্পনীতি ঘোষণা করব। এই বিষয়ে সৌগত রায় ও পার্থ চট্টোপাধ্যায় কাজ করছেন। প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তি সব সময় কম হয়। কিন্তু আমাদের সদিচ্ছা ও চেষ্টা নিরন্তর।”
মমতা বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গেও দেখা করছেন। ২৬ তারিখ জার্মানির রাষ্ট্রদূত আসছেন। ২১ তারিখ আসছেন বিলেতের এক মন্ত্রী। আসছেন ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূতও। দিল্লির সম্মেলনেও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের ডাকা হচ্ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.