ফের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, লাভপুরে খুন তৃণমূল কর্মী
তৃণমূল কর্মী খুন, তার জেরে অবরোধ, বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর রবিবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত একের পর এক ঘটনায় তেতে উঠল বীরভূমের লাভপুর। গোটা ঘটনায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রসঙ্গও উঠেছে। যদিও দলীয় দ্বন্দ্বের কথা অস্বীকার করেছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার সন্ধ্যায় স্থানীয় বিপ্রটিকুরি পঞ্চায়েতের ব্রাহ্মণী গ্রামের অদূরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তৃণমূলের বুথ কমিটির সভাপতি চিত্তরঞ্জন মণ্ডলকে (৩৩)। রবিবার বর্ধমান মেডিক্যাল থেকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। নিহতের বাড়ি ব্রাহ্মণী গ্রামে। ঘটনার সময় চিত্তরঞ্জনের সঙ্গে ছিলেন রাজীব ঘোষ নামে ব্রাহ্মণী গ্রামেরই এক বাসিন্দা। তিনি বলেন, “আমরা মজুর ঠিক করতে আপনাহার যাচ্ছিলাম। সেই সময় মাঠে ১৭-১৮ জন দুষ্কৃতী চড়াও হয়। আমি কোনও ভাবে পালিয়ে কাশীয়াড়া গ্রামের কালীতলায় টহলরত পুলিশকে জানাই। কিন্তু তারা নানুর থেকে আরও পুলিশ আসার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ এলে হয়তো চিত্তরঞ্জনকে বাঁচানো যেত।” বীরভূমের পুলিশ সুপার মুরলীধর শর্মা অবশ্য বলেন, “খবর পাওয়া মাত্র পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।”
তৃণমূল কর্মী খুনে অভিযুক্তকে গ্রেফতারের দাবিতে বাড়ি ভাঙচুর করছে সমর্থকেরা। —নিজস্ব চিত্র
এলাকাবাসীর দাবি, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী গোপাল শেখ এই খুনের পিছনে। গোপাল ও তার সঙ্গীদের গ্রেফতারের দাবিতে এ দিন সকাল থেকে ইন্দাস-বড়িপুকুর বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া লাভপুর-বোলপুর সড়ক অবরোধ করেন বাসিন্দারা। পরে উত্তেজিত জনতা গোপালের সঙ্গীসাথীদের ২৩টি বাড়িতে আগুন লাগায়। কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুরও হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গেলে গ্রামবাসীর বিক্ষোভের মুখে পড়ে। পুলিশের দু’টি গাড়ির কাচ ভাঙে উত্তেজিত জনতা। পৌনে ২টে নাগাদ পুলিশের আশ্বাসেই অবরোধ ওঠে।
চিত্তরঞ্জন মণ্ডল।
—নিজস্ব চিত্র
স্থানীয় ও তৃণমূল সূত্রের খবর, অভিযুক্ত গোপাল শেখ দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ও লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলামের ‘অনুগামী’ বলে পরিচিত। অন্য দিকে, নিহত ব্যক্তি দলের বিরোধী গোষ্ঠী লাভপুর ব্লক সভাপতি উৎপল চৌধুরী ও ব্লক যুব সভাপতি চয়ন চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ। উৎপলবাবুর অভিযোগ, “বিধায়কের মদতেই সন্ত্রাস চালাচ্ছে গোপাল। অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও পুলিশ তাকে ধরেনি।” একই সুরে সিপিএমের লাভপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক পল্টু কোঁড়ার দাবি, “বিধায়কের মদতে সন্ত্রাস চালাচ্ছে গোপাল।”
যদিও অনুব্রতবাবু বলেন, “গোপাল আমাদের বহু কর্মীকে খুন করেছে। বিধায়কের বাড়িতেও লুঠপাট চালিয়েছে। তাই তাকে মদত দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে ওই খুন বলে শুনেছি।” বিধায়কেরও দাবি, “শুধু গোপাল কেন, কোনও দুষ্কৃতীকে মদত দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।”
লাভপুরে নিহত তৃণমূল কর্মী চিত্তরঞ্জন মণ্ডলের শোকার্ত পরিবার। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।
পুলিশের খাতায় দাগি দুষ্কৃতী গোপালের বাড়ি নানুরের সাওতা গ্রামে। এক সময় গ্রাম দখলকে ঘিরে সিপিএমের হয়ে শরিক আরএসপি-র সঙ্গে ঝামেলা পাকানোর অভিযোগ ছিল গোপালের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে খুন, সন্ত্রাস চালানো-সহ নানা অভিযোগ রয়েছে নানুর ও লাভপুর থানায়। তার সন্ধানে ১০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে জেলার সর্বত্র পোস্টারও দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু গোপাল অধরাই থেকেছে।
পুলিশের দাবি, বছর দেড়েক ধরে গোপালের আস্তানা ছিল স্থানীয় কাশীয়াড়া গ্রামে। শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে কাশীয়াড়া থেকে গোপালের মোটরবাইক আটক করে পুলিশ। বাসিন্দাদের দাবি, এলাকায় তার উপস্থিতির কথা চিত্তরঞ্জন পুলিশকে জানিয়েছেন, এই সন্দেহে গোপাল তাঁকে খুন করেছে। পুলিশ সুপার বলেন, “কোনও পক্ষই লিখিত অভিযোগ করেনি। তবে গোপালের নামে নানা অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তার খোঁজে পুলিশ তল্লাশি শুরু করেছে।”
খুনের ঘটনায় জড়িত মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতারের দাবিতে রবিবার উত্তেজিত
জনতা পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর ও পথ অবরোধ করে। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।
ব্রাহ্মণী গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, কান্নায় ভেঙে পড়েছে নিহতের পরিবার। চিত্তরঞ্জনের বাবা ধ্বজাধারীবাবু বলেন, “শুনেছি, বিরোধী গোষ্ঠীর হয়ে কাজ করার অপরাধে ছেলের কাছে দেড় লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। এমন অবস্থা হবে জানলে রাজনীতির ধারে কাছে ঘেঁষতে দিতাম না ওকে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.