দক্ষিণ কলকাতা
পার্ক সার্কাস বাজার
সংস্কারের পথে
বাজারের মধ্যেই ডাঁই করা আবর্জনার স্তূপ। নিকাশির অবস্থাও শোচনীয়। আর বৃষ্টি হলেই বাজারের টিনের চালের ফুটো দিয়ে জল পড়ে। এ ছবি পার্ক সার্কাস পুর বাজারের। বাজারের স্টলের যে পরিকাঠামো, তার অবস্থাও ভঙ্গুর। অভিযোগ, বাজার নির্মাণের পর থেকে এখানে কোনও সংস্কারই হয়নি। এমনকী, বাজারের স্টলের ভাড়ার ক্ষেত্রেও বৈষম্য রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।
বর্তমান বাজারটি সংস্কারের কথা ভেবেই কলকাতা পুরসভা সম্প্রতি যৌথ উদ্যোগে পার্ক সার্কাস পুর-বাজার সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিল। আগামী বছরের প্রথমেই এই বাজারটি সংস্কারের কাজ শুরু হবে। পুরসভার মেয়র পারিষদ (বাজার) দেবাশিস কুমার বলেন, “ইতিমধ্যেই লেক মার্কেট, ল্যান্সডাউন এবং কলেজ স্ট্রিট বাজার যৌথ উদ্যোগে সংস্কার করা হয়েছে। এর পরেই পার্ক সার্কাস বাজারের সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নভেম্বরে মেয়র পারিষদের মিটিংয়ে এই বিষয়ে আলোচনার পরই এই প্রকল্পের জন্য দরপত্র দেওয়া হবে। পার্ক সার্কাস বাজারের সংস্কারেরও আশু প্রয়োজন। সংস্কারের অভাবে পরিষেবার ক্ষেত্রেও কিছু অসুবিধা রয়েছে।”
পার্ক সার্কাস বাজার ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আবদুল্লা আনসারি বলেন, “এই বাজারের সংস্কার প্রয়োজন ঠিকই। কিন্তু এই প্রকল্পের ফলে যেন বাজারের ব্যবসায়ীদের স্বার্থ কোনও ভাবে ক্ষুণ্ণ না হয়। আগের বোর্ডের আমলেই এক বার এই বাজার সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পুরসভা। কিন্তু তা সাধারণ ব্যবসায়ীদের স্বার্থবিরোধী ছিল। সেই কারণেই আমরা রাজি হইনি। বর্তমানে এই প্রকল্পের ব্যাপারে পুরসভা কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা এখনও আমাদের জানানো হয়নি। আমাদের দাবি মেনে যদি বাজারের সংস্কার করা হয় তা হলে আপত্তি নেই।”
অনেক দিন আগেই এই বাজার সংস্কারের জন্য পুর-কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হয়েছিলেন। এমনকী, বামফ্রন্ট পরিচালিত গত পুরবোর্ডের আমলে একটি বেসরকারি সংস্থাকে শর্তসাপেক্ষে এই বাজার সংস্কারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পুরসভা এই সংস্থার সঙ্গে যে চুক্তি করেছিল তা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের স্বার্থবিরোধী ছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। এর পরেই পুরসভা এই বাজার সংস্কারের ক্ষেত্রে হাত গুটিয়ে নেয়।
পরে তৃণমূল পরিচালিত নতুন বোর্ড ক্ষমতায় আসার পরই পুরনো চুক্তি বাতিল করে দেয়। বাজার সংস্কারের বিষয়টি সেখানেই আটকে যায়। অবশেষে স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং পুর-কর্তৃপক্ষ এই বাজারটি সংস্কারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন। স্থানীয় কাউন্সিলর সিপিআইয়ের ফরজানা চৌধুরী বলেন, “এই বাজারের সংস্কারের জন্য তৃণমূল পরিচালিত বোর্ডের কাছে আমি ইতিমধ্যেই চিঠি পাঠিয়েছি। তবে, ব্যবসায়ীদের স্বার্থ যাতে ক্ষুণ্ণ না হয় সে দিকে নজর রেখেই এই সংস্কার করতে হবে।”
এই বাজার নির্মাণের সময় ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের প্রশ্ন ওঠে। পুরসভার বাজার দফতরের এক আধিকারিক জানান, পুর-কর্তৃপক্ষ একটি সমীক্ষা করে দেখেছেন, পার্ক সার্কাস বাজারের ব্যবসায়ীদের অস্থায়ী পুনর্বাসনের জন্য আলাদা কোনও জায়গা নেই। সে ক্ষেত্রে বাজারের একাংশ এবং রাস্তার ওপরেই তাঁদের বসতে হবে। পুর-কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বাজারের নীচের একাংশ বাদ রেখে বাজারের বিভিন্ন অংশের ধাপে ধাপে সংস্কার করা হবে। সংস্কারের সময় সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যবসায়ীদের রাস্তায় এবং বাজারের ফাঁকা অংশে স্থানান্তরিত করা হবে। সংস্কারের পর নির্দিষ্ট জায়গায় আবার ব্যবসা করতে পারবেন তাঁরা। ১৯৪০ সালে কলকাতা পুরসভা এই বাজার নির্মাণ করে। বর্তমানে এই বাজারের ব্যবসায়ীদের মোট সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচশো।
স্টলের ক্ষেত্রে ভাড়া নেওয়ার ব্যাপারে পুরসভার বিরুদ্ধে যে বৈষম্য সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে সেই প্রসঙ্গে দেবাশিসবাবু বলেন, “এই অভিযোগ ঠিক নয়। বর্গফুট হিসেবেই দোকানদারের কাছ থেকে পুরসভা ভাড়া নেয়। পুরসভা নিজেদের ইচ্ছেমতো ভাড়া নিতে পারে না। তবে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ থাকলে তা খতিয়ে দেখব। এ ছাড়াও এই সংস্কারের ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অবশ্যই আলোচনায় বসবেন পুর-কর্তৃপক্ষ।”

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.