পূর্ব কলকাতা
আশঙ্কায় বিধাননগর
বাড়ছে মশা
ত্সব মুখর বিধাননগর। আর তারই মধ্যে নিঃশব্দে ফিরে এল মশকবাহিনী। সৌজন্যে দু’প্রান্তের দু’টি খাল এবং অসংখ্য নির্মীয়মাণ বাড়ি।
পুর প্রশাসনের দাবি, তেল ছড়ানো-সহ মশা দমনের প্রক্রিয়া চলছে। খাল নিয়েও সরকারি স্তরে আলোচনা হবে। বাসিন্দারা অবশ্য নিশ্চিন্তে নেই। তাঁদের অভিযোগ, বছরের অধিকাংশ সময় খালে ঠিকমতো জলপ্রবাহ হয় না। ফলে মশা জন্মাতে শুরু করে। শীত পড়তে না পড়তেই বাড়ে মশার প্রকোপ। অথচ প্রশাসনের তরফে তেমন তৎপরতা চোখে পড়ে না।
প্রতি বছরই শীতের প্রথম দিকে বিধাননগরে মশার প্রকোপ বাড়ে। এই সমস্যা এ বার বাসিন্দাদের বেশি ভাবিয়ে তুলেছে। কারণ, এ বছর বর্ষায় মশাবাহিত ডেঙ্গিতে জেরবার হয়েছে এই উপনগরী। অভিযোগ, এ বছর বিধাননগরে মশাবাহিত রোগ বেশি ছড়িয়েছে। কয়েক হাজার বাসিন্দা ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। স্বাস্থ্য দফতর তিন শতাধিক ব্যক্তিকে ডেঙ্গি রোগী হিসাবে চিহ্নিত করেছিল। পরিস্থিতি সামলাতে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর ও বিধাননগর পুর প্রশাসনকে বিশেষ অভিযানে নামতে হয়েছিল। দুই শতাধিক শিক্ষানবিশ নার্স নামিয়ে তথ্য সংগ্রহ, রোগের প্রতিরোধে প্রচার চালানো হয়।
বিভিন্ন ব্লক থেকেই মশার উপদ্রব বাড়ার অভিযোগ আসছে। এই ব্লকের বাসিন্দা ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ফের মশা বেড়েছে। জানলা-দরজা খোলাই দায়।’’ তিন নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা শান্তনু দাস বলেন, ‘‘মশা নিয়ন্ত্রণ জরুরি পরিষেবা। বার বার বাসিন্দাদের সরব হতে হবে কেন?’’ ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়: ‘‘বাসিন্দারা মশার উপদ্রব নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন। চেয়ারপার্সনের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।’’
অভিযোগ উঠেছে, বিধাননগরে মশার অন্যতম আঁতুর দু’পাশের দু’টি খাল। এক দিকে কেষ্টপুর খাল। অন্য দিকে ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেল। পুজোর আগে খালে গঙ্গার জল ঢুকিয়ে মশা ধ্বংস করা হয়। প্রশাসনের দাবি, এখনও গঙ্গার জল ঢোকানো হয়। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, খালগুলির কোথাও কচুরিপানা, কোথাও আবর্জনা জমে জল প্রবাহ কার্যত রুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। এমনকী, পুজোমণ্ডপের আবর্জনাও খালে ফেলা হয়েছে। চার দিকে মশা ভনভন করছে। অভিযোগ, খালের জন্যই এএ ব্লক থেকে স্লুইস গেট পর্যন্ত কেষ্টপুর খালপাড়ের ব্লকগুলিতে মশার দাপট বেড়েছে। অন্য দিকে, মেট্রো প্রকল্পের জেরে ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেল একাধিক জায়গায় রুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। বাইপাস ও রাজারহাট এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগস্থল খালের ছবিটি আরও করুণ।
বাসিন্দাদের সংগঠন বিধাননগর (সল্টলেক) ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, ‘‘শীতের শুরুতে প্রকৃতির নিয়মেই মশা বাড়ে। ঠিকমতো পরিকল্পনা করলে তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। পরিকল্পনা না থাকলে তা সম্ভব নয়। প্রশাসন এই সময়েই মশা নিয়ন্ত্রণে জোর দিলে সমস্যা জটিল হবে না।’’ বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, শুধু খালই নয়, সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিগত বাড়ি নির্মাণ বেড়েছে বিধাননগরে। সেখানেও জমা জলে মশা জন্মাচ্ছে। তাঁদের দাবি, প্রশাসনের এ বিষয়েও নজর দেওয়া দরকার।
বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসু বলেন, ‘‘খালগুলিতে জলের প্রবাহ যাতে বজায় থাকে সে বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘খালে জলপ্রবাহ বাড়াতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলব। এর আগে খালপাড়ের ব্লকগুলিতে অভিযান চালানো হবে।
তার পরে প্রতিটি ব্লকে মশা নিয়ন্ত্রণের কাজ করা হবে।’’

ছবি: শৌভিক দে




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.