অন্ধকারে ক্রেতা
বাড়ন্ত সার্জেন্ট
জনে গরমিল। দর্জি পোশাক দিচ্ছেন না। বিক্রেতার সঙ্গে বচসা শুরু হয়েছে। কোথায় সাহায্য পাবেন? জানেন না অধিকাংশ ক্রেতাই। অথচ, অন্য বাজারে না হলেও, কলকাতা পুরসভা নিয়ন্ত্রিত ১৮টি বাজারে এমন বিপদে পড়লে তাঁরা যেতে পারেন বাজারের সার্জেন্টের কাছে।
কলকাতা পুরসভা নিয়ন্ত্রিত বাজারের সংখ্যা ৪৩। এর মধ্যে ১৮টি বাজারে সার্জেন্ট রয়েছেন। যাঁদের দায়িত্ব ক্রেতাদের সাহায্য করা, বিক্রেতাকে সতর্ক করা। প্রয়োজনে বিক্রেতার জরিমানা করা, এমনকী, লাইসেন্স বাতিল করার জন্য পুরকর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশও করতে পারেন তাঁরা।
কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, সার্জেন্টরা আদপে কী করেন, কোথায় বসেন, কী ভাবেই বা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়, সে ব্যাপারে অধিকাংশ ক্রেতাই অন্ধকারে। এ বিষয়ে ক্রেতাদের সচেতনতা বাড়ানোর ক্ষেত্রেও উদাসীন পুরকতৃর্পক্ষ।
পুরসভা সূত্রের খবর, ১৮টি সার্জেন্ট-পদ বরাদ্দ থাকলেও তার মধ্যে ১০টিই খালি পড়ে আছে। পুরসভার মেয়র পারিষদ (বাজার) দেবাশিস কুমার বলেন, “বহু দিন ১৮টি বাজারে ওই পদগুলি রয়েছে। বাকি বাজারগুলিতে এমন ব্যবস্থা নেই।” পুরসভা বিষয়টিকে ঢেলে সাজবে কি? দেবাশিসবাবু বলেন, “চেষ্টা করে দেখব।”
নিউ মার্কেটের এক সার্জেন্ট জানান, তিনি ছ’বছরের বেশি কাজ করছেন। এর মধ্যে এক জন ক্রেতাও ওজনের গরমিল নিয়ে তাঁদের কাছে আসেননি। তবে সার্জেন্টদের মতে, ক্রেতা সুরক্ষা দফতরে যাওয়ার কথা শুনলেই নিউ মার্কেটের অধিকাংশ বিক্রেতা নিজেরাই বিষয়টি মিটমাট করে নেন। এক সার্জেন্ট জানালেন, এক ক্রেতাকে দর্জি এক বছরেরও বেশি পোশাক দিচ্ছিলেন না। অভিযোগ পেয়ে সার্জেন্ট তাঁকে ওই দর্জির দোকানে নিয়ে গেলে সমস্যা মিটে যায়। ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে বচসা বা পকেটমারি হলেও সার্জেন্টের পৌঁছনোর কথা। এ ক্ষেত্রেও ঠিকমতো অভিযোগ আসে না। তবে পকেটমার ধরা পড়লে তাকে পুলিশের কাছে পাঠানোর দায়িত্ব তাঁরা এখনও পালন করেন।
পুরসভা সূত্রের খবর, সার্জেন্টদের বাজারে ঘুরে ক্রেতাদের সাহায্য করার কথা। এই ১৮টি বাজারে তিনটি শিফ্টেই কোনও না কোনও সার্জেন্টের থাকার কথা। অভিযোগ উঠেছে, নিউ মার্কেট বাদে অন্য বাজারগুলিতে কোথাও সার্জেন্টদের দেখা মেলে সকাল ৯টার পরে। কোথাও বা বেলা ১১টার পরে। ফলে ক্রেতারা চাইলেও সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
ব্যতিক্রম গড়িয়াহাট পুরবাজার। এখানে ওজনের গরমিল নিয়ে প্রায় প্রতি দিন অভিযোগ আসে। সার্জেন্টও সক্রিয়। যদিও সম্প্রতি বাজারের সার্জেন্ট বদলি হয়েছেন। এখন ওজন দেখার কাজ করেন সুপারের অফিসের কর্মীরা। অভিযোগ, পার্ক সার্কাস বাজারে সার্জেন্টের দেখা মেলে বেলা ১১টার পরে। তত ক্ষণে বাজারের মূল ব্যবসা প্রায় শেষ হয়ে যায়। অভিযোগ, ওখানে সুপারের অফিসটি খুঁজে পাওয়াও কঠিন। অভিযোগ আসে অনেক কম।
প্রায় সব বাজারের সার্জেন্ট ও পুরকর্মীদের অভিযোগ, রাজনৈতিক চাপে দালাল-রাজ বন্ধ করা বা ফড়েদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন। রয়েছে বেআইনি দখলদারের জন্য বাজারের মধ্যে যাতায়াতের সমস্যা।

সার্জেন্টদের দায়দায়িত্ব
বাজারের আইনশৃঙ্খলা দেখা।
ক্রেতা-বিক্রেতার যে কোনও ধরনের বিরোধ নিষ্পত্তি।
কেনা জিনিস বদল করতে চাইলে ক্রেতাকে সাহায্য করা।
বিক্রেতা দুর্ব্যবহার করলে জরিমানা, প্রয়োজনে লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ।
বাজারের ভেতরে দালাল-রাজ বন্ধ করা।
বাজারের ভিতরের রাস্তা, পরিসর যাতে দখল না হয়ে যায় তা দেখা।

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.