লোবায় জট
কে কী চায়, তা নিয়ে ধন্দে জমিরক্ষা কমিটিই
দীপাবলির দিন কৃষিজমি রক্ষা কমিটির ধর্না মঞ্চে ‘সমস্ত দাবি না মেটা পর্যন্ত একত্রে এবং শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাব’ বলে শপথ নিয়েছেন লোবা অঞ্চলের মানুষ। কিন্তু, সেই দাবিগুলি ঠিক কী, বিশেষ করে জমির দাম কত হবে, তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে কৃষিজমি রক্ষা কমিটি এবং সাধারণ গ্রামবাসীদের মধ্যে।
জেলা ও রাজ্য প্রশাসনের কাছে কৃষিজমি রক্ষা কমিটির পাঠানো নানা চিঠিতে দাবিদাওয়ার উল্লেখ আছে ঠিকই। তবে, যে ১০টি মৌজায় ডিভিসি-এমটার খনি প্রকল্প গড়ে ওঠার কথা, সেই সব মৌজার অধিকাংশ বাসিন্দা কী চান? কথা বলে জানা গেল, তাঁরা শিল্পের জন্য জমি দিতে অনিচ্ছুক, এমন নয়। সেটা ‘উপযুক্ত’ ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের শর্তে। সমস্যা এই যে, ‘উপযুক্ত’টা ঠিক কী, তা নিয়ে এলাকার মানুষই যথেষ্ট ধোঁয়াশায়। সম্পন্ন থেকে প্রান্তিক চাষি, বর্গাদার, পাট্টাদার থেকে খেতমজুর, ভূমিহীন থেকে ব্যবসায়ী বা অন্য পেশার মানুষ-- বিভিন্ন জনের চাহিদাও বিভিন্ন। বাবুপুর গ্রামের শান্তিরাম মণ্ডল বা পলাশডাঙার সন্তোষ গঁরাই বলছেন, “একর প্রতি ৩০ লক্ষ টাকা দাম পেলে সমস্যা থাকবে না।”
অথচ কমিটির অন্যতম নেতা জয়দীপ মজুমদারকে যখন প্রশ্ন করা হল, ডিভিসি-এমটার সঙ্গে রাজ্য সরকার বৈঠকের ব্যবস্থা করে দিলে আপনারা একর প্রতি কত দর চাইবেন, তাঁর জবাব, “৭২ লক্ষ টাকা প্রতি একর চাওয়া হবে বলে ঠিক হয়েছিল।” একই প্রশ্নের উত্তরে কমিটির আর এক শীর্ষ নেতা ফেলারাম মণ্ডল বলেন, “একর প্রতি অন্তত এক কোটি টাকা চাই!” কমিটির অন্যতম সদস্য, বাবুপুর গ্রামের বিপত্তারণ ঘোষ জানালেন, এখানকার জমির নীচে কয়লার ভাণ্ডার একবার যখন মিলেছে, তখন সেই সম্পদের সম্ভাব্য মূল্য হিসেবে রেখেই জমির দর নির্ধারণ করতে হবে।
এই বিষয়টি অবশ্য আন্দোলনের প্রাথমিক স্তরে প্রশাসনের মধ্যস্থতায় হওয়া ডিভিসি-এমটা এবং গ্রামবাসীর বৈঠকে কখনওই ওঠেনি। ২০১০ সালের ১৫ নভেম্বর বীরভূমের জেলাশাসকের দফতরের সভাগৃহে তৎকালীন জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনের পৌরোহিত্যে দাবিদাওয়া সংক্রান্ত প্রথম বৈঠক হয়। সেই সময় দাবি, জমির দর (তখন ছিল দো-ফসলি ১০ লক্ষ টাকা) একর পিছু অন্তত ১০ শতাংশ বাড়ানোর দাবি ওঠে। খেতমজুরদের এককালীন ১ লক্ষ টাকা দেওয়ারও কথা হয়। ওই বৈঠকে ছিলেন লোবা পঞ্চায়েতের তৃণমূল সমর্থিত সিপিআই প্রধান শেখ সফিক, পাঁচড়া পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান দামোদর বাগদি, সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সাধন ঘোষ, দুবরাজপুর পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ, প্রয়াত শিশির রানা। কৃষিজমি রক্ষা কমিটির প্রতিনিধি হিসাবে ছিলেন কমিটির তৎকালীন আহ্বায়ক তথা তৃণমূলের লোবা অঞ্চল সভাপতি উজ্জ্বল ঘোষ। ফেলারামবাবু কমিটির সূচনা থেকে সঙ্গে থাকলেও বৈঠকে ছিলেন না।
উজ্জ্বলবাবু অবশ্য পরে আর কমিটির সঙ্গে থাকেননি। আন্দোলনের মধ্যে থাকেননি সিপিএমের সাধনবাবুরাও। আন্দোলনের রাশ যায় জয়দীপবাবু, ফেলারামবাবুদের হাতে। প্রশ্ন থাকছে তার পরেও। এই মঞ্চটি কি এতগুলি মৌজার প্রায় ২০ হাজার মানুষের দাবিদাওয়া ও চাহিদার ঠিক মতো প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে?
লোবার ধর্নামঞ্চে পুলিশি অভিযান ঘিরে তোলপাড় শুরু হওয়ার পরে গত ৯ নভেম্বর বিধানসভায় শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন কমিটির ৯ জন সদস্য। তাঁদের মধ্যে কিন্তু কোনও আদিবাসী ছিলেন না। যদিও সে দিন প্রতিরোধে তির-ধনুক নিয়ে ছিলেন কিছু আদিবাসীও।
বিভ্রান্তি আছে আরও। এই কমিটির আন্দোলনকে সমর্থন করা বড়ারি গ্রামের খেতমজুর সত্যম বাউড়ি বা রঞ্জিত বাউড়িরা যখন বলছেন ক্ষতিপূরণ বাবদ ১০ লক্ষ টাকা ও বাড়ি চাই, কমিটির নেতৃত্ব তখন জানাচ্ছেন, খেতমজুরদের জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে তিন থেকে চার হাজার দিনের মজুরি দাবি করা হবে। আবার, পানের দোকান চালানো জোপলাই গ্রামের বিনয় আঁকুড়ে বা পুকুরে (ভাগ চাষি) মাছ চাষের উপর নির্ভরশীল কালীচরণ ধীবরদের কাছে এটাই স্পষ্ট নয়, ঠিক কত ক্ষতিপূরণ পেলে তাঁদের ভাল হবে। তাঁদের মতো ভূমিহীন, অথচ জমির উপরেই নির্ভরশীল মানুষজন বলছেন কমিটিই সব ঠিক করবে। যদিও এঁদের ন্যায্য প্রাপ্য কী, কমিটির নেতারা তা বলতে পারেননি।
এ সবের মধ্যেই জয়দীপবাবুর দাবি, শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় তাঁকে ফোনে জানিয়েছেন, তিনি শীঘ্রই লোবায় এসে গ্রামবাসীদের দাবিদাওয়ার কথা শুনবেন। পার্থবাবুর কাছে কী কী দাবিদাওয়া রাখা হবে, তার স্পষ্ট রূপরেখা অবশ্য এখনও তৈরি নয়। ঐকমত্যের ভিত্তিতে এখনও কেন ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যাপারে স্পষ্ট রূপরেখা তৈরি হল না?
লোবার আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত থাকা পিডিএসের রাজ্য সম্পাদক সমীর পুততুণ্ড বলেন, “আগে তো আলোচনার ব্যবস্থা করুক সরকার!” তাঁর আরও বক্তব্য, “সরকার ও এমটা কর্তৃপক্ষ নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে আমাদের জানাক। সেটাই তো এখনও জানায়নি। তার পর ১৮ তারিখ পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.