এটা কি ভবিষ্যতের ইঙ্গিত, উঠছে প্রশ্ন
সুব্রতর প্রশংসায় জয়রাম পঞ্চমুখ, সাধুবাদ মমতাকেও
যে জয়রাম রমেশের সঙ্গে কয়েক দিন আগেও কেন্দ্রের বঞ্চনার অভিযোগ নিয়ে টানাপোড়েন চরমে উঠেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাপানউতোর, তাঁর মুখে হঠাৎই রাজ্যের কাজের প্রশংসা! একশো দিনের কাজে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির জন্য রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে পাশে বসিয়ে আলাদা করে পিঠ চাপড়ে দেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী। উল্টো দিকে সুব্রতর মুখেও শোনা গেল কেন্দ্রের প্রশংসা।
এই ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই একাধিক প্রশ্ন উঠেছে দিল্লির রাজনীতিতে। অনেকেই জানতে চাইছেন, জয়রাম কি এই ভাবে যাবতীয় প্রশংসা সুব্রতর জন্য ঢেলে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খোঁচা দিলেন? আবার কারও কারও প্রশ্ন, এই পারস্পরিক পিঠ চাপড়ানোর মধ্যে কি লুকিয়ে রয়েছে ভবিষ্যৎ রাজনীতির বৃহত্তর ছবিটা? এই অংশটি আবার মনে করে, কংগ্রেস ও তৃণমূল চিরস্থায়ী বিচ্ছেদ কিন্তু ঘটে যায়নি।
কংগ্রেসের সঙ্গ ছাড়ার পরে তৃণমূলের কাছে তাকত যাচাইয়ের প্রথম পরীক্ষা পঞ্চায়েত ভোট। রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, তার আগে অহোরাত্র কেন্দ্রকে আক্রমণ চালিয়ে গেলেও মমতা কিন্তু ভাল ভাবেই বুঝতে পারছেন, কেন্দ্রের সাহায্য ছাড়া সরকার চালানো মুশকিল। তাই প্রকাশ্যে সংঘাতের বাতাবরণ পুরোদমে বজায় রাখলেও তলে তলে কখনও রাজ্যের মুখ্যসচিবের মাধ্যমে কখনও বা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মতো রাজনৈতিক নেতৃত্বের মাধ্যমে যোগাযোগটা রক্ষা করে চলেছেন। ঠিক যে ভাবে যোগাযোগ রাখতেন প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু।
ভবিষ্যতের কথা ভেবে দরজা খোলা রাখছে কংগ্রেসও। তাই এক দিকে যেমন চলেছে রাজনৈতিক আক্রমণ, যার বেশির ভাগটাই এখন চালাচ্ছেন রাজ্য থেকে সদ্য মন্ত্রী হওয়া অধীর চৌধুরী এবং দীপা দাশমুন্সি, অন্য দিকে তেমনই পশ্চিমবঙ্গে সরকার চালাতে সাহায্য করে যাচ্ছে কংগ্রেস। এডিবি থেকে ঋণ নিয়ে রাজ্য যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, সেই ব্যবস্থা যেমন করা হচ্ছে, তেমনই রাজ্যের গ্রামোন্নয়নের জন্য প্রচুর অর্থ বরাদ্দ করছে কেন্দ্র।
দিল্লির রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন, মমতা ইউপিএ-তে থাকলেও পঞ্চায়েত ভোটে আলাদা ভাবেই লড়াই করত কংগ্রেস এবং তৃণমূল। সেই ইঙ্গিত অনেক আগে থেকেই পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু কংগ্রেস নেতৃত্ব এখন মনে করছেন, পঞ্চায়েতের থেকেও তৃণমূলের কাছে বড় পরীক্ষা হবে লোকসভা ভোট। আর সেই নির্বাচনে একা লড়ে ভাল ফল করতে পারবে না তারা। সেটা তৃণমূলের কাছেও ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। আবার রাজ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটের কথা ভেবে মমতার পক্ষে এনডিএ-র সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলাও সম্ভব নয়। ফলে বিকল্প বলতে সেই কংগ্রেসই থাকছে হাতে। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস এ বার চাইছে, দর কষাকষি যদি হয়, তা হবে তাদের শর্তে। মমতার শর্তে নয়।
তাই ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দরজা খুলে রাখতে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা করলেও পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক জমি ছাড়তে নারাজ কংগ্রেস। কে ডি সিংহের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত শুরু করা কিংবা অধীর-দীপার মতো আগ্রাসী নেতানেত্রীকে কেন্দ্রে মন্ত্রী করা থেকেই তাদের সেই মনোভাবটা পরিষ্কার।
কংগ্রেস-তৃণমূল দুই শিবিরের রাজনীতির প্রতিফলন আজ ঘটেছে জয়রাম-সুব্রতর বক্তব্যেও। পশ্চিমবঙ্গের গ্রামোন্নয়ন প্রকল্পের রূপায়ণ নিয়ে পর্যালোচনার জন্য বৈঠকের পর আজ সুব্রতবাবু বলেন, “রাজ্যে গ্রামোন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি হচ্ছে। এ জন্য কেন্দ্র খুশি। আবার কেন্দ্রও অভূতপূর্ব সাহায্য করছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার আওতায় রাজ্যে প্রায় ১৩ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন সড়ক নির্মাণের জন্য এ বছর যে অর্থ বরাদ্দ করতে চলেছে তারা, তা অভূর্তপূর্ব এবং রেকর্ড।” সুব্রতবাবুর কাছ থেকেই জানা গেল, গত দশ বছরে মোট যে পরিমাণ সড়ক নির্মাণের জন্য অর্থ পেয়েছে রাজ্য, এ বার মাত্র এক বছরে তার থেকে বেশি রাস্তা তৈরির জন্য তারা টাকা পাবে। “একই ভাবে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে গত বছরের ১৮০০ কোটি টাকার তুলনায় এ বছর ৪১০০ কোটি বরাদ্দ পাবে পশ্চিমবঙ্গ।” স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, এর পরেও কি কেন্দ্রকে ‘কোমায় আচ্ছন্ন’ বলবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার? বস্তুত, মমতার এই মন্তব্য ঘিরে এক দফা বিতর্ক এর আগেই হয়ে গিয়েছে। এই জয়রামই আবার কেন্দ্রের বরাদ্দ অনুমোদনের কথা জানিয়ে লেখা প্রশাসনিক চিঠিতে এই মন্তব্যের জবাব দেন। সেই চিঠি ফেসবুকে তুলে দিয়ে মমতা আবার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভব্যতার অভিযোগ আনেন। তা হলে? কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে সুব্রতবাবু বলেন, “ওটা রাজনৈতিক বিষয়। প্রশাসনিক স্তরে সহযোগিতা আছে।”
আর জয়রাম? কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “আগে থেকে গ্রামোন্নয়ন প্রকল্প রূপায়ণ অনেক ভাল ভাবে রূপায়ণ হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে। একশো দিন কাজের প্রকল্প রূপায়ণে পশ্চিমবঙ্গ ছিল ২১তম স্থানে। আর এখন তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে রাজ্য।” সে জন্য তিনি গোটা কৃতিত্বটাই দিলেন ব্যক্তি সুব্রতকে। বারবার বললেন, “সুব্রতবাবুর জন্যই গত আট মাসে পশ্চিমবঙ্গে গ্রামোন্নয়ন প্রকল্পের রূপায়ণে এত অগ্রগতি হয়েছে।” মমতার কথা না বলে বারবার তাঁর প্রশংসা করায় কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে যান সুব্রতবাবু। বলেন, “আমার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নেতৃত্বেই আমি কাজ করছি।”
এখানেই প্রশ্ন ওঠে, খোঁচাটা কি ইচ্ছে করেই দিলেন জয়রাম? জবাবে তিনি বলেন, “আপাতত তৃণমূল কেন্দ্রে শরিক নয় ঠিকই। কিন্তু মমতাকে ব্যক্তিগত ভাবে আমি খুব পছন্দ করি।” এর পরেই জঙ্গলমহলের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “বিশেষ করে মাওবাদী সমস্যার মোকাবিলায় মমতা যে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করেছেন, তা প্রশংসনীয়।” জঙ্গলমহলে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীরও প্রশংসা করেন তিনি। বলেন, “শুভেন্দু যে ভাবে দিনের পর দিন ওখানে পড়ে থেকে রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে পরিশ্রম করেছেন, তা প্রশংসার যোগ্য।”
ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেওয়ার পাশাপাশি এটাও আর এক রকম খোঁচা কি না, তা নিয়ে আপাতত ধন্দে রয়েছেন রাজনীতির কারবারিরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.