দীপাবলির ছুটিতে দিল্লি থেকে আমার ছোট বোন রমা আর ভগ্নীপতি শিবশঙ্কর বেড়াতে এসেছে। বুধবার, আমাদের বাড়িতে ওরা ছিল। বৃহস্পতিবার ভোজেরহাটে মেজবোনের বাড়ি যাওয়ার কথা। সকালে উঠে তাড়াতাড়ি রান্না করেছি যাতে ওরা খেয়ে যেতে পারে। সওয়া ন’টা নাগাদ আমি, রমা, শিবশঙ্কর আর আমার জা বাড়ি থেকে
|
হাসপাতালে ঝর্নাদেবী।
—নিজস্ব চিত্র |
বেরিয়ে মিনিট পাঁচেক হেঁটে বদ্দির বেড়ের ট্রেকার স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এখানে বাস বিশেষ মেলে না। ট্রেকারই ভরসা। চম্পাহাটি-ভোজেরহাট লাইনে প্রচুর ট্রেকার। রমাদের ট্রেকারে তুলে আমার বাড়ি চলে আসার কথা। ট্রেকারের অপেক্ষা করতে করতে গল্প করছিলাম আমরা। তাই মোটরসাইকেলটা কখন সামনে দিয়ে গিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছে, খেয়ালই করিনি।
হুঁশ হল, যখন ছেলে দু’টো মোটরসাইকেল থেকে নেমে অশ্রাব্য গালিগালাজ করতে করতে আমাদের দিকে এগিয়ে এল। মাঝারি উচ্চতা, বয়স ২৬-২৭ হবে। দু’জনেই টি-শার্ট আর প্যান্ট পরে ছিল। গালিগালাজ শুনে ভগ্নীপতি এগিয়ে গিয়ে রুখে দাঁড়াতেই একটা ছেলে ওঁর গলার সোনার চেনটা হ্যাঁচকা টানে ছিনিয়ে নিল। তখনই খেয়াল করলাম, অন্য ছেলেটার হাতে একটা পাইপগানের মতো অস্ত্র রয়েছে। ভয়ে শিউরে উঠেছিলাম। আমার গায়ে তেমন গয়না না থাকলেও ছোট বোন সোনার ঝুমকো, বালা, হার সবই পরে ছিল। আমার মাথা কাজ করছিল না
।পাইপগান হাতে ছেলেটা ততক্ষণে এগিয়ে এসে বোনের গলার হারটাও টেনে ছিঁড়ে নিয়েছে। বোন চিৎকার করে কাঁদছে, কিন্তু আশপাশের কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি।
হঠাৎ ভগ্নীপতি প্রথম ছেলেটার কোমর জড়িয়ে ধরে ‘ডাকাত-ডাকাত’ বলে চিৎকার শুরু করল। আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “দিদি ওদের ধরো। ওটা খেলনা বন্দুক। শুধু ভয় দেখানোর জন্য। ওটা চলবে না।” শুনে ছেলে দু’টো হকচকিয়ে গেল। আমি পাইপগান হাতে ছেলেটার কলার চেপে ধরলাম। ছেলেটা এক ঝটকায় আমার হাত সরিয়ে গালাগাল দিয়ে ভগ্নীপতির দিকে তাকিয়ে বলল, “নকল বন্দুক? নকল? দেখবি আসল না নকল?” বলেই ওঁর দিকে গুলি চালালো। পরপর তিন বার।
আমার মুহূর্তে মনে হল, ভগ্নীপতি মরে যাবে। বাঁ-হাত দিয়ে ভগ্নীপতিকে এক ধাক্কায় সরিয়ে দিতেই ডান পায়ে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হল, দেখলাম গলগল করে রক্ত পড়ছে, শরীর ব্যথায় অবশ হয়ে যেতে লাগল। এর পরে আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফিরল বারুইপুর হাসপাতালে। সকলের কথা শুনে বুঝলাম, পায়ে গুলি ঢুকেছে। ওঁরা তুলো চেপে অ্যাম্বুল্যান্সে করে ন্যাশনালে নিয়ে এল। এক্স-রে হল। ডাক্তারেরা জানালেন, হাড়ে গুলি গেঁথে আছে। এর পরে আমাকে এই বেডে ট্র্যাকশন দিয়ে শুইয়ে দিলেন। এখনও পায়ে খুব যন্ত্রণা হচ্ছে। শরীরের ভিতরটা কাঁপছে। তবে একটাই শান্তি, ছেলেগুলো সোনাদানা নিয়ে গেলেও বোন-ভগ্নীপতির কিছু হয়নি। এত দিন টিভিতে দেখতাম, আজ হাড়ে হাড়ে বুঝলাম রাস্তাঘাটে আমাদের সত্যিই আর নিরাপত্তা নেই। |