রেলের প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পাক্কা দু-সপ্তাহ পরে শনিবার রাতে নিজের শহর বহরমপুরে ফিরছেন অধীর চৌধুরী। আচমকা দিল্লি থেকে তলব না এলে টানা পাঁচ দিন থাকারও সময় রয়েছে। তবে এই ক’দিনে নতুন মন্ত্রীকে যে বেশ কয়েকটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হবে এবং জেলা কংগ্রেস তথা নিজের নির্বাচনী এলাকার মানুষের সেই ‘আব্দার’ তাঁকে রাখতেও হবে, মেনে নিয়েছেন অধীর।
জেলা সফরের রেল প্রতিমন্ত্রীকে সংবধর্না দিতে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে অন্তত দশটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক দাস বলেন, “আগামী ১১ নভেম্বর পলাশি স্টেশন চত্বরে ডাবল লাইনের শিলান্যাস অনুষ্ঠান শেষে তিনি বহরমপুরে আসবেন। এর পরে ১২ নভেম্বর কান্দিতে ও বহরমপুর এফইউসি ময়দানে অনুষ্ঠান। ১৩-১৬ নভেম্বর বেলডাঙা, নওদা, ডোমকল, জিয়াগঞ্জ, ধুলিয়ান, জঙ্গিপুর, বড়ঞা ও সালারে একের পর এক অনুষ্ঠান রয়েছে তাঁর।”
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ১১ নভেম্বর শিলান্যাস অনুষ্ঠানের দিন অধীর চৌধুরী শিয়ালদহ থেকে বিশেষ ট্রেনে পলাশি আসবেন। অশোক দাস বলেন, “পলাশি থেকে জিয়াগঞ্জ স্টেশন পর্যন্ত ডাবল লাইনের অনুমোদন না দিয়ে জেলার মানুষকে ব্রাত্য করে রেখেছিল তৃণমূল। ওই দিনের শিল্যন্যাসের পরে সেই বঞ্চনা মুছবে।”
ডাবল লাইনের ঘোষণায় খুশি সিপিএম। রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ সিপিএমের মইনুল হাসান বলেন, “ডাবল লাইন হলে জেলার মানুষ উপকৃত হবেন। পর্যটন শিল্পেরও উন্নয়ন ঘটবে।”
তৃণমূলের গলায় অবশ্য অন্য সুর। মৎস্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী তৃণমূলের সুব্রত সাহা বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকার সময়েই কৃষ্ণনগর থেকে লালগোলা পর্যন্ত ডাবল লাইনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু কৃষ্ণনগর-পলাশির মাঝে এবং জিয়াগঞ্জ-লালগোলার মাঝে বেশ কয়েকটি সেতু রয়েছে। সে জন্য বেশি পরিমাণে অর্থ প্রয়োজন বলে আগে কৃষ্ণনগর-পলাশি এবং জিয়াগঞ্জ-লালগোলা রুটে ডাবল লাইনের ঘোষণা হয়। ওই দুটি মূল কাজ হয়ে গেলে পলাশি থেকে জিয়াগঞ্জ ডাবল লাইন এমনীতেই হয়ে যেত।”
এ দিন রেল প্রতিমন্ত্রী বলেন, “জমির বদলে চাকরি দেওয়ার ঘোষণা করে পূর্বতন রেলমন্ত্রীরা বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। আসলে সস্তা রাজনীতি করতে গিয়ে রেলের বিভিন্ন প্রকল্প ঘোষণা করেছেন। সেই প্রকল্প টালবাহানা করে দীর্ঘ দিন ঝুলিয়ে রাখার উদ্দেশ্যেই জমির বদলে চাকরি দেওয়ার ঘোষণা হয়েছিল। কিন্তু জমির বদলে রেল দফতর চাকরি দেবে কী ভাবে? সে উত্তর অবশ্য তাঁরা দিয়ে যাননি।”
তবে নসিপুর রেলসেতু চালুর ব্যাপারে জমিদাতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের জন্য রেল কর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন রেল প্রতিমন্ত্রী। অধীর বলেন, “আমি ওই এলাকার জমিদাতাদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছি।” অধীর বলেন, “আগামী দিন পঞ্চাননতলা রেলগেটের উপরে উড়ালপুল, কাটোয়া-ফরাক্কা ডাবল লাইন করার ব্যাপারেও ভাবনা-চিন্তা করছি। তবে উড়ালপুল নির্মাণে রেল দফতরের পাশাপাশি রাজ্য সরকারেরও ভূমিকা রয়েছে। সেন্ট্রাল রিজার্ভ ফান্ডের টাকায় রাজ্য ও কেন্দ্রের অংশ রয়েছে। ওই ফান্ডের টাকা দেওয়ার জন্য এখন রাজ্যকে চিঠি দিয়ে তো জানাতে হবে। কিন্তু রাজ্য সরকার চিঠি দিচ্ছে না।” |