|
|
|
|
আজ হার নয়, জয় |
‘বোর্ড চাইলে দেশের জন্য কাজ করব’ |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
মাঠের লড়াইয়ে ৯৯ টেস্টে এসে থামতে হয়েছিল তাঁকে। আজ আদালতের যুদ্ধে জিতে নিজের উপর থেকে আজীবন নির্বাসনের শাস্তি কি অবশেষে তুলতে পারলেন মহম্মদ আজহারউদ্দিন? সত্যিই কি শাপমুক্তি ঘটল প্রাক্তন ভারত অধিনায়কের?
স্ত্রী সঙ্গীতা বিজলানি আর তাঁর সঙ্গে থাকেন না। দুর্ঘটনায় হারিয়েছেন ছোট ছেলে আয়াজউদ্দিনকে। এক সময় যাঁর সম্পর্কে বলা হত, ভাগ্যরেখা হাতের তালু ছাড়িয়ে নেমেছে, তিনি যেন এত দিন ভাগ্যের কাছেই মার খেয়ে আসছিলেন। বৃহস্পতিবার অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্টের রায়ের পর স্বয়ং আজহারেরও মনে হচ্ছে, ভাগ্যে ছিল বলেই এই রায়ের জন্য ১২ বছর অপেক্ষা করতে হল তাঁকে।
কিন্তু আজহার কি সত্যিই মুক্তি পেলেন? বোর্ড যদি এর পর সুপ্রিম কোর্টে যায় তা হলে কী হবে? এর আগে সিটি সিভিল কোর্টে আজহারের আবেদনের বিরুদ্ধে লড়ে বোর্ডকে যিনি জিতিয়েছিলেন, বাংলার সেই আইনজীবী উষানাথ বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার জন্য বোর্ডের হাতে যথেষ্ট উপাদান আছে। তাঁর কথায়, “সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে যে রিপোর্ট পেশ করা হয়েছিল, তা আজহার পর্যন্ত চ্যালেঞ্জ করতে পারেনি। সিবিআইয়ের রিপোর্টের চেয়ে অকাট্য প্রমাণ আর কী হতে পারে?” |
|
২০১২: এখন ফুল |
উল্টো দিকে আজহারের আইনজীবী কে রমাকান্ত রেড্ডি পরিষ্কার জানাচ্ছেন, বোর্ড সুপ্রিম কোর্টে গেলেও আজহারের কোনও সমস্যা হবে না। হায়দরাবাদ থেকে ফোনে তিনি আনন্দবাজারকে এ দিন বলেন, “রায়ের যা মানে তাতে আইনত এটাই দাঁড়ায় যে নির্বাসনটা কোনও দিনই ছিল না।” তা হলে এত বছর কেন লাগল আদালতের রায় পেতে? রেড্ডির ব্যাখ্যা, এর জন্য বোর্ডের আইনজীবীরাই দায়ী। “পাঁচ মাস আগে কেসের ব্রিফটা হাতে পাই। আমি আজহারের পাঁচ নম্বর আইনজীবী। দেখলাম, নানা কারণে মামলাটা বার বার পিছনো হয়েছে। যেমন বোর্ডের কৌঁশুলিদের শরীর খারাপ হওয়ায় মামলা পিছিয়ে যায়। আমি মামলা হাতে নেওয়ার পরই ঠিক করে ফেলি, এ ভাবে চলতে দেওয়া যায় না।”
বৃহস্পতিবার অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্টের বিচারপতি আশুতোষ মোহান্ত এবং কৃষ্ণ মোহন রেড্ডির বেঞ্চের দেওয়া এই রায়ের পরই হায়দরাবাদে আজহারের বাড়ির সামনে আগাম দেওয়ালি শুরু হয়ে যায়। বাজি ফাটতে থাকে। কংগ্রেস সাংসদ আজহার তখন দিল্লিতে। সেখানে প্রথমে তড়িঘড়ি ডাকা এক সাংবাদিক সম্মেলনে ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক বলেন, “সবই ভাগ্য। সে জন্যই হয়তো একশো টেস্ট খেলা হয়নি আমার। সে জন্যই হয়তো বারো বছর লাগল এই আইনি যুদ্ধের ফল বেরোতে। এই রায় শুনে আমার ছেলেও খুব আনন্দ পেয়েছে। বাবা-মা বারো বছর ধরে চিন্তা করতেন। আজ তার অবসান হল।” |
‘আইন-ই-আজহার’ |
রায়ের যা মানে তাতে আইনত এটাই দাঁড়ায় যে নির্বাসনটা কোনও দিন ছিলই না। এত দিন ব্যাপারটার নিষ্পত্তি হতে লাগল কারণ বোর্ড পক্ষের কৌঁশুলিরা অযথা ব্যাপারটা নিয়ে দেরি করায়। এর পর যদি বোর্ড চায় সুপ্রিম কোর্টে যেতেই পারে, কিন্তু তাতে আজহারের কোনও সমস্যা হবে বলে মনে করি না। এ বার বোর্ড যদি ব্যাপারটা মিটিয়ে নেয়, তা হলে সব দিক থেকেই ভাল হবে।
কে রমাকান্ত রেড্ডি (আজহারের আইনজীবী) |
বোর্ড চাইলে এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করার মতো যথেষ্ট উপাদান পেয়ে যাবে বলে আমার ধারণা। প্রথম মামলাটা লড়ে জিতেছি বলে জানি, সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে কিন্তু অথিনটিকেটেড রিপোর্ট পেশ করা হয়েছিল। যা আজহার পর্যন্ত চ্যালেঞ্জ করতে পারেনি। ওই রিপোর্টের বিরুদ্ধে কোনও সাক্ষীও দাঁড় করাতে পারেনি। সিবিআই রিপোর্টের চেয়ে বড় অকাট্য প্রমাণ আর কী হতে পারে? অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্টের রায়ের কাগজ আমার হাতে নেই। তাই জানি না কোন যুক্তিতে মামলাটাকে খারিজ করা হল। কিন্তু আমি জানতে চাই। কারণ, তথ্যগুলো তো আর পাল্টায়নি। ব্যক্তিগত ভাবে বলব, বোর্ড চাইলে কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট যেতেই পারে।
উষানাথ বন্দ্যোপাধ্যায় (আজহার মামলায় জয়ী বোর্ডের আইনজীবী) |
|
কিন্তু যাদের জন্য আপনার একশো টেস্ট খেলা হল না, তাদের বিরুদ্ধে কোনও আইনি পদক্ষেপ নেবেন না? আজহারের কথা থেকে পরিষ্কার, প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক মাঠের বাইরের এই যুদ্ধে ইতি টানতে তৈরি। “আমি আর পিছনে ফিরে তাকাতে চাই না। কারও বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছি না। কাউকে দায়ী করতেও চাই না। আমার কোনও অভিযোগ নেই। ক্রিকেট খেলে আমি অনেক কিছু পেয়েছি। এ বার কিছু ফিরিয়ে দিতে চাই। কোচিং বা অ্যাকাডেমির কাজে জড়াতে পারলে ভাল লাগবে। বোর্ড চাইলে দেশের জন্য কাজ করতে আমি তৈরি।”
বোর্ড মহলের খবর, বোর্ডকর্তারাও চাইছেন না আজহার মামলা নিয়ে আর জলঘোলা করতে। এর অন্যতম কারণ হল, আজহারকে যে সময় শাস্তি দেওয়া হয়েছিল, সে সময়কার কোনও কর্তা আর শীর্ষপদে নেই। নতুন মহাকর্তারা আর পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটতে চান না। যদিও বোর্ডের অন্যতম ভাইস প্রেসিডেন্ট রাজীব শুক্ল এ দিন জানিয়েছেন, বোর্ডের আইনি দল আগে পুরো ব্যাপারটা খতিয়ে দেখবে। তার পরই যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তা নেওয়া হবে।
ম্যাচ গড়াপেটা কাণ্ডে জড়িয়ে থাকার জন্য যাঁর এই শাস্তি হয়েছিল, সেই আজহার অবশ্য ক্রিকেটে গড়াপেটা নিয়ে কিছু বলতে চাননি। রাতে এক টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে বসে তিনি বলেন, “ম্যাচ গড়াপেটা কী ভাবে হয়, সে সম্পর্কে কোনও ধারণাই নেই।” আর স্পট ফিক্সিং? টিভি-তে কিছু দিন আগে যা নিয়ে তুলকালাম হয়ে গেল? এ বার আজহারের মন্তব্য, “স্পট ফিক্সিং নিয়ে টিভি-তে ফুটেজ দেখেছি। কোনও ধারণা নেই। তবে যারা এর মধ্যে জড়িয়ে পড়েছিল, তারা ঠিক কাজ করেনি।” |
|
২০০০: তখন কুশপুতুল |
উঠে আসে শোয়েব আখতার প্রসঙ্গ। শোয়েব কিছু দিন আগেই বলেছিলেন, মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে যাঁরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসে, তাঁরা সহজেই টাকা-মহিলা দেখে প্রলুব্ধ হয়। আপনি কী বলবেন? “ওটা শোয়েবের ব্যক্তিগত মতামত। আমার কিছু বলার নেই,” ডেড ব্যাটে ‘বল’ খেলে দিলেন আজহার।
একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, শাপমুক্তি সত্যি ঘটলে আজহারকে পরবর্তীকালে কি ভারতীয় বোর্ডে দেখা যেতে পারে? এ বার কিন্তু যথেষ্ট সতর্ক শোনাল আজহারকে: “এখন রাজনীতি করি। তাই আগামী দিনে বোর্ডেও আসতে পারি কি না, তা নিয়ে অনেকেই আলোচনা করে। একটা কথা বলি, ক্রিকেট এবং রাজনীতি দুটো এক সঙ্গে করা খুব শক্ত। ওটা কীর্তি আজাদরা ভাল সামলায়।”
|
তিন প্রশ্ন |
বোর্ড সুপ্রিম কোর্টে গেলে?
কোনও সমস্যা হবে না বলে দাবি তাঁর আইনজীবীর। যদিও বোর্ডের পুরনো আইনজীবী বলছেন এখনও অকাট্য প্রমাণ আছে। |
আইসিসি অনুমোদিত ম্যাচে কি মাঠে ঢুকতে পারবেন?
এই রায় বজায় থাকলে আইনত আটকানো যাবে না। |
ক্রিকেট বোর্ডের কোনও পদে বা অনুষ্ঠানে কি আসতে পারেন? কোচ হিসাবে কি দেখা যেতে পারে?
বোর্ড চাইলে আইনত কোনও সমস্যা হবে না। |
|
|
|
|
|
|