সম্পাদকীয় ২...
গরিষ্ঠের আধিপত্য
ণতান্ত্রিক সংস্কারের পথে মায়ানমারের অভিযাত্রা প্রতি পদেই বিঘ্নিত হইতেছে। প্রেসিডেন্ট থাইন সেইন-এর নেতৃত্বাধীন ফৌজি সরকার একের-পর-এক দমনমূলক ব্যবস্থা শিথিল করিয়া জনসাধারণের আশা-আকাঙ্ক্ষা উস্কাইয়া দিতেছে। অন্য দিকে এই সরকারই রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রতি নির্যাতন অবাধে ঘটিতে দিয়া জাতিগত ও ধর্মীয়-সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্বও অমীমাংসিত রাখিতেছে। গত জুন মাসে রাখিন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের উপর যে অত্যাচার চলে, ফৌজি রাষ্ট্র তাহাতে হস্তক্ষেপ করে নাই। বিশ্বব্যাপী ধিক্কার এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের মুখে পড়িয়া বিলম্বিত কিছু ত্রাণব্যবস্থা লইয়াছিল মাত্র। সম্প্রতি পুনরায় রক্তপাত। অন্তত ৮৪ জন রোহিঙ্গার মৃত্যু এবং শতাধিকের আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর সরকারের টনক নড়িল।
রোহিঙ্গাদের প্রতি মায়ানমার ও বাংলাদেশ, উভয় রাষ্ট্রের মনোভাবই দুর্ভাগ্যজনক। দুই দেশের কেহই রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয় নাই। ফলে, আট লক্ষ মানুষ কার্যত উদ্বাস্তুর অনিশ্চয়তায় দিনযাপন করেন। অত্যাচারের মাত্রা অসহনীয় হইলে তাঁহারা ভেলায় চড়িয়া সমুদ্রে পাড়ি দেন। বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীরা তাঁহাদের খেদাইয়া দেয়, সমুদ্রে ভেলা উল্টাইয়া বাকি শরণার্থীদের সলিলসমাধি ঘটে। তাঁহারা বাংলাদেশে অবাঞ্ছিত। আবার শতাব্দীরও বেশি কাল মায়ানমারের বাসিন্দা হইয়াও সে দেশের নাগরিকত্ব হইতে বঞ্চিত। তাঁহাদের উপর সর্বশেষ নিগ্রহের সময়েও রাষ্ট্র তাঁহাদের নিরাপত্তা দেয় নাই। এমনকী মায়ানমারে গণতন্ত্রের মূর্তিমান প্রতিমা, পশ্চিমী বিশ্বে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় তাঁহার সংগ্রামের জন্য বন্দিত, নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী আঙ সান সু চি পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের উপর নৃশংস হামলা ও নির্যাতনের প্রতিক্রিয়ায় নীরব। কারেন জনজাতির সহিত দ্বন্দ্বের নিরসনে তাঁহার তৎপরতা আছে, কাচিন গেরিলাদের জাতীয় জীবনের মূল স্রোতে শামিল করিতেও তাঁহার চেষ্টার অন্ত নাই। কেবল ভাগ্যবিড়ম্বিত রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদান এবং মনুষ্যত্বের মর্যাদায় মণ্ডিত করার ব্যাপারে তিনি নিশ্চেষ্ট। এই প্রশ্নে তাঁহার সতর্ক মন্তব্য রাখিন প্রদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হউক।
গণতন্ত্র কেবল সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রাধান্য নয়, সংখ্যালঘুর মর্যাদা এবং অধিকার সুনিশ্চিত করার রক্ষাকবচও। কেবল সংখ্যাগুরুর প্রাধান্য যেমন মায়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা ও ধর্ষণকে বৈধতা দেয়, তেমনই তাহার সরাসরি প্রতিক্রিয়ায় সংলগ্ন বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে সংখ্যালঘু বৌদ্ধ চাকমাদের উপর সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম বাংলাদেশিরা প্রতিশোধ লন। এ ভাবেই চোখের বদলে চোখ উপড়াইয়া লওয়ার জিঘাংসা কালক্রমে গোটা বিশ্বকেই দৃষ্টিহীন করিতে চায়। দুই দেশের নায়কদের মুখোমুখি বসিয়া রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের প্রশ্নটির মীমাংসা করা উচিত। আঙ সান সু চি যদি সমগ্র মায়ানমারের জনগণমনের অধিনেত্রী হইতে চাহেন, তবে তাঁহাকে ও তাঁহার দলকেও গোষ্ঠীগত সংকীর্ণতা হইতে বাহির হইতে হইবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.