আগে দু’-দু’বার চেয়েও পাওয়া যায়নি। কলকাতা পুরসভার কাছ থেকে ত্রিফলা আলো প্রকল্পের সব নথি ফের তলব করেছে কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি)-এর অফিস। কিন্তু পুর-কর্তৃপক্ষ এ বারও তাতে সাড়া দিচ্ছেন না।
তাই ফাইল এখনও পৌঁছায়নি সিএজি’র হাতে। পুর-কর্তৃপক্ষ আপাতত এক বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে ত্রিফলা-বরাতের হিসেব পরীক্ষা (অডিট) করাতে ব্যস্ত। মূল নথির বদলে বেসরকারি সংস্থাটির অডিট-রিপোর্টই সিএজি’কে পাঠানো হবে বলে পুর-সূত্রের খবর। সিএজি’র তরফে অবশ্য পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের কাছে ওই অডিটের কোনও মূল্য নেই। তাঁরা নিজেরা সব হিসেব খতিয়ে দেখতে চান।
কলকাতার সৌন্দর্যায়নে পুরসভা রাজপথে হাজার কুড়ি ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ লাগিয়েছে। অভিযোগ, দরপত্র এড়াতে প্রায় ৩০ কোটি টাকার কাজ ৫ লক্ষ টাকার কম অঙ্কের ছ’শো ফাইলে ভাগ করে বরাত দেওয়া হয়েছিল। অনিয়মের ইঙ্গিত মেলায় ঠিকাদারদের বিল আটকানোর নির্দেশ দেন পুর-কমিশনার। মেয়র নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ না-মানলেও ত্রিফলা-বিতর্কের জেরে সরতে হয়েছে পুরসভার আলো বিভাগের ডিজি’কে। কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট সিবিআই-তদন্তের দাবিও তুলেছে।
এবং এ হেন ‘শোরগোলের’ প্রেক্ষিতেই যে সিএজি পুরো বিষয়টি যাচাই করতে চাইছেন, এজি বেঙ্গলের (সিএজি’র রাজ্য শাখা) এক পদস্থ অফিসারের কথায় তা স্পষ্ট। তিনি বলেন, “ত্রিফলা-প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ ঘিরে রাজ্য জুড়ে হইচই পড়েছে দেখেই সিএজি এ নিয়ে নিজস্ব অডিটের পক্ষপাতী।” তাঁর দাবি, “কেন্দ্রের নির্দেশে সিএজি যে কোনও পুরসভার যে কোনও প্রকল্পের অডিট করতে পারেন। সেই অডিট হতে পারে বছরের যে কোনও সময়ে।”
কিন্তু পুর-কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে উৎসাহী নন। ত্রিফলা বরাত নিয়ে তাঁরাই অডিট করাচ্ছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি অডিট সংস্থাকে সম্প্রতি চিঠি পাঠিয়ে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলেছেন পুরসভার মুখ্য অডিটর বিপ্লব গুহরায়। পুরসভা নিজেই যেখানে হিসেব পরীক্ষা করাচ্ছে, সেখানে সিএজি-অডিটের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন কোনও কোনও পুর-কর্তা। যার জবাবে এজি বেঙ্গলের অফিসারটি বলছেন, “পুরসভার অডিট টিম পুর-প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে। তাই সন্দেহের অবকাশ থেকেই যায়।” সিএজি-অডিটে কি তা থাকে না?
সে ক্ষেত্রে তেমন সম্ভাবনা নেই বলে ওঁর দাবি। তাঁর মন্তব্য, “সিএজি-অডিটের রিপোর্ট জমা পড়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। বিধানসভায় প্রতিলিপি পাঠানো হয়। ওই রিপোর্টকে প্রভাবিত করার সুযোগ নেই।”
ওঁরা যা-ই বলুন, পুর-কর্তৃপক্ষ অবশ্য সিদ্ধান্তে অবিচল। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় মনে করছেন, এ বিষয়ে পুরসভার নিজস্ব অডিটই যথেষ্ট। “পুরসভার অনুমোদিত সংস্থাকে দিয়েই তো অডিট করানো হচ্ছে! এটাই নিয়ম।” বলেন মেয়র। তা হলে প্রকল্প-বরাতের ফাইল কি সিএজি’কে পাঠানো হবে না?
পুর-সচিবালয়ের এক পদস্থ অফিসারের জবাব, “পুরসভার ওই ইন্টারন্যাল অডিটের রিপোর্ট সিএজি’কে পাঠিয়ে দিলেই চলবে।” সেই রিপোর্ট সিএজি হুবহু গ্রহণ করবেন?
এজি বেঙ্গলের কর্তাটি বলেন, “পুর-অডিটের রিপোর্ট সিএজি’র কাছে অর্থহীন। নিজস্ব অডিট করেই আমরা চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি করব।” কিন্তু ত্রিফলা-ফাইল পুরসভা যদি না-ই দেয়, তা হলে ওঁরা কী করতে পারেন?
অফিসারটি জানান, পুর-কমিশনারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাঁরা আর কিছু দিন দেখবেন। তার পরে সরাসরি চিঠি লিখবেন রাজ্যের মুখ্যসচিবকে। তাতেও যদি কাগজপত্র না পাওয়া যায়? অফিসারটি বলেন, যে হেতু কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পের টাকায় ত্রিফলা আলো লাগানো হয়নি, সে হেতু পুরসভার বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে একটা সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করে ‘এই খাতে খরচ সন্দেহজনক’ বলে রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হবে রাজ্য সরকারের কাছে। রাজ্য সরকার সেই রিপোর্ট বিধানসভায় পেশ করতে বাধ্য। তার পর এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করতে পারে বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি। |