আর মাস তিনেক পরেই দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন উত্তরসূরির হাতে। তবে তার আগে খুবই উদ্বিগ্ন তিনি। উদ্বিগ্ন তাঁর দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে। এমনকী দেশের অস্তিত্ব নিয়েও। দলের পার্টি কংগ্রেসের প্রথম দিনেই তাই নিজের যাবতীয় উদ্বেগ সকলের সামনে তুলে ধরলেন হু জিনতাও। চিনের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট।
বেজিঙের ‘গ্রেট হল অফ দ্য পিপল’-এ আজ থেকে শুরু হয়েছে ১৮তম পার্টি কংগ্রেস। আর উদ্বোধনী বক্তৃতাতেই জিনতাও বুঝিয়েছেন দুর্নীতির বিষয়টিই এখন সবচেয়ে বেশি ভাবিয়ে তুলেছে তাঁকে। দু’হাজারেরও বেশি প্রতিনিধির সামনে তিনি আজ বলেছেন “যদি আমরা এই বিষয়টি (দুর্নীতি) সামলাতে না পারি, তা হলে সেটা কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে ক্ষতিকারক তো হবেই। দেশের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই মুশকিল হবে।” বার্তাটা স্পষ্ট। উদ্বোধনের দিনেই দলের কর্মীদের সতর্ক করেছেন জিনতাও। ভাবী প্রেসিডেন্টকে তো বটেই।
প্রথা মেনেই এক দশক পরে প্রেসিডেন্ট বদলাতে চলেছে চিনে। আগামী মার্চ মাসে পার্লামেন্টের বার্ষিক সভায় আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন জি জিনপিং। ২০০৮ থেকে দেশের ভাইস প্রেসিডেন্টের পদ সামলাচ্ছেন তিনি। এই পার্টি কংগ্রেসেই চিনের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও তাঁর নাম ঘোষণা হওয়ার কথা। ফলে তাঁর রাস্তা কতটা কঠিন ঠিক যেন সেটাই আজ বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন জিনতাও। |
তিন প্রজন্ম। পিছনে ভাবী প্রেসিডেন্ট জি জিনপিং। সামনে হু জিনতাওয়ের
(বাঁ দিকে) সঙ্গে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জিয়াং জেমিন। ছবি: এ পি |
কমিউনিস্ট পার্টির দুর্নীতি নিয়ে এর আগেও মুখ খুলেছেন প্রেসিডেন্ট। চলতি বছরের জুলাই মাসে পার্টি কংগ্রেসের প্রস্তুতি বৈঠকেও সরব হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু প্রকাশ্যে এত দৃঢ় ভাবে দলকে সতর্ক করা এই প্রথম। আসলে পলিটব্যুরোর প্রাক্তন সদস্য বো সিলাইয়ের বিরুদ্ধে ভূরি ভূরি দুর্নীতির অভিযোগের জন্য ইতিমধ্যেই দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত। আর্থিক নয়ছয় থেকে শুরু করে ঘুষ নেওয়া। বো-এর ‘দুর্নীতি তালিকা’ খুব একটা ছোট নয়। একটি খুনের মামলায় তাঁর স্ত্রীয়ের নাম জড়ানো নিয়েও কম জলঘোলা হয়নি। অবশেষে বো-কে দল থেকে তাড়ানো হয়েছে বটে। তবে ‘বো-ভূত’ এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে জিনতাও তথা দেশের শীর্ষ নেতৃত্বকে। বো-এর করা ভুল থেকে দল যাতে শিক্ষা নেয়, সে নিয়েও পার্টি কংগ্রেসে আলোচনা হয়েছে।
আর শুধু বো-ই নন। খোদ প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাওয়ের রাজনৈতিক ভাবমূর্তি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। গত মাসেই একটি মার্কিন দৈনিকের রিপোর্টে দাবি করা হয়, বিপুল সম্পত্তির অধিকারী জিয়াবাওয়ের আত্মীয়েরা। যে অর্থের সিংহভাগই এসেছে জিয়াবাও ক্ষমতায় আসার পরে। যদিও বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সংবাদমাধ্যমকে তড়িঘড়ি জানান, চিনকে কলুষিত করতেই এই ধরনের রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। তবু সমালোচকদের মুখ বন্ধ হয়নি। জিনতাওকে এই সব কিছুই যে ভাবাচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য।
তবে শুধু দুর্নীতি নয়। আজকের বক্তৃতায় দেশের আর্থিক বৃদ্ধি আর রাজনৈতিক সংস্কার নিয়েও কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট। বলেছেন, কী ভাবে দেশের একটা বিশাল অংশকে দারিদ্র থেকে আর্থিক স্বচ্ছলতার মুখ দেখিয়েছে তাঁর সরকার। আর আভাস দিয়েছেন আগামী দশ বছরে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির ব্লু-প্রিন্টেরও। জিনতাও বলেছেন, “দেশের অগ্রগতিতে ভারসাম্য আনতে আমাদের উচিত ২০১০ সালের দেশের মোট জাতীয় উৎপাদন (জিডিপি) আর জন প্রতি গড় আয় ২০২০ সালের মধ্যে দ্বিগুণ করা।” যদিও আর্থিক বৃদ্ধির বিষয়টিও যথেষ্ট ভাবাচ্ছে পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বকে। আসলে পার্টি কংগ্রেসটা এমন সময় হচ্ছে, যখন গত তিন বছরে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার কমেছে প্রায় সাড়ে চার শতাংশ। আর সে জন্যই এই প্রথম বার জন প্রতি গড় আয় দ্বিগুণ করার পক্ষে সওয়াল করেছেন জিনতাও। |