নতুন করে কোনও গোলমাল না হলেও সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষের ঘটনার পরের দিন বৃহস্পতিবারও পুলিশি টহল চলছে বর্ধমানের সোনাপলাশি গ্রামে। এই ঘটনায় তৃণমূলের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবারই আট জনকে গ্রেফতার করা হয়। ফের সংঘর্ষের আশঙ্কায় পাঁচ মহিলা-সহ আরও ২১ জনকে ধরে পুলিশ। তাঁদের অবশ্য বুধবার সন্ধ্যাতেই থানা থেকে জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়। গ্রামে পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোনাপলাশি গ্রামে বন্ধ থাকা সমবায় খোলাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে গোলমাল বাধে। সিপিএম সমর্থকদের ছোড়া ইটে জখম হন তৃণমূলের পাঁচ জন। পুলিশ তাঁদের বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অমল হালদার অবশ্য দাবি করেন, রাজ্যের অন্য অনেক সমবায়ের মতো এই জেলাতেও এমন কিছু সমবায় রয়েছে যেখানে পরিচালন সমিতির সদস্য ও পদাধিকারীরা পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত। কিন্তু রাজ্য সরকার বোর্ডের মেয়াদ তিন বছর করে দেওয়ায় বহু সমিতি পরিচালনার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। তবে সম্প্রতি হাইকোর্টের রায়ে ওই তিন বছরের মেয়াদ সংক্রান্ত নির্দেশিকা বাতিল হয়ে যায়। তাই সোনাপলাশিতে সমবায়ের নির্বাচিত বোর্ডের সম্পাদক সমীর মুখোপাধ্যায় ৩০ অক্টোবর কাজ শুরু করেন। অমলবাবুর অভিযোগ, “বুধবার পরিচালন সমিতির সদস্যদের বৈঠক ছিল। বৈঠক শেষে সদস্যেরা চলে যাওয়ার পরে গ্রামের তৃণমূলের কিছু লোকজন গিয়ে সমিতিতে তালা লাগিয়ে দেন। সমবায়ের কয়েক জন কর্মীকে মারধর করে আটকে রাখা হয়। তাতে এলাকার মানুষজন ক্ষুব্ধ হয়ে লাঠিসোটা নিয়ে গেলে তাঁদের সঙ্গে তৃণমূলের লোকজনের মারপিট হয়। পরে পুলিশ ও র্যাফের সাহায্য নিয়ে গরিব মানুষের উপরে হামলা চালায় তৃণমূল।”
ঘটনায় জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তৃণমূলের বর্ধমান-২ ব্লক সভাপতি তরুণ চক্রবর্তী। তাঁর পাল্টা দাবি, “আমরা চেয়েছিলাম, নির্বাচনের মাধ্যমে সমবায়ের নতুন বোর্ড তৈরি হোক। বুধবার সমবায় দফতরের ইনস্পেক্টরের সামনে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সম্পাদক ম্যানেজারকে সমবায় চালাতে পূর্ণ দায়িত্ব দিয়ে দেন। ইনস্পেক্টর আসার আগেই দায়িত্ব হস্তান্তর হয়ে যায়।” আর এক আহত তৃণমূল সমর্থক সূর্যশেখর গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “আমরা প্রতিবাদ করতে যেতেই সিপিএমের লোকেরা চড়াও হয়। তাতেই আমাদের পাঁচ জন আহত হন।” হাসপাতালে ভর্তি স্থানীয় চাষি অশোক দালালের দাবি, “দীর্ঘদিন এই সমবায়ে নানা দুর্নীতি হয়েছে। সম্পাদক অনেক দিন ধরেই অনুপস্থিত। তাই সমবায়ের কাজও প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সদস্যেরা ঋণ বা অন্য পরিষেবা পেতেন না। তাই আমরা প্রত্যেকেই চাই সমবায়ের নতুন করে নির্বাচন হোক।” ওই সমবায়ের বোর্ডের সম্পাদক সমীরবাবুর সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। |