নিজস্ব সংবাদদাতা • আসানসোল |
কোলিয়ারিতে বারবার বিস্ফোরণ ও কয়লার দূষণ থেকে বাঁচতে পুনর্বাসনের দাবি তুললেন সালানপুরের মোহনপুর, আমডিহা ও পর্বতপুর গ্রামের বাসিন্দারা। এর মধ্যে দুই গ্রামের প্রায় সত্তরটি পরিবারের স্বাক্ষর করা একটি আবেদনপত্র তাঁরা পাঠিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। তাঁদের দাবি, সালানপুরের ‘ধসপ্রবণ’ এলাকার গ্রামবাসীদের জন্য নির্মিত পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় আনা হোক তাঁদের। কয়লা মন্ত্রকের পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় আনা হোক তাঁদের। বিষয়টি রাজ্য বিধানসভায় তোলারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বারাবনির বিধায়ক বিধান উপাধ্যায়। খনি কর্তৃপক্ষের তরফে অবশ্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইসিএলের সালানপুর এরিয়ার মোহনপুরে খোলামুখ খনি থেকে কয়লা তোলার জন্য নিয়মিত বিস্ফোরণ ঘটান খনি কর্তৃপক্ষ। সেই সময়ে গোটা অঞ্চলে কম্পন অনুভূত হয়। ঘর বাড়ি দুলে ওঠে। বাসিন্দারা জানান, এর ফলে কয়েকটি ঘরে ফাটলও ধরেছে। বিস্ফোরণের পরে কয়লা তোলা ও তা পরিবহণের সময়ে গোটা এলাকায় ব্যাপক দূষণ ছড়ায় বলেও অভিযোগ তাঁদের।
মোহনপুর খোলামুখ খনির ৩০০ মিটারের মধ্যে রয়েছে মোহনপুর গ্রাম। পাশেই পর্বতপুর ও আমডিহা গ্রাম। বিস্ফোরণের প্রভাবে বাসিন্দাদের অনেকেরই ঘরের দেওয়াল ফেটে গিয়েছে। মেঝেতেও তৈরি হয়েছে ফাটল। গোটা ঘর ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিলেন ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা পূর্ণিমা মিশ্র। জায়গায় জায়গায় মাকড়সার জালের মতো ফাটল তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, “খুব ভয় হয় জানেন। মনে হয়, কোনও দিন হয়তো ফাটল চওড়া হয়ে তলিয়ে যাব।” স্থানীয় বাসিন্দা লালু চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “বিস্ফোরণের সময় গ্রামটা দুলে ওঠে। ঘর বাড়ি কাঁপতে থাকে। মনে হয়, ভূমিকম্প হচ্ছে।” |
বাসিন্দারা জানান, প্রথম দিকে এই সমস্যা ছিল না। তবে খনির গভীরতা যত বাড়ছে, বিস্ফোরণের মাত্রাও তত বাড়ছে। ২০১০ সালের গোড়া থেকে বিস্ফোরণের কারণে সমস্যা শুরু হয়। সমাধান খুঁজতে ওই বছরের ৮ ডিসেম্বর প্রথম খনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক হয়েছিল বাসিন্দাদের। এর পরেও বৈঠক হয়েছে অনেক বার। শেষ বৈঠক হয়েছে চলতি বছরের ২৭ অগস্ট। মোহনপুর কোলিয়ারির এজেন্ট একে সেনগুপ্তের পৌরহিত্যে এই বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন একাধিক খনি আধিকারিক ও প্রায় কুড়ি জন গ্রামবাসী। স্থানীয় তৃণমূল নেতা পাপ্পু উপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাসিন্দারা দাবি তোলেন, খনিতে বিস্ফোরণ বন্ধ করতে হবে। অন্যথায়, পরিবার পিছু এক জনকে চাকরি ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিয়ে গ্রামবাসীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুক খনি কর্তৃপক্ষ। খনির এজেন্ট একে সেনগুপ্তের বক্তব্য, “পুনর্বাসনের বিষয়টি আমাদের এক্তিয়ারে নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে বিস্ফোরণের মাত্রা অনেক কমিয়ে দিয়েছি আমরা। অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী ডিনামাইট ফাটিয়ে কয়লা তোলা হচ্ছে।” তাঁর দাবি, “এখনকার বিস্ফোরণের মাত্রায় বাসিন্দাদের সমস্যা হওয়ার কথা নয়।”
এডিডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে এই পুনর্বাসন প্রকল্পের জন্য অর্থ অনুমোদন করেছে কেন্দ্রীয় কয়লামন্ত্রক। এখনও পর্যন্ত আসানসোল-রানিগঞ্জ খনি এলাকার ৫টি গ্রামকে পুনর্বাসন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দায়িত্বে রয়েছে এডিডিএ। তবে, মোহনপুর খনি-সংলগ্ন গ্রামগুলি ‘ধসপ্রবণ’ বলে চিহ্নিত না হওয়ায় পুনর্বাসনের তালিকায় তাদের নামও নেই। গ্রামবাসীদের দাবির প্রেক্ষিতে এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “বিষয়টি নিয়ে পরে ভাবা হবে।”
বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত দু’মাসে অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি। তাই নিরুপায় হয়ে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে এলাকার বিধায়ক বিধান উপাধ্যায়কে। বিধানবাবুর বক্তব্য, “আমি বিধানসভার অধিবেশনে বিষয়টি তুলব।” আসানসোলের মহকুমাশাসক শিল্পা গৌরীর বক্তব্য, “গ্রামবাসীদের কাছ থেকে বিষয়টি জেনেছি। ব্লকের মাধ্যমে বিস্তারিত রির্পোট আনিয়ে খনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব।” |