সরকারি কমিটির হস্তক্ষেপ
ছেলেমেয়ে ফেরত চেয়েও নিরাশ সাগরিকা
রওয়ে থেকে ফেরা দুই ছেলেমেয়েকে নিজের কাছে চেয়েও খালি হাতেই ফিরলেন সাগরিকা ভটাচার্য। রাজ্য সমাজকল্যাণ দফতরের চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির (সি ডব্লিউ সি) অভিযোগ, জুভেনাইল কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও কুলটি থানা বা আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট সাহায্য করেনি।
বাবা-মায়ের অযত্নের অভিযোগ তুলে বেশ কিছু দিন নিজেদের হেফাজতে রাখার পরে অনুরূপ ভট্টাচার্য ও সাগরিকার ছেলেমেয়ে অভিজ্ঞান-ঐশ্বর্যাকে কাকার হাতে তুলে দিয়েছিল নরওয়ে সরকার। গত বছর ২৪ এপ্রিল কাকা অরুণাভাস তাদের দেশে ফিরিয়ে আনেন। এর পর থেকে তারা কুলটিতে কাকা ও ঠাকুর্দা-ঠাকুমার কাছেই রয়েছে। সাগরিকা বার বার চাইলেও নরওয়ে সরকারের শর্তের কথা তুলে তাঁর কাছে শিশু দু’টিকে ফেরত পাঠানো হয়নি (বিশেষ করে যেহেতু অনুরূপ এখনও সে দেশেই আছেন)। সাগরিকাও কুলটিতে এসে থাকেননি। কলকাতায় বাপের বাড়িতেই রয়েছেন।
আগেই সি ডব্লিউ সি-র কাছে সাগরিকা অভিযোগ করেছিলেন, কাকার হেফাজতে তাঁর ছেলেমেয়ে ‘ভাল নেই’। তার জেরে একটি সহযোগী সংগঠনকে তদন্তে পাঠায় সি ডব্লিউ সি। শিশু দু’টি ‘অযত্নে’ রয়েছে বলে তারাও জানিয়েছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই সংগঠনের লোকজনকে নিয়েই কুলটি থানায় গিয়ে শিশু উদ্ধারের জন্য সাহায্য চান সাগরিকা। সি ডব্লিউ সি এ ব্যাপারে লিখিত অনুমতি দিয়েছে বলেও জানান। কিন্তু কুলটি থানা জানায়, আদালতের কাগজপত্র না থাকায় তারা সাহায্য করতে পারবে না।
কুলটির বাড়িতে ঠাকুমার সঙ্গে অভিজ্ঞান ও ঐশ্বর্যা। ছবি: শৈলেন সরকার
সন্ধ্যায় বর্ধমান শহরে সাংবাদিক বৈঠক করে সি ডব্লিউ সি-র সদস্য শিখা আদিত্য বলেন, “জুভেনাইল কোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশ নিয়েই আমরা কুলটি গিয়েছিলাম। জেলাশাসকের দফতরে নির্দেশের প্রতিলিপিও জমা দিয়ে যাই।” তাঁর অভিযোগ, “আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার আমাদের সঙ্গে দেখাই করেননি। কুলটি থানার আইসি-ও সহযোগিতা করেননি।” বার বার চেষ্টা করেও পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। আর কুলটি থানার আইসি অসিত পাণ্ডের দাবি, “ওঁদের কাছে আদালতের নির্দেশ দেখতে চাওয়া হয়েছিল। ওঁরা তা দেখাতে পারেননি।” বর্ধমানের জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “আসানসোলে থাকায় নির্দেশের প্রতিলিপি দেখিনি। তবে সি ডব্লিউ সি পুলিশের সাহায্য চেয়ে থাকলে তাদের সাহায্য করা উচিত।”
শিখাদেবী বলেন, “শিশু দু’টিকে ফিরে পেতে তাদের মা আমাদের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। গত ৫ অগস্ট ন্যাশনাল কমিশন অফ প্রোটেকশন ফর চাইল্ড রাইটস-এর পাঁচ জনের একটি দল দিল্লি থেকে বর্ধমানে আসে। শিশু দু’টির অবস্থা নিয়ে তাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করি। ৯ অগস্ট কুলটির বাড়িতে গিয়ে তাদের দেখেও আসি। অত্যন্ত অনাদর ও অবহেলায় রয়েছে তারা। কোনও ভাষা জানে না। তাদের মায়ের হেফাজতে চেয়ে আমরা জেলা জুভেনাইল আদালতে আবেদন জানাই। সেই রায় বৃহস্পতিবারই আমাদের হাতে আসে।” শিশু দু’টির ঠাকুর্দা অজয় ভট্টাচার্য পাল্টা বলেন, “নরওয়ের আদালত নির্দেশ দিয়েছে, ওরা ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত কাকার হেফাজতেই থাকবে। ওদের কারও হাতে তুলে দিতে পারি না আমরা।”
সন্ধ্যায় কান্নায় ভেঙে পড়ে সাগরিকা ফের দাবি করেন, “আমার ছেলেমেয়ের কোনও যত্ন হচ্ছে না। পড়াশোনার ব্যবস্থা হয়নি। এর পরে হয়তো অরুণাভাসও বিয়ে করবে। আমি থাকতেও আমার ছেলেমেয়েরা অনাথ হয়ে থাকবে?” দুপুরে কুলটির বাড়িতে গিয়ে অবশ্য দেখা যায়, অভিজ্ঞান ও ঐশ্বর্যা আপাত ভাবে সুস্থই রয়েছে। অভিজ্ঞান হেসে-হেসে ইংরেজি ছড়া শোনায়, আধো কথায় অপরিচিতের সঙ্গে আলাপ করে ঐশ্বর্যা। ফেরার সময়ে হাত নেড়ে ‘টা টা’-ও করে। দন্ত চিকিৎসক অরুণাভাসের বক্তব্য, “বিশেষজ্ঞ আনা হলেই বোঝা যাবে, ওরা কত যত্নে আছে। ঐশ্বর্যার বয়স দুই। এখনও স্কুল যাওয়ার সময় হয়নি। চার বছরের অভিজ্ঞান ‘বিশেষ শিশু’। শিশু বিশেষজ্ঞের চিকিৎসায় রয়েছে। তাঁর ছাড়পত্র পেলে তবেই তাকে স্কুলে ভর্তি করা যাবে। নরওয়ে সরকারকে কথা দিয়েছি, বিয়ে করলেও ওদের একই ভাবে যত্ন করব। দাদা অনুরূপও তাড়াতাড়ি দেশে ফিরছেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.