নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
মতাদর্শ বা দলীয় পরিচয়ের বেড়া নয়। উদার আর্থিক নীতির চাপে জেরবার সাধারণ মানুষের হয়ে সব শ্রমিক সংগঠনের ঐক্যবদ্ধ লড়াই-ই ভবিষ্যতের পথ বলে মনে করছেন প্রকাশ কারাট। নিচু তলার শ্রমজীবী মানুষের চাপই সব ট্রেড ইউনিয়নকে এক জায়গায় নিয়ে আসছে বলে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য নিরুপম সেনের মত। মনমোহন সিংহদের আর্থিক নীতির বিরুদ্ধে সব শ্রমিক সংগঠনের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের উপরেই যে তাঁরা এখন ভরসা করছেন, সিটুর রাজ্য সম্মেলনের আগে তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন সিপিএম শীর্ষ নেতৃত্ব।
হাওড়ায় সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটুর রাজ্য সম্মেলন শুরু হচ্ছে কাল, বৃহস্পতিবার। সেই উপলক্ষে দলের হাওড়া জেলা কমিটির দফতরে ‘দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার ও দেশের অর্থনীতি’ শীর্ষক এক আলোচনাসভায় মঙ্গলবার সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক কারাট বলেছেন, “সব ট্রেড ইউনিয়ন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, এটা স্বস্তিদায়ক। খুচরো ব্যবসার ক্ষুদ্র কারবার, শ্রমিকের রোজগার বা কৃষকের জমি বাঁচানোর আন্দোলন ঐক্যবদ্ধ হয়েই করতে হবে। সমাজের সব অংশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে হবে। এবং এই ক্ষেত্রে সিটু নির্ণায়ক ভূমিকা নেবে বলে আশা করি।” প্রসঙ্গত, সব দলের শ্রমিক সংগঠন মিলিত ভাবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ ধর্মঘট করেছিল। আগামী ফেব্রুয়ারিতে তারা আবার দু’দিনের সাধারণ ধর্মঘট ডেকেছে গোটা দেশে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন নিয়ে আশাবাদী হলেও সেই ধর্মঘট-অবরোধের চেনা হাতিয়ারের বাইরে তাঁরা যে বিশেষ বেরোতে পারছেন না, তা-ও কারাটদের বক্তব্যে স্পষ্ট! |
রাজ্য কমিটির বৈঠকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সূর্যকান্ত মিশ্র, নিরুপম সেন। —নিজস্ব চিত্র |
ফেব্রুয়ারির আসন্ন সাধারণ ধর্মঘটের প্রসঙ্গ তুলেই রাজ্যের প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপমবাবু এ দিন বলেছেন, “স্বাধীনতার পরে এই প্রথম উদারনীতির বিরুদ্ধে সব মতাদর্শ, সব দল পরিচালিত ট্রেড ইউনিয়ন এক হয়েছে। নীচের দিকে শ্রমজীবী মানুষের চাপই সব ট্রেড ইউনিয়নকে ঐক্যবদ্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।”
আর এই সূত্রেই কারাট জানিয়েছেন, এই নভেম্বর মাস থেকে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) বিরুদ্ধে সংসদের ভিতরে-বাইরে প্রতিবাদকে তাঁরা জাতীয় আন্দোলনের চেহারা দিতে চান। কারাটের দাবি, তাঁরা যখন ইউপিএ-১ সরকারের সমর্থক ছিলেন, সেই সময় ২০০৭ সালে হায়দরাবাদে এআইসিসি অধিবেশনে এফডিআইয়ের বিরুদ্ধে প্রস্তাব নেওয়া হয়েছিল। তার পরেই কেন্দ্রীয় সরকার সিঙ্গল ব্র্যান্ডে এফডিআই অনুমোদন করায় তাঁরা কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর দ্বারস্থ হন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে চিঠি লিখে সনিয়া তখন বলেন, দেশের খুচরো ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষা করতেই এফডিআই প্রয়োজন নেই। সেই চিঠি তাঁদের কাছে আছে বলে কারাটের দাবি।
প্রসঙ্গত, আলিমুদ্দিনে এ দিন সিপিএমের রাজ্য কমিটির দু’দিনের বৈঠক শুরু হয়েছে। যেখানে উপস্থিত রয়েছেন কারাট। বৈঠকের গোড়ায় বিমানবাবু বলেছেন, এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচন রাজ্য রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দেবে বলে তাঁরা মনে করছেন।
|