হাওড়া স্টেশন চত্বরে ট্যাক্সি-দালালদের উপদ্রব রুখতে এ বার তৎপর হল রাজ্য সরকার। সূচনা পর্বেই রেলপুলিশের হাত থেকে স্টেশন চত্বরের ট্রাফিক ব্যবস্থার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হল হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের হাতে। কাল, বৃহস্পতিবার থেকে হাওড়া স্টেশনে সব ট্রাফিক সামলাবে হাওড়া সিটি পুলিশ।
হাওড়া স্টেশন চত্বরে ট্যাক্সিচালকের যাত্রী হেনস্থা নতুন নয়। ট্রেন থেকে নেমে ট্যাক্সি পেতে অধিকাংশ যাত্রীকেই হিমশিম খেতে হয়। অতিরিক্ত ভাড়া দিলেই যেতে রাজি হয় ট্যাক্সি। অভিযোগ, কোন ট্যাক্সি যাত্রী পাবে বা কোন মালবোঝাই গাড়ি রেলের গুডস্ ইয়ার্ডে বিনা বাধায় ঢুকবে, তা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাও চলে গিয়েছিল এক শ্রেণির দালালচক্রের হাতে। প্রি-পেড ট্যাক্সি বুথ এবং মিটার ট্যাক্সি ছাড়াও চক্রটিই তৈরি করেছিল ‘ফাইল ট্যাক্সি’ নামে একটি নতুন ব্যবস্থা। তাতে প্রি-পেড বুথে না দাঁড়িয়ে দালালদের হাতে টাকা দিলেই ট্যাক্সিচালকেরা যাত্রী পেয়ে যেতেন।
কয়েক বছরে ‘ফাইল ট্যাক্সির’ বাড়বাড়ন্ত নিয়ে নানা মহলে অভিযোগ উঠছিল। অভিযোগ, অধিকাংশ গাড়ি প্রি-পেড বা মিটার ট্যাক্সির স্ট্যান্ডে না দাঁড়িয়ে ফাইল ট্যাক্সি হিসেবে চলায় যাত্রী হেনস্থা চলছিলই।
হাওড়া স্টেশনের সামনে যে ট্যাক্সি স্ট্যান্ড ঘিরে এই তোলাবাজি চলত, তার দৈর্ঘ্য ২০০ মিটার। এতদিন গঙ্গার দিকের এই অংশের ট্যাক্সিস্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণ করত রেলপুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। বাকিটা দেখত হাওড়া সিটি পুলিশ। দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ, রাত হলেই যানজটে অবরুদ্ধ হয়ে যায় গোটা স্টেশন চত্বর। ট্রেন ধরতে হিমশিম খেয়ে যান যাত্রীরা। |
গত বছর ট্যাক্সি ধর্মঘটের দিন হাওড়া স্টেশনে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। স্টেশন চত্বরে দালালরাজ রুখতে যে অন্য ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে রাজ্য, তারও ইঙ্গিত দেন। গত সোমবার তাঁর দফতরের উদ্যোগেই মহাকরণে রেলপুলিশ ও হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, স্টেশন চত্বরে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ উন্নত করতে ও যাত্রী হেনস্থা রুখতে আধুনিক মানের ব্যবস্থা প্রয়োজন। এ জন্য হাওড়া কমিশনারেটকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। রেলপুলিশকে জানানো হয়, এখন থেকে তারা শুধু স্টেশন চত্বরের আইন-শৃঙ্খলা দেখভাল করবে।
মঙ্গলবার হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডে বলেন, “আজই সরকারি আদেশের চিঠি পেয়েছি। ৮ তারিখ থেকে স্টেশন চত্বরের পুরো ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করব। আশা করি দালাল-দৌরাত্ম্য বন্ধ হবে।”
পুলিশ কমিশনার জানান, ট্যাক্সিস্ট্যান্ড চত্বরে ৫০ জনের বেশি পুলিশকর্মী থাকছেন। তিন ভাগে থাকছেন ১৫ জন অফিসার। এ ছাড়া, রাস্তার বুলেভার্ডের কাটা অংশ বন্ধ করা হবে। কিছু জায়গায় নো-এন্ট্রি করা হবে।
এ দিকে, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থেকে রেলপুলিশকে সরিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি হাওড়ার রেলপুলিশ সুপার মিলন দাস। তিনি বলেন, “সরকারি নির্দেশ পেয়েছি। আর কিছু বলার নেই।” |