পুলিশ-প্রশাসন প্রস্তাবিত নতুন রুট মানতে নারাজ পুজো উদ্যোক্তারা। আবার কাটোয়া পুরসভার প্রস্তাব দেওয়া রুট নিরাপত্তার কারণে খারিজ করেছে মহকুমা প্রশাসন। তাই তিন দিন ধরে চলা বৈঠকের শেষে নির্যাস, পুরনো রুট দিয়েই বেরোবে কার্তিক পুজোর শোভাযাত্রা বা কার্তিক-লড়াই।
সপ্তাহ দুয়েক পরেই কার্তিক পুজো। পুজোর পর দিনের শোভাযাত্রা নিয়েই মাথাব্যথা কাটোয়া প্রশাসনের। প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী, অনুমতি নিয়ে শোভাযাত্রায় যোগ দেয় ৮৬টি পুজো উদ্যোক্তা। শহরের পুরনো এলাকায় নিচুবাজার, লবণগোলা, থানা রোড, চাউল পট্টি, খড়ের বাজার, পঞ্চাননতলা, কারবালাতলা, বারোয়ারিতলা ও সিদ্ধেশ্বরীতলা দিয়ে শোভাযাত্রা বেরোয়। এ বার প্রশাসন চেয়েছিল, শহরের পুরনো বাজার এলাকার সরু রাস্তার বদলে নতুন রাস্তায় শোভাযাত্রা বেরোক। সেই মতো প্রশাসন লেনিন মূর্তি থেকে পুরভবন, সেখান থেকে সংহতি প্রেক্ষাগৃহ হয়ে টেলিফোন ময়দান, মাধবীতলা দিয়ে কারবালাতলা, বারোয়ারিতলা, নিচু বাজার পর্যন্ত শোভাযাত্রা করার জন্য পুজো উদ্যোক্তাদের কাছে প্রস্তাব দেয়। পরপর তিনটি বৈঠকেই বেশির ভাগ পুজো উদ্যোক্তা প্রশাসনের প্রস্তাবে রাজি হয়নি।
মঙ্গলবার কাটোয়া মহকুমাশাসকের অফিসে প্রশাসন, পুজো উদ্যোক্তাদের মধ্যে ফের বৈঠক হয়। সেখানে পুরসভার কাউন্সিলর হরেন্দ্রনাথ ভক্ত পুরনো রুট রেখে পঞ্চাননতলার ভিতর দিয়ে কাছারিপাড়া হয়ে টেলিফোন ময়দান, মাধবীতলা দিয়ে শোভাযাত্রা নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেয় প্রশাসন। কাটোয়ার সার্কেল ইনস্পেক্টর শচীন্দ্রনাথ পুড়িয়া বলেন, “এক দিকে সুষ্ঠু ভাবে শোভাযাত্রা ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য রুট বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সেই প্রস্তাব বদলে আমাদের কাছে যে রুট বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে, তা নিরাপত্তার কারণে মানা সম্ভব নয়।”
প্রশাসনের কর্তারা জানান, শোভাযাত্রার সময়ে শুধু মাত্র পুজো উদ্যোক্তারা ছাড়া ওই রাস্তায় বাইরের কোনও মানুষ সুষ্ঠু ভাবে কাটোয়ার কার্তিক লড়াই দেখতে পান না। এ ছাড়া কোনও রকম অশান্তি হলে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছনো অসম্ভব। গাড়ি তো দূরের কথা, হেঁটেও পৌঁছনো সম্ভব নয়। এসডিপিও (কাটোয়া) ধ্রুব দাস বলেন, “এ ছাড়াও রাস্তার উপরে থাকা কোনও বাসিন্দা অসুস্থ হলে সেখানেও পৌঁছনো অসম্ভব। সে কারণে আমরা নতুন ভাবে উদ্যোক্তাদের ভেবে দেখতে বলেছিলাম। পুজো উদ্যোক্তারা আমাদের প্রস্তাব মানতে চাইল না।”
শেষ পর্যন্ত কাটোয়ার মহকুমাশাসক আর অর্জুন জানান, শোভাযাত্রা পুরনো রাস্তা দিয়েই হবে। তবে প্রশাসনের কিছু নির্দেশ মানতে হবে। তিনি জানান, কোনও অবস্থাতেই ‘থাকা’, মূর্তি বা শোভাযাত্রার গেট ৫ ফুটের বেশি চওড়া হবে না। পাঁচটির বেশি শোভাযাত্রার গেটও থাকবে না। তাঁর কথায়, “এই নিয়মগুলো মানলে শোভাযাত্রা সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করা প্রশাসনের পক্ষে সহজ হবে।” কিন্তু পুজো উদ্যোক্তারা সভাতেই প্রতিবাদ করতে থাকেন। তাঁরা জানান, মাত্র ১৫ দিন পরে পুজো। থাকা বা মূর্তি কোনও ভাবেই ৫ ফুট চওড়ার মধ্যে রাখা সম্ভব নয়। শোভাযাত্রার গেটও পাঁচটির মধ্যে আটকে রাখা সম্ভব নয়।” কাটোয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) তরুণ হালদার সাফ বলেন, “পাঁচটির বেশি গেট রাখা যাবে না, তা লিখিত ভাবে জানাতে হবে। একই সঙ্গে আগামী বছর উদ্যোক্তারা রাস্তা বাড়ানো নিয়ে চিন্তাভাবনা করবেন বলে লিখিত আকারে জানালে তবেই শোভাযাত্রায় থাকার অনুমোদন দেবে প্রশাসন।” পুলিশ জানায়, ৯ নভেম্বর বিকেল ৪টের সময়ে কাটোয়া থানায় ফের বৈঠক হবে। সেখানে প্রশাসন-পুরসভা ও উদ্যোক্তাদের নিয়ে কো-অর্ডিনেশন কমিটি গঠন করা হবে। |