শ্রমিকের সুরক্ষা নেই, বলছে সরকারি রিপোর্ট
শ্রম আইন লঙ্ঘন হয়, বলছে খোদ সরকারি রিপোর্ট।
ন্যূনতম মজুরি থেকে নিরাপত্তা, কিছুই পান না দুর্গাপুর ও আশপাশের এলাকায় স্পঞ্জ আয়রন, ফেরো অ্যালয়, পিগ আয়রন কারখানায় গতর খাটানো শ্রমিকদের একটা বড় অংশ। রাজ্যের শ্রমমন্ত্রীও মনে করছেন, এই পরিস্থিতি মেনে নেওয়া যায় না। যদিও কার্যকর পদক্ষেপ কিছু হয়নি।
২০০৮ সালে দুর্গাপুরের আঞ্চলিক শ্রম দফতর থেকে রাজ্যস্তরে দফতরের প্রধান সচিবকে ওই সব কারখানায় শ্রম আইন লঙ্ঘন নিয়ে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল। দুর্গাপুর মহকুমার ৩৮টি কারখানার মধ্যে ১৭টি পরিদর্শন করে সেটি তৈরি করা হয়। তাতে উল্লেখ করা হয়েছিল, কারখানাগুলিতে অধিকাংশ শ্রমিক ন্যূনতম বেতন পান না। কর্মরত অবস্থায় জখম হলে ক্ষতিপূরণও মেলে না। শ্রমিকদের পরিচয়পত্র নেই। শ্রমিক কল্যাণ ও শ্রমিক স্বাস্থ্য বিষয়ক পরিকাঠামো নেই। বিপজ্জনক যন্ত্রাংশে রেলিংয়ের ব্যবস্থাও করা হয়নি। উপযুক্ত সুরক্ষার সরঞ্জাম ছাড়াই দূষণের মধ্যে কাজ করতে বাধ্য হন শ্রমিকরা। সে বছরই প্রফিডেন্ট ফান্ড দফতর থেকেও একটি সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। দেখা যায়, ২১টি কারখানায় প্রায় তিন হাজার শ্রমিক পিএফের আওতায় নেই। এমনকী কারখানায় কত জন অদক্ষ শ্রমিক কাজ করেন, তার স্পষ্ট হিসাবও দিতে পারেননি বেশ কিছু কারখানা কর্তৃপক্ষ। কেননা পাকা হাজিরা খাতা নেই। সাদা কাগজে শ্রমিকদের সাময়িক সই করিয়ে নেওয়া হয় মাত্র।
শ্রমিক সংগঠনগুলির অভিযোগ, এ রকম শ’খানেকেরও বেশি কারখানায় দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। অনেকে পঙ্গু হয়ে যান। কেউ কেউ মারাও যান। মূলত অদক্ষ শ্রমিকরাই এই সব দুর্ঘটনার শিকার। কিন্তু সব দুর্ঘটনার খবর বাইরে আসে না। সরকারি রিপোর্টেও তার পরিষ্কার ইঙ্গিত মিলেছে। বেশির ভাগ কারখানা চত্বরে ঘুপচি-ঘুপচি ঘরে গাদাগাদি করে থাকেন বিশেষত বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা থেকে আসা অদক্ষ শ্রমিকের দল। কোনও রকমে দু’বেলা পেট ভরার ব্যবস্থা তাঁদের। কাজের নির্দিষ্ট ঘণ্টা বাঁধা নেই। প্রয়োজন অনুযায়ী খাটিয়ে নেওয়া হয়। বছর তিনেক আগে অঙ্গদপুরে এঁদেরই মতো এক জনের দেহ খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল কারখানার পিছনে রেললাইনের উপর। রেলপুলিশ দেহটি উদ্ধার করে। কারখানা পরিদর্শকের দফতরের আধিকারিকরা তদন্তে জানতে পারেন, মৃত শ্রমিকের পরিবারকে যাতে ক্ষতিপূরণ দিতে না হয়, তার জন্য দেহটি রেললাইনে ফেলে দেওয়া হয়েছে। শ্রম দফতর কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। কিন্তু এ রকম বহু ঘটনাই আড়ালে থেকে যায় বলে শ্রমিকমহলের অভিযোগ।
রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর কথায়, “গত এক বছরে শ্রমিকদের তরফে প্রায় দেড়শোটি অভিযোগ জমা পড়েছে। অন্তত ১৫টি দুর্ঘটনার খবর প্রকাশ্যে এসেছে।” তিনি বলেন, “পরিবেশ মন্ত্রী দায়িত্ব নিয়েই এই এলাকায় হঠাৎ কয়েকটি কারখানা পরিদর্শন করেন। তিনিও দেখেন, অদক্ষ শ্রমিকদের প্রতারণা করা হয়। এই পরিস্থিতি মেনে নেওয়া হবে না।” শ্রমিক সংগঠনগুলিকে আরও তৎপর হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। আইএনটিটিইউসি-র বর্ধমান জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সিটু নেতাদের বোঝাপড়া ছিল। আমরা আন্দোলন করলে গায়ের জোরে বাধা দেওয়া হতো।” একই অভিযোগ আইএনটিইউসি নেতা বংশীবদন কর্মকারেরও। তাঁর কথায়, “টানা আন্দোলন হলেই মালিকপক্ষ কারখানা বন্ধের হুমকি দিত। পাশে দাঁড়াত সিটু। তাদের সঙ্গে মালিকপক্ষের আঁতাত ছিল।”
সিটু অবশ্য ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। দুর্গাপুরের সিটু নেতা তথা প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তীর দাবি, “এক মাত্র সিটুই শ্রমিকদের জন্য লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছে। সে ক্ষমতা বিরোধীদের ছিল না। এখন তার দায় আমাদের ঘাড়ে চাপাচ্ছে।” জেলা সিটু সম্পাদক দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষা করতে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তিও হয়েছে। তবে তাঁর দাবি, “মালিকপক্ষের একাংশের অসহযোগিতায় সেই সব চুক্তির সুফল পুরোপুরি শ্রমিকদের অনেকেই পাননি। আসলে মালিকেরা তাঁদের ভয় দেখান, শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলে ছাঁটাই করে দেওয়া হবে। ফলে সমস্যা পুরোপুরি মেটেনি।” তবে চাপ বাড়ায় কিছু ক্ষেত্রে কারখানা কর্তৃপক্ষ পিছু হটতেও বাধ্য হয়েছেন। যেমন কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ায় আইএনটিটিইউসি-র মধ্যস্থতায় ৯ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পেয়েছে বেনাচিতির প্রতাপাদিত্য রায় ও রানিগঞ্জের অনুপ লায়েকের পরিবার।
শ্রমমন্ত্রী জানান, কী ভাবে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনা যায়, শিল্প দফতর, পরিবেশ দফতর ও শ্রম দফতর সে ব্যাপারে একটি রূপরেখা তৈরি করবে। তার আগে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও কারখানা মালিকদের সঙ্গে বৈঠকও করা হবে। ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজ শেষ করে ফেলা হবে বলেও তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.