গুলিতে দুই যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় বিএসএফের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করল পুলিশ। রবিবার সকালে বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ৫০০ মিটার দূরে কোচবিহারের শীতলখুচির পুটিয়া বারমাসিয়া গ্রামে বিএসএফের গুলিতে মারা যান আলি আহমেদ (৩৫) ও ইমতিয়াজ মিঁয়া (২৫)। বিএসএফের বিরুদ্ধে বিনা প্ররোচনায় গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে। সরব হন গ্রামবাসী ও এলাকার বিধায়ক তথা বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন। সোমবার শীতলখুচি থানায় বিএসএফের বিরুদ্ধে পুলিশ খুনের মামলা রুজু করে।
এলাকাবাসী জানান, শনিবার রাত থেকেই কাঁটাতার লাগোয়া এলাকায় বিএসএফ-পাচারকারীদের গোলমাল চলছিল। তাদেরই একাংশ গ্রামে ঢুকেছে সন্দেহ করে রবিবার সকাল ৭টা নাগাদ বিএসএফের আট-দশ জনের দল গ্রামে ঢুকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। গোলমাল শুনে দুই ভাই বাড়ি থেকে বেরোন। এর পরই বিএসএফ গুলি চালায় বলে অভিযোগ।
বিবরণ দিতে গিয়ে এ দিন কান্না বাঁধ মানছিল না আলি আহমেদের স্ত্রী মনোয়ারা বিবি’র। তিনি জানান, ৭-৮ জন বিএসএফ জওয়ান ছুটোছুটি করছিলেন। তা দেখতে বেরিয়েছিলেন তাঁর স্বামী ও দেওর। মনোয়ারাদেবী ও তাঁর পড়শিদের ক্ষোভ, “ওদের হাতে অস্ত্র থাকলে তা বিএসএফ বাজেয়াপ্ত করতে পারল না কেন?”
কোচবিহার সদর থেকে প্রায় ১০০ কিমি দূরে কৃষিনির্ভর এই গ্রামে হাজার তিনেক বাসিন্দার থাকেন। এ দিন দেখা যায় ভাঙাচোরা টিনের চালের বাড়িতে ইমতিয়াজের মা আনুর বিবি অচৈতন্য হয়ে পড়ে। স্যালাইন চলছে। নির্বাক ইমতিয়াজের দাদা আজিদুল মিঁয়া।
ইমতিয়াজ দিল্লিতে দিনমজুরি করতেন। ঈদের ছুটিতে কাকার বাড়িতে এসেছিলেন। চোখ মুছতে মুছতে তাঁর এক বৌদি রহিমা বিবি বললেন, “দিল্লিতে পরিশ্রম বেশি হয় বলে ও বাড়িতে এলে বেলা পর্যন্ত ঘুমোত। ওই দিন ঘুম থেকে উঠতে চাইছিল না। পরে গোলমাল শুনে উঠে বাড়ির সামনে দাঁড়ায়। সেটাই কাল হল।”
পাশের ঘরে মাথা কুটছিলেন আলি আহমেদের শোকার্ত মা হালিমা বিবি। বললেন, “ছেলে গাড়ি চালাত। ভাড়া আছে বলে ঘুম থেকে উঠে রান্নার কথাও বলে। অন্য দিনের মত ব্রাশ হাতে বাড়ির সামনে গিয়েছিল। আচমকা গুলির শব্দ শুনে গিয়ে দেখি ও লুটিয়ে পড়ে আছে।”
এ দিন বনমন্ত্রী হিতেন বর্মনের সামনে ভেঙে পড়েন এলাকাবাসী। হিতেনবাবু বলেন, “আমি বিএসএফ কর্তাদের ডেকে পুলিশের সামনেই কথা বলেছি। অস্ত্র ছিনতাই রুখতে গুলি চালানোর যে যুক্তি বিএসএফ দিচ্ছে তা মানা যাচ্ছে না। দু’জন নিরস্ত্র লোককে সন্দেহ হলে ধমক দিলেই কাজ হত। বিএসএফ অন্যায় ভাবে গুলি করেছে। মুখ্যমন্ত্রীকে বিশদে জানাব। উনি যা করণীয় করবেন।”
স্থানীয় লালবাজার পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্য মহাদেব বর্মন বলেন, “যদি সন্দেহ হয়ে থাকে ওদের ধরে নিয়ে যাওয়া যেত। নিরস্ত্র দু’জনকে এ ভাবে খুন করা হবে কেন?”
জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, নিহতদের হাতে অস্ত্র ছিল বলে পুলিশও প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ পায়নি। ওই দু’জনের বিরুদ্ধে কোনও আপত্তিকর কাজের অভিযোগ পুলিশের কাছে কখনও জমা পড়েনি। কোচবিহারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিত সিংহ জানান “মৃতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে বিএসএফের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। বিএসএফের অভিযোগের ভিত্তিতেও মামলা হয়েছে। তদন্তে সব কিছু স্পষ্ট হবে।” বিএসএফের উত্তরবঙ্গের সদর দফতরের এক পদস্থ কর্তা জানান, প্রাথমিক ভাবে আত্মরক্ষা ও অস্ত্র ছিনতাই রুখতেই গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে বলে রিপোর্ট মিলেছে। গ্রামবাসী ও নিহতদের পরিবারের লোকজনের অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিভাগীয় তদন্ত হবে বলেও বিএসএফ সূত্রে দাবি করা হয়েছে। |