সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ডিসেম্বর মাস থেকে শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিংগামী দুটি রাস্তায় প্রথম বার ‘টোলগেট’ চালু করতে চলছে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ)। এরমধ্যে একটি রাস্তা হচ্ছে রোহিণী রোড, অপরটি পাঙ্খাবাড়ি রোড। এরমধ্যে ধসের কারণে বর্ষার পর থেকে বন্ধ থাকার পর সোমবার রোহিণী রোড যাতায়াতের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, চলতি মাস থেকে দুটি রাস্তায় টোলগেট চালু পরিকল্পনা থাকলেও রাস্তা দুটি পুরোপুরি সংস্কারের পরেই ওই প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। ইতিমধ্যে জিটিএ-র তরফে রাজ্য সরকারের কাছে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। দার্জিলিঙের জেলাশাসক তথা জিটিএ-র প্রধান সচিব সৌমিত্র মোহন বলেন, “রাস্তা দুটি সারা বছর রক্ষণাবেক্ষণের জন্যই টোলগেট বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রোহিণী রোডটি বন্ধ থাকার পর এদিন চালু করা দেওয়া হয়েছে। পাঙ্খাবাড়িও খোলা রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, দ্রুত রাস্তা দুটি সংস্কার করে টোলগেট চালু করতে।” সৌমিত্রবাবু জানান, সরকারি নিয়ম মেনে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই টোলগেটের দায়িত্ব একটি সংস্থাকে দেওয়া হচ্ছে। জিটিএ সূত্রের খবর, আপাতত ঠিক হয়েছে রোহিণীর মার্চেবস্তি এবং দার্জিলিং-র ঢোকার মুখে টোলগেটগুলি থাকবে। শিলিগুড়ি থেকে রোহিণী রোড হয়ে দার্জিলিং গাড়ি যাবে। প্রতিটি গাড়িকে নামতে হবে পাঙ্খাবাড়ির রাস্তাটি দিয়ে। ছোটবড় গাড়িকে প্রতিবার যাতায়াতের জন্য টোলগেটে টিকিট কেটে নির্দিষ্ট টাকা জমা করে যাতায়াত করতে হবে। দুই চাকা থেকে বড় গাড়ি, ট্রাকের ক্ষেত্রে টাকার পরিমাণ ১০ টাকা থেকে ৫০ টাকার মধ্যে রাখা হচ্ছে। সারা বছরে যে টাকা আদায় হবে তাতে রাস্তা দুটি সংস্কারের কাজ করবে জিটিএ কর্তৃপক্ষ। জিটিএ-র কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বিনয় তামাং বলেন, “প্রতিবছর ধস, বর্ষা রাস্তা দুটি বেহাল হয়ে পড়ে। রোহিণী রাস্তা তো অকেদিন বন্ধই ছিল। দুটি রাস্তা একেবারে ঝাঁ চকচকে করেই ওই ব্যবস্থা চালু হবে।” দার্জিলিং যাওয়ার সরাসরি তিনটি রাস্তা রয়েছে। তারমধ্যে মূল ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধ প্রায় দুই বছর। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, পাগলাঝোরার বিশাল ধস কবলিত এলাকার সংস্কার পুজোর আগে দুই বছর পরে ঠিক হয়েছে। এতে কার্শিয়াঙের সঙ্গে যে সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল তা পুনরায় যোগ হয়েছে। কিন্তু তিনধারিয়া নতুন ১৫০ মিটার ধস বিধ্বস্ত রাস্তার এখনও সরকারি অনুদান না আসায় ৫৫ জাতীয় সড়কটি পুরোপুরি চালু করা যাচ্ছে না বলে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার নির্মল মণ্ডল জানিয়েছেন। এই ৯৪ কিলোমিটার রাস্তা দিয়ে দার্জিলিং যাতায়াত করতে প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা সময় লাগে। সেখানে ৭৪ কিলোমিটার পাঙ্খাবাড়ি রাস্তা এবং ৮০ কিলোমিটার রোহিণীর রাস্তা দিয়ে দার্জিলিং পৌঁছাতে সময় লাগে আড়াই ঘন্টা। দুটি রাস্তাই গোর্খা পার্বত্য পরিষদের (ডিজিএইচসি) আমলে তৈরি হয়। বর্তমানে রাস্তাগুলি নবগঠিত জিটিএ-র আওতাভুক্ত। এই রাস্তাগুলি বন্ধ থাকলে বাসিন্দাদের মিরিক হয়ে দার্জিলিং যাতায়াত করতে হয়। সেখানে সময় এবং গাড়ি ভাড়া বেশি রয়েছে। ছোট গাড়িতে অন্য রাস্তায় দার্জিলিং যাত্রী পিছু ১০০ টাকা ভাড়া হলেও মিরিকের রাস্তায় ভাড়া লাগে ১৪০ টাকা। কার্শিয়াঙের বিধায়ক বলেন, “ইতিমধ্যে গত এক বছরে রোহিণীর জন্য ১৭ কোটি টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। আরও কয়েক কোটি টাকা খরচ হচ্ছে পাঙ্খাবাড়ির জন্য। টোলগেট চালু হলে আমাদের টাকার সমস্যা কিছুটা মিটবে।” |