বাংলার কথা কে বলবে মন্ত্রিসভায়, তাতেই কোপ চটে
ন্ত্রিসভার সর্বশেষ রদবদলের দিন রাষ্ট্রপতি ভবনের অশোক হলেই উঠেছিল গুঞ্জনটা। চটকল শিল্পের উপরে বড়সড় আঘাতে সেটাই এ বার অনেক গুরুতর প্রশ্ন হিসেবে উঠে এল সামনে। তা হল, বাংলার কথা কে বলবে দিল্লিতে?
প্রণব মুখোপাধ্যায় রাইসিনা হিলসে। ইউপিএ ছেড়েছে তৃণমূল। হালে পশ্চিমবঙ্গের যে তিন জন মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেয়েছেন, তাঁরা কেউ পূর্ণমন্ত্রী নন। ফলে কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট বৈঠকে এ রাজ্যের এক জনও প্রতিনিধিও থাকছেন না। আর সেই সুযোগেই চিনি প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক চটের ব্যাগের ব্যবহার এক ধাক্কায় ৬০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব পাশ হয়ে গিয়েছে। কার্যত চাপ দিয়েই তা অনুমোদন করিয়ে নিয়েছে কৃষি ও বস্ত্র মন্ত্রক। সন্দেহ নেই পশ্চিমবঙ্গের চট শিল্প এতে বড় রকমের ধাক্কা খাবে।
চট শিল্প বাঁচিয়ে রাখার জন্যই ১৯৮৭ সালে জুট প্যাকেজিং মেটেরিয়ালস আইন পাশ করেছিল কেন্দ্র। সেই আইন মোতাবেক প্রতি বছর মন্ত্রিসভার বৈঠকে স্থির করা হয়, খাদ্যশস্য ও চিনি প্যাকেজিংয়ে কত শতাংশ ক্ষেত্রে চটের ব্যাগ ব্যবহার করা হবে। সরকারি সূত্রে খবর, ফি বছরই কৃষি মন্ত্রকের তরফে চাপ থাকে চটের ব্যাগের বাধ্যতামূলক ব্যবহার কমানোর। এ ব্যাপারে চিনি উৎপাদক গোষ্ঠী, প্লাস্টিক ব্যাগ উৎপাদক গোষ্ঠী-র পাশাপাশি এনসিপি সভাপতি তথা খোদ কৃষিমন্ত্রী শরদ পওয়ার বারবার চাপ দিয়েছেন। চাপ তৈরি করতেন বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মাও। কিন্তু কেন্দ্রে অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন বরাবর সেই দাবিতে আপত্তি জানিয়ে তা রুখে দিতেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। একই ভাবে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধি হিসেবে আপত্তি জানাতেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সিও।
গত বছর মন্ত্রিসভার বৈঠকে চটের ব্যাগের ব্যবহার কমানোর ব্যাপারে আপত্তি করেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা দীনেশ ত্রিবেদী। শরিক তৃণমূলে আপত্তিতে শেষ পর্যন্ত চিনি প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে চটের ব্যাগের বাধ্যতামূলক ব্যবহার ১০০ শতাংশ করতে বাধ্য হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। বাংলার কোনও প্রতিনিধি (পড়ুন পূর্ণমন্ত্রী) না থাকায় এক ধাক্কায় তা ৪০ শতাংশ হয়ে গেল এ বার। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে চটকলের সঙ্গে যুক্ত আড়াই লক্ষ শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের বিপদে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হল। চটকল মালিকদের মতে, তাঁদের প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হতে চলেছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এবং ইউপিএ-র সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর হস্তক্ষেপ দাবি করে ইতিমধ্যেই চিঠি দিয়েছেন ভারতীয় জুট মিল অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সঞ্জয় কাজারিয়া। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মানস ভুঁইয়া আজ কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রী আনন্দ শর্মার সঙ্গে দেখা করেন। তিনি অবিলম্বে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
বস্ত্র মন্ত্রক অবশ্য ভিন্ন যুক্তি দিচ্ছে। তাদের বক্তব্য, খাদ্যশস্য ও চিনি প্যাকেজিংয়ে চলতি আর্থিক বছরে ১৪ লক্ষ টন চট প্রয়োজন। কিন্তু হিসেব বলছে ১১ লক্ষ টনের বেশি উৎপাদনই করতে পারবে না চট কলগুলি। সেই কারণেই চিনির ক্ষেত্রে চটের ব্যাগের ব্যবহার ৬০ শতাংশ কমানো হয়েছে। খাদ্যশস্য প্যাকেজিংয়ে তা কমানো হয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ।
কিন্তু চট নিয়ে এই চাপানউতোরের মধ্যে মূল একটি বিষয় স্পষ্ট, মনমোহন সিংহ, সনিয়া গাঁধীরা মত না পাল্টালে, মন্ত্রিসভার বৈঠকে এমনই প্রতিনিধিহীন থেকে যাবে বাংলা। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.