বৃষ্টিতে আশঙ্কা আউশে, লাভ আমনে
বহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন চাষিরা। মাঠে পড়ে রয়েছে পাকা ধান। আর সকালে উঠে আকাশের মুখ দেখছেন চাষিরা। আকাশের মতোই চাষিদের মুখও গোমড়া। কুয়াশা আর বৃষ্টির জেরে ভালোয় ভালোয় ধান ঘরে তোলা যাবে কি না, সংশয়ের মেঘে আচ্ছন্ন রাঢ় বাংলার চাষিদের মন।
নিম্নচাপ অক্ষরেখার প্রভাবে শীতের শুরুতে দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে গত কয়েকদিন ধরে ঝিরঝিরে বৃষ্টি হচ্ছে। ধান চাষের শুরুতে বৃষ্টির অভাব ভুগিয়েছে চাষিদের। এখন মাঠের সবুজ সোনালি রঙ ধরার সময়, সেই বৃষ্টি এসে চাষিদের ফের উদ্বেগে ফেলে দিয়েছে। তাঁদের কাছে এ যেন পাকা ধানে মই দেওয়ার মতো অবস্থা। কৃষি দফতর অবশ্য জানিয়েছে, মাঠে পড়ে-থাকা ধানের এখনই ক্ষতির খুব সম্ভাবনা নেই। তবে শীঘ্রই আবহওয়ার পরিবর্তন না হলে চাষিদের কপালে দুঃখ রয়েছে।
বেহাল বিষ্ণুপুরের রসিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড। ছবি: শুভ্র মিত্র।
পুরুলিয়া কৃষি দফতর সূত্রের খবর, শনিবার থেকে জেলা জুড়ে মেঘলা আবহাওয়া। কখনও ঝিরঝিরে বৃষ্টি হচ্ছে, কখনও বা বেশি জোরে বৃষ্টি নামছে। তাতেই গত কয়েকদিনে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১২-১৪ মিলিমিটার। সোমবার অবশ্য বৃষ্টির তেজ কিছুটা বেড়ে গিয়েছিল। আউশ ধান সাধারণত এ জেলায় বাইদ অর্থাৎ উঁচু জমিতে আগে চাষ করা হয়। কয়েক দিন পরে নিচু জমিতে চাষ শুরু হয়। বাইদ জমির ধানও আগে কাটা শুরু হয়। জেলার ২ লক্ষ ৮০ হাজার হেক্টর কৃষি জমির মধ্যে ৯২ শতাংশ জমিতে এ বার ধান চাষ হয়েছে। আর এই জেলার বেশির ভাগ জমিই বাইদ। ফলে জেলার অধিকাংশ জমির ধান কাটা শুরু হয়েছে। অনেক জমিতে কাটা ধান পড়ে রয়েছে। এই অবস্থায় বৃষ্টি নামায়, জমিতে কাটা ধান কাদায় নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় করছেন চাষিরা।
রঘুনাথপুর ২ ব্লকের চাতরমহুল গ্রামের চাষি মনোজিত মাহাতোর কথায়, “কিছু ধান ঘরে তুলেছি। বাকিটা মাঠেই পড়ে রয়েছে। এই বৃষ্টিতে মাঠে পড়ে থাকা ধানের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল।” কাশীপুর ব্লকের পাড়াশোল গ্রামের যুধিষ্ঠির মাহাতো বলেন, “সোমবার বিকেলে ভরা শ্রাবণের মতোই বৃষ্টি হল। অনেক ধান মাঠে পড়ে রয়েছে। মাঠ থেকে ধান তুলতে পারবো কি না জানি না।” হুড়া ব্লকের করণডি গ্রামের চাষি ফাল্গুনী মাহাতোর দাবি, ইতিমধ্যেই তাঁর ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। তাঁর কথায়, “ধান কাটা চলছিল। কিছু ঘরে তুলেছি, কিছু মাঠে পড়ে রয়েছে।
ফসল বাঁচানোর চেষ্টা। পুরুলিয়ায় প্রদীপ মাহাতোর তোলা ছবি।
দু’জায়গাতেই ক্ষতি হয়ে গেল। বাড়ির খামারে মজুত করে রাখা ধান জল-কাদায় মাখামাখি হয়ে গিয়েছে। ওই ধান নিয়ে কী করব ভেবে পাচ্ছি না।” বাঁকুড়া জেলাতেও একই ছবি। পাত্রসায়রের করজবুনি গ্রামের কালো বাগদি, স্বপন বাগদিদের আক্ষেপ, “মাঠে স্বর্ণ ধান কাটা অবস্থায় রাখা আছে। এলাকায় বহু চাষিরই এক অবস্থা। আরও কয়েক দিন বৃষ্টি চলতে থাকলে ধান পচে যাবে মনে হয়।” কৃষি দফতরের পুরুলিয়ার উপ অধিকর্তা অশ্বিনীকুমার কণ্ডু বলেন, “সামান্য বৃষ্টি হলে ক্ষতি হত না। কিন্তু কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি চলায় চাষিদের ক্ষতির সম্ভাবনা বেড়ে গিয়েছে। তবে যে সব জমিতে ইতিমধ্যেই ধান কাটা হয়ে গিয়েছে, সেই জমির মাটি ভিজে যাওয়ায় গম চাষ শুরু করার পক্ষে ভালো হল।”
বাঁকুড়া জেলায় অবশ্য আউশ ধানের চাষ হয়েছে ১৬ হাজার হেক্টর। আর আমনের চাষ হয়েছে ৩ লক্ষ ৫১ হাজার হেক্টর। এখনও মাঠে রয়েছে আমন ধান। ফলে এই বৃষ্টি আমন ধানের খেতে জলের ঘাটতি মেটাবে বলেই মনে করছেন বাঁকুড়ার উপ কৃষি অধিকর্তা অনন্তনারায়ণ হাজরা। বাঁকুড়া জেলা আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, শনি-রবিবার দু’দিনে এই জেলায় বৃষ্টি হয়েছে ৭.৩ ও ৯.৮ মিলিমিটার। সোমবার সকাল পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৬.২ মিলিমিটার। এই বৃষ্টিকে চাষের সহায়ক বলেই আখ্যা দিচ্ছে কৃষি দফতর। অনন্তনারায়ণবাবু বলেন, “জলের অভাব ছিল আমন চাষে। ফলন মার খাওয়ার সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছিল। এই বৃষ্টি সেই সম্ভাবনা দূর করল।” তিনি জানান, বৃষ্টির জন্য ফুলকপি ও বাঁধাকপির ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। মাঠে কাদা থাকায় আলু, সর্ষে ও ডালের মতো রবি ফসল চাষ কিছুটা পিছিয়ে যেতে পারে। তবে এই বৃষ্টিতে মাটিতে রসের জোগান হওয়ায় আখেরে রবি চাষেরই ভালো হল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.