সম্পাদক সমীপেষু...

কবি-প্রয়াণ প্রসঙ্গে
শুধুই দিদির ভোলবদলের কথা?
‘কবির মৃত্যু’ আর ‘দিদির ভোলবদল’ দুটি আলোচনাই অব্যর্থ বাস্তব। তবুও খ্যাতনামা সাহিত্যিকের প্রয়াণের সংবাদের সঙ্গে (২৬-১০) ওই দুটি সংবাদকে লগ্ন করার প্রয়াস যথেষ্ট অশোভন, পীড়াদায়ক।
মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘অন্ত্যেষ্টির দখল’ নেন, তাকে তীব্র শ্লেষে বিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ, এই মমতাই আগে ‘সৌজন্যে’র পরোয়া না-করে শিশু-কিশোর অ্যাকাডেমির সভাপতির পদ থেকে সুনীলকে সরিয়ে বসিয়েছিলেন নিজের ঘনিষ্ঠ এক বিশিষ্টকে। এই মমতারই চালু করা সরকারি খেতাব ‘বঙ্গবিভূষণ’-এর প্রাপক হিসাবে বিবেচিত হয়নি সুনীলের নাম। অতএব মমতার সে দিনের ‘ভোলবদল’ ‘অশোভন, দৃষ্টিকটু মনে হয়েছে...’। হতেই পারে।
কিন্তু বেঁচে থাকতে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় যে কতটা ‘মমতাবিরোধী’ এবং ‘বুদ্ধপন্থী’ ছিলেন তা প্রমাণে ২০০৭-এ ছাপা (আনন্দবাজার পত্রিকায়) যে দুটি লেখার নির্বাচিত অংশ পুনর্মুদ্রণ করা হয়েছে, সেখানে অনাগত (তৃণমূল) সরকারের কথা ভেবে সুনীলবাবু তাঁর ‘বিবমিষা’ উদ্রেকের কথা বলেছেন। এবং ঘটনাক্রমে সেই বিবমিষা-উদ্রেককারী শক্তিই বামফ্রন্টের ‘বিকল্প’ হয়ে ‘ক্ষমতা’য় বসেছে। এ হেন সরকার ‘শিশু-কিশোর অ্যাকাডেমির সভাপতির পদ থেকে সুনীলকে সরিয়ে’ দেওয়ার আগেই তো তিনি ‘ঘৃণাভরে’ ওই পদ থেকে ইস্তফা দিতে পারতেন। সেই সরকার সুনীলবাবুকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ দেয়নি বলে ক্ষোভ কেন? সুনীলবাবুই বা তার প্রত্যাশী হবেন কেন? তাঁর তো ওই সম্মান প্রত্যাখ্যান করারই কথা।

কবির মৃত্যুতে রাজনীতি
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাজনীতির কারবারিদের এই নির্লজ্জ দাপাদাপি মোটেই কাম্য ছিল না। মৃত্যু নিয়ে নিজেদের আখের গোছাবার জন্য রাজনীতিকদের মাতামাতি পশ্চিমবঙ্গ এর আগেও দেখেছে। আরও এক বার নগ্ন ভাবে তা প্রকাশ পেল। প্রতিহিংসায় উন্মত্ত হয়ে যাঁরা এক দিন তাঁর মতো একজন প্রথিতযশা কবি ও ঔপন্যাসিককে শিশু-কিশোর অ্যাকাডেমির সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেন, কয়েক ডজন বঙ্গভূষণ, বিভূষণের মধ্যেও যাঁর ঠাঁই হয় না, তাঁরাই তাঁর মৃত্যু নিয়ে কী অবলীলায় কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন করে গেলেন!
বইমেলায় দেখা হল: কেমন আছেন সুনীলদা
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে যে আমার বিশেষ পরিচয় ছিল, তা নয়। আমার মনে হয়, আমি ওঁর মুখচেনা ছিলাম। যখন যেখানে দেখা হত হাসি বিনিময় হত। আমি বলতাম, সুনীলদা কেমন আছেন? উনি বলতেন, ভাল আছি। তুমি কেমন আছ? বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও বিভাগে হয়তো বক্তৃতা দিতে এসেছেন, স্টাফ রুমে দেখা হল, কুশল বিনিময় হল। বইমেলায় দেখা হল, কেমন আছেন সুনীলদা? ভাল। তোমার খবর কী ভাই? এমনই সব কথাবার্তা। ওঁকে নিয়ে দুটো স্মৃতি আমার মনে জ্বলজ্বল করছে। আশির দশক। ভুবনেশ্বর থেকে সপরিবার কলকাতা ফিরছি। ট্রেনে উঠছি। কামরায় সুটকেস তোলার সময় আমার স্বামীর পকেটমার হয়ে গেল। প্যান্টের পকেট থেকে চুরি গেল মানিব্যাগ। নতুন সমস্যা, নতুন করে টিকিট কাটতে হবে। ছেলে-সহ আমাদের তিন জনের পুরো টিকিট কাটার মতো টাকা তখন সঙ্গে ছিল না। সুনীলদাও ছিলেন সেই কামরায়।
চেঁচামেচি, টিকিট চেকারের সঙ্গে কথাবার্তা শুনে তিনি তাঁর কুপ থেকে বেরিয়ে, আমাদের কুপে এসে টিকিট কাটার জন্য টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিলেন। বললেন, কোনও চিন্তা নেই। নতুন টিকিট কেটে নিন। কলকাতা ফিরে সুযোগমতো টাকাটা দিয়ে দেবেন। সেই কামরায় আর এক জন পরিচিত ছিলেন। তিনিই টাকা দিয়ে দিলেন। সুনীলদার কাছ থেকে টাকাটা নেওয়ার দরকার হয়নি। কিন্তু উনি যে দিতে চেয়েছিলেন, সে কথা আজও ভুলিনি।
ইদানীং ওঁকে সাহিত্য অকাদেমির নানা অনুষ্ঠানে দেখতাম। উনি তো অকাদেমির সভাপতি। আমাদের গর্ব। এক বার রামকুমারবাবু ওঁর সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিতে গেলেন। উনি বললেন, ওঁকে তো আমি চিনি। আমি আশ্চর্য হলাম। ধন্য হলাম। আমার একটা অনূদিত গল্পের বই ওঁকে উপহার দিয়েছিলাম। ইচ্ছে ছিল, ওঁর মতামত চাইতে এক দিন যোগাযোগ করব। তা আর হল না।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.