২০০৮ সালে আগে তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন পরিবর্তনের কথা বলে। কিন্তু চার বছরে বদলে গিয়েছে পরিস্থিতি। এখন পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি তাঁরই প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রোমনির মুখে। বস্তুত, আজ রোমনি তাঁর আঠারো মাসের নির্বাচনী প্রচার শেষ করলেন বদলের প্রতিশ্রুতি দিয়েই। বা বলা ভাল, বদলের প্রলোভন দেখিয়ে।
প্রতিদ্বন্দ্বী তাঁর স্লোগান কেড়ে নেওয়ার পরে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বক্তব্য, রোমনি পাক্কা ‘সেলসম্যান’। পরিবর্তনের লেবেল সেঁটে নতুন বোতলে পুরনো মদই বিক্রির চেষ্টা করছেন তিনি। নির্বাচনী প্রচারের শেষ প্রহরেও দিনভর প্রেসিডেন্ট বনাম চ্যালেঞ্জারের এ হেন উত্তপ্ত তরজার আঁচ পোহাল স্যান্ডি-বিধ্বস্ত আমেরিকা।
সোমবার রাত পোহালে আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তাকে ঘিরে গত ক’দিন ধরে তাই প্রচার তুঙ্গে। তবে এর মধ্যেই হারিকেন স্যান্ডি আছড়ে পড়ায় কিছুটা হলেও ভাটা পড়েছিল সেই তোড়জোড়ে। কিন্তু রাজনীতির কারবারিদের একাংশের মত, স্যান্ডির ফলে যতই ক্ষতিগ্রস্ত হোন নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সির বাসিন্দারা, আসল ফুটেজ পেয়ে গিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তবে একই সঙ্গে তাঁরা বলছেন, যে ভাবে স্যান্ডি-পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন ওবামা, তাতে রোমনির থেকে সামান্য হলেও ওবামার এগিয়ে থাকারই কথা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট যে সেই সুবিধা পেয়েছেন, বিভিন্ন সমীক্ষায় তা ধরাও পড়েছে। |
তবে সব ক্ষত এখনও সারানো সম্ভব হয়নি। এখনও খোদ নিউ ইয়র্কে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ ঘরছাড়া। বহু জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। এর মধ্যেই মঙ্গলবার ভোট দিতে বেরোবেন নিউ ইয়র্কের বাসিন্দারা। এবং বুধবার আমেরিকায় আছড়ে পড়তে চলেছে আরও একটি ঝড়। যদিও এমন অবস্থাতেও নিজেদের শেষ প্রচারে এতটুকুও খামতি দিতে রাজি নন ওবামা বা রোমনি।
শেষ দফার প্রচারে প্রথমে উইসকনসিন এবং তার পরে ওহায়োতে বৈঠক করার কথা মার্কিন প্রেসিডেন্টের। তাঁর তাঁর প্রচার শেষ আইওয়ার দে ময়নেস-এ। অন্য দিকে, রোমনির দিনভর সফরের তালিকায় রয়েছে ফ্লোরিডা, ভার্জিনিয়া এবং তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ওহায়ো-ও। আসলে, নির্বাচনী ইতিহাস বলছে, ওহায়ো অন্যতম ‘সুইং স্টেট’। তাই সে দেশের জনমতকে নিজের পক্ষে আনতে শেষ বেলাতেও চেষ্টার অন্ত নেই ওবামা-রোমনি দু’জনেরই।
তবে সব মিলিয়ে নির্বাচনী প্রচারের শেষ অঙ্কে নতুন কিছুই শুনতে পেল না মার্কিন জনতা। মোটামুটি গত তিনটি ‘প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট’-এ ঠিক যে সুরে কথা বলেছেন রোমনি, এ দিনও সেই সুরই বজায় রাখলেন। বললেন, “আপনারা দেখেছেন গত চার বছরে দেশের কী হাল হয়েছে। আপনারা ভেবেছিলেন নিজের প্রতিশ্রুতি পূরণ করবেন ওবামা....। কিন্তু তিনি তা করেননি। আমি করব।” একই সঙ্গে নাটকীয় ভাবে ঘোষণা করেন ‘প্রথম দিন’ থেকেই আমেরিকায় প্রকৃতার্থে পরিবর্তন নিয়ে আসবেন তিনি। |
আর ওবামা? রোমনির বিরুদ্ধে ফের তোপ দেগেছেন এ দিন। তবে বাঁকা সুরে। বলেছেন, “আদপে গভর্নর রোমনি যা বলতে চান, তা হল... আমার দিকে তাকান। আমায় বেশ প্রেসিডেন্টসুলভ দেখতে। আমি কথাও বলতে পারি বেশ ভাল। আর আমায় নির্বাচিত করলে সমস্ত সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে।” তিনি মনে করান, যে নীতির জেরে ধস নেমেছিল মার্কিন অর্থনীতিতে, সেই নীতিকেই ফিরিয়ে আনতে চান রোমনি।
অর্থনীতির প্রসঙ্গ অবশ্য গত তিনটি বিতর্কেই বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে। চ্যালেঞ্জার রোমনি যেমন দেশের অর্থনীতির বেহাল দশার জন্য সরাসরি কাঠগড়ায় তুলেছেন ওবামাকে। তেমনই ওবামা সমর্থকদের দাবি, যে সময়ে তিনি দেশের হাল ধরেছিলেন তিনি, তখন বেকারত্ব বাড়ছিল অবিশ্বাস্যরকমের। তা থেকে ওবামা দেশকে টেনে তুলেছেন। এর সঙ্গে ওবামা আবার ‘রোমনিনমিক্সকে’ও এক হাত নিয়েছেন। তাঁর মতে, রোমনির রাজস্ব কমানোর অর্থনীতিতে আসলে লাভবান হবেন ধনীরা। মধ্যবিত্তদের জন্য সেখানে আদৌ জায়গা নেই। |
ভোট দিন। ভোট দিয়েই প্রতিশোধ নেওয়া যায়।
বারাক ওবামা |
প্রতিশোধ নিতে নয়, দেশকে ভালবেসে ভোট দিন।
মিট রোমনি |
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য গঠিত হবে ইলেক্টোরাল কলেজ। প্রতিটি প্রদেশের
জনসংখ্যার উপরে নির্ভর করে ইলেক্টোরাল কলেজে সেই প্রদেশের ভোটের সংখ্যা। |
ইলেক্টোরাল ভোট: ৫৩৮
জিততে চাই: ২৭০ |
ডেমোক্র্যাট ঘাঁটি
ওয়াশিংটন, ক্যালিফোর্নিয়া, নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সি |
রিপাবলিকান ঘাঁটি
টেক্সাস, কানসাস, আরকানসাস, নর্থ ডাকোটা |
|
বিদেশ নীতির ক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধাজনক জায়গায় রয়েছেন ওবামা। মূলত লাদেন-নিধনের সাফল্যই তাঁর ইউএসপি হয়ে উঠতে পারে। প্যালেস্টাইন নিয়ে গোঁড়া মনোভাব, মুদ্রানীতির কারচুপি নিয়ে চিনকে কাঠগড়ায় দাড় করানো সব মিলিয়ে যেন কিছুটা ব্যাকফুটেই পড়ে গিয়েছেন রোমনি। অন্তত সমীক্ষা রিপোর্ট তাই বলছে। আপাতত তাই পরিবর্তনের জিগির তুলেই নির্বাচনের ঠিক আগে ‘লাইমলাইট’ কাড়তে চাইছেন রোমনি। যদিও শাসনক্ষমতা হাতে এলে আদৌ কতটা পরিবর্তন হবে, তা নিয়ে আশঙ্কা রয়েই যাচ্ছে। |