এনবিএসটিসি
টানা সঙ্কটে হতাশার গ্রাসে পেনশনভোগীরা
শীর্ণ চেহারা, চশমার ভেতর দিয়েও বেশ বোঝা যায় চোখ গর্তে বসে গিয়েছে। মেয়ের বিয়ে কী ভাবে হবে সে চিন্তা কল্পনা সরকারের রাতের ঘুম কেড়েছে।
রতন বিশ্বাসের মাথাব্যথা তাঁর একমাত্র মেয়ের পড়াশোনা। স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী মেয়ের পড়ার খরচের কিছুটা দেন তাঁর এক আত্মীয়া।
ত্রিভুবন তেওয়ারি। তাঁর ছেলে তেমন কিছু রোজগার করে না। সেই সংসারের খরচও দিতে হয় তাঁকে। নাতি-নাতনির দুধের খরচও জোটাতে হিমশিম খান তিনি। ভাড়া বাড়ির মালিক সদয় না হলে পথে বসতে হত।
জলপাইগুড়ি শহরের ওই বাসিন্দারা উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার পেনশনভোগী। বছর খানেক ধরে অর্ধেক পেনশন পেয়ে কোনও মতে সংসার চালাচ্ছেন। তিন মাস ধরে সেই অর্ধেক পেনশনও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। উত্তরবঙ্গ জুড়ে সংস্থার প্রায় ২৭০০ জন পেনশনভোগী রয়েছেন। সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, সকলকে পেনশন দিতে মাসে আড়াই কোটি টাকা প্রয়োজন হয়। কিন্তু, এখন কেউই পেনশন পাচ্ছেন না। অন্যদের মতোই জলপাইগুড়ির ৩ বৃদ্ধ-বৃদ্ধার দিন কাটছে চরম আর্থিক সঙ্কটে। জলপাইগুড়ির বামনপাড়ার বাসিন্দা কল্পনাদেবীর স্বামী মেকানিকাল বিভাগের কর্মী পরমেশবাবু ২০০৪ সালে অবসর নেন। ২০০৭ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। স্বামীর মৃত্যুর পরে কল্পনা দেবীই পেনশনের প্রায় ৪৫০০ টাকা পাচ্ছিলেন। গত বছরের নভেম্বর থেকে সেই পেনশন অর্ধেক হয়ে হাজার দুয়েক টাকায় দাড়িয়েছে। চলতি বছরের জুলাইয়ের পর থেকে পেনশন পুরোপুরি বন্ধ। যা কিছু জমানো টাকা ছিল তাঁর নিজের চিকিৎসার জন্য খরচ হয়েছে। মেয়ের বিয়ের কথা ভেবে এখন ওষুধ কেনাও বন্ধ করে দিয়েছেন। কল্পনা দেবী বলেন, “যা হাজার দুয়েক টাকা পেনশন পেতাম সেটাও তিন মাস বন্ধ। মেয়ের বিয়ের বয়স হয়ে গিয়েছে। বিয়ের টাকা জমাতে হবে। তাই শরীর খারাপ থাকলেও চিকিৎসকের কাছে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। ওষুধও কিনি না।”
শহরের নিউ সার্কুলার রোডের বাসিন্দা টেকনিকাল কর্মী রতনবাবু ২০০৯ সালে অবসর নিয়ে লাখ দুয়েক টাকা দিয়ে জমি কিনেছিলেন। ভেবেছিলেন গ্র্যাচুইটির টাকা দিয়ে বাড়ি করবেন। সে টাকা তিনি পাননি। দশ হাজার টাকা পেনশনের অর্ধেক ৫ হাজার টাকা কিছু দিন পেয়েছেন। এখন বন্ধ। কেনা জমিতে দরমা বেড়ার ঘর তৈরি করে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে থাকার ব্যবস্থা করেছেন। রতনবাবুর কথায়, “পেনশন বন্ধ হয়ে রয়েছে। দু বেলা খাওয়ার জোটাতে হিমশিম খাচ্ছি। মেয়ের পড়াশোনার খরচও দিতে পারি না। ভাগ্যিস আমার বড় শ্যালিকা মেয়ের পড়ার খরচের একটা বড় অংশ দিয়ে দেয়। না হলে পড়াশোনাই বন্ধ হয়ে যেত।”
কর্পোরেশন রোডের ত্রিভুবনবাবুর সংসারের কিছুটা সামলে দেন তাঁর বাড়ির মালিকই। পেনশন অর্ধেক হয়ে সাড়ে তিন হাজারে দাড়িয়েছে। ত্রিভূবন বাবুর স্ত্রী শান্তি দেবী বলেন, “এক ছেলে। তেমন কিছু করে না। দুই নাতি-নাতনি আছে। তাদের দুধের খরচ জোগাড় করতে পারি না। আমার নিজের অসুখ। প্রতি মাসে হাজার টাকার ওষুধ লাগে।” প্রায় ৩৫ বছর এনবিসটিসিতে চাকরি করা ৬৫ বছরের ত্রিভুবন বাবু বলেন, “কী আর করব! সেপ্টেম্বর মাসে ধার দেনা করে নাতি-নাতনির দুধের প্যাকেট, চাল-ডাল-নুন কিনেছি। এখন ধারে স্ত্রীর ওষুধ কিনছি। বাড়ির মালিক চাল-আটা ধারে কিনে দেন। এত দিন চাকরি করে এর বেশি কিছু জুটল না।”
উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর সি মুরুগন বলেন, “পেনশনের নথিতে বিস্তর গোলমাল থাকায় পেনশন আটকে যায়। পেনশন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য অর্থ দফতর থেকে চেয়ে পাঠানো হয়েছিল। সেই মতো পুজোর আগে একটি রিপোর্ট পাঠানো হয়। আশা করি শীঘ্রই সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.