|
|
|
|
সাংসদকেই শোধরাতে হবে তাঁর ভুল, দাবি হলদিয়ায় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া |
এবিজি-কে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব শুভেন্দু অধিকারীকেই নিতে হবে বলে দাবি উঠল হলদিয়ায়। সংস্থার কাজ হারানো কর্মীদের বক্তব্য, মূলত যাঁর জন্য হলদিয়া ছেড়েছে এবিজি, তমলুকের সেই তৃণমূল সাংসদই তাদের ফিরিয়ে আনুন। শুধরে নিন নিজের ভুল।
এবিজি-বিদায়ের ফলে কাজ হারাতে বসেছেন ৩৭৫ জন শ্রমিক। শুভেন্দুকে দুষে গত ক’দিন ধরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাঁরা। বৃহস্পতিবারও তাতে ইতি পড়েনি। এ দিন সকাল থেকেই সুতাহাটার নন্দরামপুরে রাজ্য সড়কের ধারে ওই শ্রমিকরা দফায় দফায় বিক্ষোভ-মিছিল করেন। চলে অবস্থানও। গঠিত হয়েছে ‘হলদিয়া ডক শ্রমিক ঐক্য সংগ্রাম কমিটি’। এই কমিটির ব্যানারেই কাজ হারানো শ্রমিকরা লাগাতার শুভেন্দু-বিরোধী আন্দোলন চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জানা গিয়েছে, সংগঠনটির পিছনে পরোক্ষে মদত দিচ্ছে তৃণমূলেরই একটি অংশ। তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে সিপিএম-ও।
বুধবার এবিজি হলদিয়া ছাড়ার নোটিস বন্দর কর্তৃপক্ষকে দিয়ে দেওয়ার পরে কিছু তৃণমূল নেতা আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন, কাজ হারানো শ্রমিকদের দায়িত্ব তাঁরা নেবেন। সুফিয়ার রহমান খান, শেখ রফিক, এনামুল হকের মতো আন্দোলনরত এবিজি-র কর্মীরা এ দিন বলেন, “এবিজি-কে ফিরিয়ে আনার দাবি থেকে আমরা সরছি না। যে তৃণমূল নেতারা আমাদের দায়িত্ব নেবেন বলছেন, তাঁরাই যেন এবিজি-কে ফিরিয়ে আনাতে উদ্যোগী হন।”
শুভেন্দুর বিরুদ্ধে আন্দোলন যেমন থামেনি, তেমনই থামেনি যাঁরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তাঁদের হুমকি দেওয়াও। রহিম মল্লিকের বাড়িতে পুলিশ চড়াও হয়েছে বলে আগেই অভিযোগ উঠেছিল। এ বার তাঁর ছেলেকেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। রহিমের ছেলে, বছর চব্বিশের মমতাজ বলেন, “দুর্গাচক থানার পুলিশ হুমকি দিচ্ছে তুলে নিয়ে যাবে।” পুলিশ অভিযোগ মানেনি।
বিক্ষুব্ধ এক শ্রমিক শেখ নূর আলমের কথায়, “হুমকি তো চলছেই। কিন্তু তাই বলে আমাদের আন্দোলন থামবে না। শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে মিলে যাঁরা আমাদের হুমকি দিচ্ছেন তাঁদেরই এবিজি-কে ফিরিয়ে আনতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমাদের চাকরি সুনিশ্চিত করতে হবে। তা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”
নিজেদের আইবি অফিসার বলে দাবি করে বৃহস্পতিবার বেলা সওয়া বারোটা নাগাদ নন্দরামপুরের অবস্থান মঞ্চে হাজির হন তিন জন। জানান, আন্দোলন নিয়ে তদন্তে এসেছেন। শ্রমিকদের নানা প্রশ্নও করেন তাঁরা। জানতে চান কেন এই আন্দোলন? নেতৃত্বেই বা কারা রয়েছেন?
|
আমি বলছি
|
মার্চ, ২০১০।
রানিচকে
দলীয় সভায়
এবিজি ঢুকতে পারলে তো চাকরি হবে! ক্রেন ইত্যাদি যা যা
ওরা নিয়ে এসেছে, সেগুলো পোর্টের মধ্যে নিয়ে আসব। ওদের
গেটের বাইরে থাকতে হবে। এমপি হিসেবে বলে দিলাম।
পোর্টের ট্রাস্টি কমিটির মেয়াদ ফুরোচ্ছে ৩১ মার্চ। তার মধ্যে
এবিজি নিয়ে আলোচনা হবে না। নতুন ট্রাস্টি আমরা বানাব।
আমার প্রতিনিধি থাকবে। এপ্রিলে এবিজি-র এক্সটেনশন
পিটিশনটাতে এন-ও ‘নো’ করে দেব।... স্টার্টিংটা আমি
করেছি। ফিনিশিংটা আমাকে করতে দিন। |
৩০ অক্টোবর, ২০১২।
তৃণমূল ভবনে
সাংবাদিক সম্মেলনে
এবিজি কাজ করতে না-পারলে টেন্ডারে যারা দ্বিতীয় সর্বনিম্ন
দর হেঁকেছিল, বন্দর-কর্তৃপক্ষ তাদের* কাজ দিয়ে দিন।
না-হলে নতুন করে টেন্ডার করুন। এ ব্যাপারে কলকাতা
বন্দর-কর্তৃপক্ষের ভূমিকাও যথাযথ নয়। এবিজি-কে
রাখতে চেয়ে ওঁদের এত বার আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার
প্রয়োজন কী ছিল? কলকাতা বন্দর চাইলে নিজেদের
আইন প্রয়োগ করেই ওদের চুক্তি ভঙ্গ করতে পারত।
সে
পথে না-গিয়ে অযথা জটিলতা বাড়িয়েছেন বন্দর-কর্তারা। |
(সৌজন্য: এবিপি আনন্দের
জোগাড় করা ভিডিও ফুটেজ) |
* দ্বিতীয় দর দিয়েছিল রিপ্লে অ্যান্ড কোম্পানি
এবং এক টাটা-সহযোগীর যৌথ উদ্যোগের সংস্থা |
|
শ্রমিকরা পাল্টা প্রশ্ন করায় ওই তিন জন জানান, গোপন তদন্ত করতে ডিস্ট্রিক্ট আইবি থেকে তাঁরা এসেছেন। এক শ্রমিক শেখ জাহাঙ্গির বলেন, “সেই সময়েই সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা চলে আসেন। ওঁরা জানতে চান, গোয়েন্দারা কেন এসেছেন। ‘চাকরি চলে যাবে’ এই যুক্তি দেখিয়ে সেই প্রশ্ন এড়িয়ে যান ওই তিন জন।”
এই ঘটনায় কাজ হারানো শ্রমিকদের মধ্যে চাঞ্চল্য তৈরি হয়। কারণ, আইবি অফিসারের পরিচয় দেওয়া ওই তিন জন ধূসর রঙের যে গাড়িটিতে এসেছিলেন, তাতে পুলিশের কোনও প্রতীক ছিল না। তার উপর ওই গাড়ির নম্বর (জেএইচ-১০এবি-০৩২১) পরে খতিয়ে দেখে জানা যায় যে, সেটি ঝাড়খণ্ডে নথিভুক্ত ব্যক্তিগত মালিকানার গাড়ি।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে পূর্ব মেদিনীপুরের ডিএসপি (আইবি) তপন পাত্র প্রথমে বলেন, “হলদিয়ায় আমাদের অনেকেই ঘুরছেন।” কিন্তু তাঁদের কারও সঙ্গে ঝাড়খণ্ডে নথিভুক্ত ব্যক্তিগত গাড়ি রয়েছে কি? তপনবাবুর জবাব, “খোঁজ নিয়ে দেখেছি। তবে আমাদের কোনও কর্মী সুতাহাটার ওই অবস্থান মঞ্চে যাননি।” তা হলে আইবি অফিসারের ভুয়ো পরিচয় দিয়ে কারা এলেন? তপনবাবু বলেন, “আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।”
তপনবাবু পুলিশের কাউকে অবস্থান মঞ্চে পাঠানো হয়নি বলে জানালেও শ্রমিকদের দাবি, এ দিনই সুতাহাটার এক পুলিশ এসেছিলেন। তিনি জানান, হলদিয়ার এসডিপিও অমিতাভ মাইতি তাঁকে পাঠিয়েছেন। আন্দোলনকারীদের হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের ভবনে সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে দেখা করতে হবে।
আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে শেখ সিরাজ বলেন, “এসডিপিও কেন পুলিশ পাঠিয়ে সাংসদের সঙ্গে দেখা করতে বলবেন। আমরা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে দেখা করব না।” হলদিয়ার এসডিপিও অবশ্য এমন ঘটনার কথা অস্বীকার করেছেন।
এবিজি-র কাজ হারানো শ্রমিকদের পাশাপাশি তাদের ছাঁটাই করে দেওয়া শ্রমিকেরাও এ দিন বন্দরের গেটের বাইরে রানিচকে অবস্থান আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছেন। |
|
|
|
|
|