সম্পাদকীয় ২...
অর্থমন্ত্রীর রাগ হইয়াছে
পালানিয়াপ্পন চিদম্বরম জানাইয়াছেন, প্রয়োজন হইলে তিনি একাই হাঁটিবেন। অনুমান করা যায়, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উপর তাঁহার রাগ হইয়াছে। ব্যাঙ্কের ত্রৈমাসিক সমীক্ষার পূর্বে তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করিয়া নিজের পরিকল্পনার কথা রাষ্ট্র করিয়াছিলেন: আগামী পাঁচ বৎসরে রাজকোষ ঘাটতির হার অর্ধেক করিয়া ফেলিবেন। ঘোষণার পর তিনি একটি কথা হাওয়ায় ভাসাইয়া দেন মুম্বইয়ের শহিদ ভগৎ সিংহ রোডের ঠিকানায় ব্যাঙ্কেরও উচিত সরকারের সহিত পায়ে পা মিলাইয়া হাঁটা। অর্থমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনটি যে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ত্রৈমাসিক সমীক্ষা ঘোষণার আগের দিন অনুষ্ঠিত হইল, তাহা নিতান্তই কাকতালীয়, এমন ভাবিবার কোনও অবকাশ নাই, কারণ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর দুব্বুরি সুব্বারাও অর্থমন্ত্রীর তালে তাল দিতে অস্বীকার করামাত্র অর্থমন্ত্রীর গোঁসা হইয়াছে। তিনি বলিয়া দিয়াছেন, দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার ঠিক রাখিতে যাহা করা প্রয়োজন, তেমন হইলে সব তিনি একাই করিবেন।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তাহার অধিকর্তা নহেন। অর্থমন্ত্রীর প্রকাশ্য চাপেও নতিস্বীকার না করিয়া সুব্বারাও ব্যাঙ্কের এই স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করিলেন। ব্যাঙ্কের গভর্নর রূপে তিনি তাঁহার দায়িত্বের কথা সম্যক জানেন। তাঁহার বহুবিধ কর্তব্যের মধ্যে প্রধান দুইটি মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে রাখা; দেশের আর্থিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করা। এই দুইটি কর্তব্যের মধ্যে চারিত্রিক বিরোধ রহিয়াছে, এবং পরিস্থিতিবিশেষে কোনও একটিকে অপরটির উপর স্থান দেওয়াই তাঁহার কাজ। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ঘোষিত ভাবেই মূল্যস্ফীতি লইয়া চিন্তিত। গত তিন মাসে সেই চিন্তা দূর হইবার কোনও কারণ ঘটে নাই। সুব্বারাও স্বভাবতই সুদের হার কমান নাই। তিনি ক্যাশ রিজার্ভ রেশিয়ো আরও এক দফা কমাইয়াছেন, যাহাতে বাজারে নগদের জোগান থাকে। তিনি সরকারের সহিত সহযোগিতায় নারাজ, এই কথা বলিলে নিতান্ত অনৃতভাষণ হইবে। তিনি বরং সরকারের সমস্ত বাধ্যবাধকতা মাথায় রাখিয়াই চলিয়াছেন।
গোঁসা করিবার পূর্বে চিদম্বরম ভাবুন, বৃদ্ধির হারের গতিভঙ্গ হইবার দোষটি কাহার? আজ তিনি এলপিজি-র ভর্তুকি হ্রাস, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদির মাধ্যমে ভর্তুকির বোঝা কমাইবার কথা বলিতেছেন, বিদেশি বিনিয়োগে ছাড়পত্রের মাধ্যমে দেশে পুঁজি আনিবার কথা ভাবিতেছেন। তাহাতে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি নীতিপঙ্গুত্ব ঢাকা পড়িবে কি? রাজকোষ ঘাটতি কমাইবার যে পরিকল্পনার কথা তিনি ঘোষণা করিয়াছেন, তাহা পরিকল্পনামাত্রই। তাহার উপর ভিত্তি করিয়া রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নিজেদের নীতি স্থির করিবে কেন? বিশেষত যখন ঘাটতি কমাইবার নির্ধারিত পথ হইতে বিচ্যুত হওয়ার অভ্যাস নেতাদের বিলক্ষণ আছে? লোকসভা নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়িল বলিয়া। সেই বাজারে নেতারা জনমোহন ছাড়িয়া রাজকোষ ঘাটতির কথা ভাবিবেন, এমন দুরাশা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নাই। তাহার পর নূতন সরকার আসিবে। সেখানে কোথায় চিদম্বরম আর কোথায় তাঁহার পরিকল্পনা!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.