চার দিন ধরে নিখোঁজ থাকার পরে সন্ধান মিলল চিকিৎসকের। জানা গেল, তিনি মৃত। বৃহস্পতিবার রাতে জানা যায় সোমবার, ২৯ অক্টোবর বাগবাজার ঘাট থেকে উদ্ধার হওয়া ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ দেহটি তাঁরই।
পুলিশ সূত্রে খবর, সোমবার বৃদ্ধা মাকে বাড়িতে তালাবন্ধ করে রেখে বেরোন বীরেশ্বর পাল (৬২) নামে ওই চিকিৎসক। তার পর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি। ক’দিন ধরে ওই মা-ছেলের কোনও খোঁজ না পেয়ে শেষে বৃহস্পতিবার উত্তর কলকাতার কলেজ রো এলাকার বাড়িটির সদর দরজার তালা ভেঙে ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করেন প্রতিবেশীরা।
বীরেশ্বর পাল |
এ দিকে, সোমবার রাতে স্থানীয় বাসিন্দারা ঘাটে মৃতদেহ দেখে পুলিশে খবর দেন। উত্তরবন্দর থানার পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ময়না-তদন্তের জন্য পাঠায়। পুলিশ জানায়, মৃতদেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন ছিল না। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, জলে ডুবেই মৃত্যু হয়েছে ওই ব্যক্তির।
পুলিশ জানায়, বীরেশ্বরবাবু মেডিক্যাল কলেজের ইউরোলজি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক। কলেজ রো-এর একটি ভগ্নপ্রায় দোতলা বাড়িতে বৃদ্ধা মা বীণাপাণিদেবীকে (৮০) নিয়ে থাকেন তিনি। ওই বাড়িতেই দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে পরিচারক হিসেবে রয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা প্রফুল্লকুমার বেরা। বড়বাজারের এক অফিসে কাজ করলেও বীরেশ্বরবাবুর বাড়ির কাজকর্ম সবই করেন প্রফুল্লবাবু।
পুলিশ সূত্রের খবর, ২৮ অক্টোবর দেশের বাড়িতে যান প্রফুল্লবাবু। মাকে নিয়ে একাই ছিলেন বীরেশ্বরবাবু। ৩১ অক্টোবর সকালে প্রফুল্লবাবু কলেজ রো-র বাড়িতে ফিরে দেখেন দোতলার দরজা তালাবন্ধ। তিনি বলেন, “ভাবলাম বীরেশ্বর বাইরে গিয়েছে। কিন্তু রাতেও না ফেরায় দরজার সামনে শুয়ে পড়ি।”
বৃহস্পতিবার সকালেও বীরেশ্বরবাবু না ফেরায় প্রফুল্লবাবু স্থানীয়দের ডাকেন। পুলিশ জানায়, স্থানীয়েরা ঢুকে দেখেন মেঝেতে পড়ে অসুস্থ বীণাপাণিদেবী। স্থানীয় বাসিন্দা প্রদীপ দে সরকার বলেন, “এক ঘণ্টা ধরে মাসিমাকে ডাকার পরে উনি সাড়া দেন। ওঁর কথা শুনে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করি।” পরিজনেরা জানান, রোজ হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বেরোতেন বীরেশ্বরবাবু। কিন্তু হাসপাতাল সূত্রে খবর, আট মাস আগে তিনি অবসর নেন। বীণাপাণিদেবী বলেন, “সোমবার সকালে বীরু আমাকে দুধ, বিস্কুট খাইয়ে হাসপাতালে যাবে বলে বেরোয়। আর আসেনি।”
এক পুলিশকর্তার কথায়, “বাড়ির লোক কেন অবসরের বিষয় জানেন না এবং রোজ হাসপাতালের নাম করে কোথায় যেতেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উনি মোবাইলও ব্যবহার করতেন না।” পুলিশের অনুমান, দিন চারেক ধরে খাবার-জল না পেয়ে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বীণাপাণিদেবী। তিনি বিছানা থেকে কার্যত উঠতে পারছেন না। বীরেশ্বরবাবুর মৃত্যুর তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। |