প্রসেনজিৎ, রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় বা কোয়েল ভৌমিকদের জায়গায় এ বার ঝিলিক, বাহা বা রাতুল মাস্টার।
সিনেমার বড় নাম নয়, ছোট পর্দার সিরিয়ালের চরিত্রদেরই দেখতে চান গ্রামের মানুষ। তাই পুজো, ঈদের পরে ডোমকল সহ গ্রামীণ মুর্শিদাবাদের ‘নাইট’ উৎসবে তাঁদেরই এবার চাহিদা বেশি। জলঙ্গিতে ইতিমধ্যেই সারা রাত ব্যাপী জলসায় এসেছিলেন রাতুল মাস্টার, ঝিলিক। শুক্রবার ডোমকল স্পোর্টিং মাঠে আসছেন বাহা। রানিনগর ও ইসলামপুরেও কয়েকটি ক্লাব জলসাতে তাঁদেরই ডাকবেন বলে স্থির করেছেন। কিন্তু বারবার একই মুখ দেখে ক্লান্ত হবেন না দর্শকেরা? ইসলামপুর টাউন ক্লাবের সভাপতি কাবাতুল্লা শেখ বাদশা বলেন, “রোজ টেলিভিশনের পর্দায় তাঁদের দেখে মানুষ ক্লান্ত হন না। তাই আমাদের এখানেও দেখতে চাইহেন। তা ছাড়া, সিরিয়ালের ওই চরিত্রগুলি এখন ঘরের লোকই হয়ে গিয়েছেন। এক ধরনের আত্মীয়তা বোধও তৈরি হয়েছে তাঁদের সঙ্গে। তাই তাঁদের কদর বাড়ছে।”
ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্স অ্যাসোসিয়েশন (ইমপা)-র মুর্শিদাবাদ শাখার সভাপতি অশোক জৈন বলেন, “একের পর এক সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সারা মুর্শিদাবাদে এখন খুব বেশি হলে ১৫টা সিনেমা হলে নিয়মিত সিনেমা চলে। এ ছাড়া, কিছু জায়গায় সাময়িক ভাবে সিনেমা দেখানো হয়। ফলে সিনেমার দর্শক যে কমছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।” সেই দর্শক বাড়িতে বসে কেবল চ্যানেলে বা টিভিতে বিনোদন খুঁজে নিচ্ছেন। আর সেখানেই তিনি সিরিয়ালেরও ভক্ত হয়ে উঠছেন। ডোমকলের বাসিন্দা নাসিরুদ্দিন বলেন, “সন্ধ্যা বেলা আমাদের পাড়ায় প্রায় সব বাড়িতেই যান, দেখবেন টিভিতে সিরিয়াল চলছে। শুধু এখানে নয়, সর্বত্রই একই অবস্থা।”
পিছিয়ে পড়া জেলা মুর্শিদাবাদের আরও পিছিয়ে থাকা মহকুমা ডোমকলেও কেবল অন্তত ১৫টি কেবল সংস্থা রয়েছে। কোনও সংস্থারই এক হাজারের নীচে গ্রাহক নেই। ডোমকলের একটি কেবল সংস্থার গ্রাহক সংখ্যা চার হাজারেরও বেশি। ডোমকল স্পোটির্ং ক্লাবের দেবাংশু সরকারের কথায়, “কেবল চ্যানেলের একটা বড় আকর্ষণ হল সিরিয়াল। যাঁর বাড়িতে টেলিভিশন নেই, তিনি পাশের বাড়িতে গিয়ে টিভি দেখেন। তাই এই সিরিয়ালের চরিত্রগুলির প্রতিই আকর্ষণ বাড়ছে।” |
তবে এটা ঠিক, কোন বছর কার কদর বাড়বে, সেটা আগে থেকে বলা যায় না। ডোমকলেই নাইট বা জলসাতে এক সময় দাপিয়ে অনুষ্ঠান করে গিয়েছেন কবিতা কৃষ্ণমূর্তি, মহম্মদ আজিজের মতো শিল্পীরা। তাঁরা হিন্দি সিনেমার গানই গাইতেন। তারপরে বাংলা সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের কদর তৈরি হয় বেশ কয়েক বছর ধরে। প্রসেনজিৎ এলে এখনও জলসায় লোক ধরে রাখা কষ্টকর হবে। তাঁর সঙ্গে রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় বা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত কিংবা জিৎ-কোয়েল ভালই ভিড় টেনেছে।
সেক্ষেত্রে আবার যুক্তি ছিল এই যে, এলাকার যে’কটি সিনেমা হল রয়েছে, তাতে বাংলা সিনেমাই বেশি চলে। ইমপা সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে ৩টে, বেলডাঙায় ২টো, ডোমকলে ১টা, জলঙ্গি ১টা, লালগোলায় ১টা, ধুলিয়ানে ১টা, ফরাক্কাতে ১টা, রঘুনাথগঞ্জে ৩টে, কান্দিতে ২টো হলে নিয়মিত সিনেমা হয়। অশোকবাবু বলেন, “তবে এটা ঠিক যে এই হলগুলিতে বেশিরভাগই বাংলা সিনেমা চলে। কিন্তু হলগুলির অবস্থা ভাল নয়, দর্শক আসতে চান না।” তিনি বলেন, “বাংলা সিনেমার সিডি বা ডিভিডি চোরা পথে আসতে দেরি হয়। কিন্তু হিন্দি সিনেমার ক্ষেত্রে অনেক তাড়াতাড়ি চলে আসে। তাই যে যার বাড়িতে বসেই তা দেখতে পান। কেবল চ্যানেলেও দেখানো হয়। তাই হিন্দি সিনেমার দর্শক কম।”
বাংলা সিনেমার তারকারা তাই বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু এটাও সত্যি যে, দেবাংশুবাবু বলেন, “এর আগে বেশ কয়েকবার বাংলা চলচ্চিত্রের শিল্পীদের নিয়ে এসে বড় বাজেটে জলসা করেও লাভের মুখ দেখতে পাইনি। এ বছর আমরা বুঝতে পারছি লাভ হবে।”
অর্থাৎ সেখানে টাকার অঙ্কটা বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। জলসার উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, প্রসেনজিৎ, জিৎ, দেব-এর মতো বড় নায়কদের আনতে গেলে যত টাকা তাঁদের দিতে হবে, আয়োজনের আকারও যত বড় হবে, টেলি সিরিয়ালের তারকাদের ক্ষেত্রে খরচ তার তুলনায় অনেক কম। ডোমকল আজাদ ক্লাবের সম্পাদক তজিমুদ্দিন খান বলেন, “সিরিয়ালের তারকাদের জন্য ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা দিতে হয়। সেই সঙ্গে যাতায়াতের খরচ। কিন্তু সিনেমার বড় তারকাদের আনতে গেলে এক এক জনকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়েছে। তাতে ঢাকের দায়ে মনসা বিকিয়ে যায়।”
তাই ইস্টিকুমুটের বাহা, মা-এর ঝিলিক এবং টাপুরটুপুরের রাতুল মাস্টারেই বিনিয়োগ করা অনেক নিরাপদ। |