এক জনের বয়স ৬২ বছর। আর এক জনের বয়স ৫২ বছর। দুজনের উচ্চতাই প্রায় সাড়ে ৩ ফুট। ওই দুজন ‘জোকার’ কে নিয়ে এখন জমজমাট মালবাজারের ময়দান। প্রথম জনের নাম মধুসূদন ঘোষ। দ্বিতীয়জনের নাম আবুল হাসান। বাড়ি বিহারের শিপলায়। দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত দর্শকদের হাসিয়ে বেড়ালেও আগামী দিনে জোকার পেশায় ক’জন আসবে তা ভেবেই দুজনে উদ্বিগ্ন। মধুবাবু কিংবা আবুল হাসেমের কথায়, “নতুন করে কেউই এই পেশায় আসতে চাইছে না। জোকার বিষয়টা উঠে গেলে সার্কাসের আনন্দ অনেকটাই ফিকে হয়ে যাবে যে!”
সার্কাসের ম্যানেজার মোল্লা সিদ্দিক রহমানও চিন্তিত। তাঁর কথায়, “জোকাররা হলেন সার্কাসের মেরুদণ্ড। এক খেলা থেকে আর এক খেলায় যাওয়ার যে ফাঁক, তা পূরণ করেন জোকাররাই।” এর পরেই মধুবাবু ও আবুলের মতো সিনিয়র জোকারদের ‘দলের সম্পদ’ হিসেবে প্রশংসা করেন তিনি। তিনি বলেন, “এখন জোকারদের মাইনেও অনেক বেড়েছে। তা সত্ত্বেও জোকার পেশায় নতুনদের আগ্রহ কম। তারই মধ্যে খুঁজে পেতে দেখতে হয়।” মধুবাবু ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে জোকার সাজছেন। এখনও ‘মেক আপ’ করতেই যেন সেই যৌবনে ফিরে যান। নিমেষের মধ্যেই তখন সর্দারজি সেজে উড়ন্ত ছুরির নিচে শুয়ে পড়েন মধুবাবু। তিনি বলেন, “সেই কবে থেকে এ কাজ করছি। আমার সুখ-দুঃখ যাই-ই মনে থাকুক দর্শককে হাসাতেই হবে। এটাই আমার কাজ। আমাদের কর্মকাণ্ডে সকলে যাতে হেসে গড়িয়ে পড়েন সেটাই লক্ষ্য।”
বিহারের শিপলার আবুল হাসানের ওজন ৩৫ কেজি। একটা সময়ে আবুল সার্কাসের বাঘ, সিংহের সঙ্গে খেলা দেখাতেন। কখনও সিংহের মুখে মাথাও ঢুকিয়ে দিতেন। জীবনকে তুচ্ছ করে অবলীলায় বিভিন্ন খেলা দেখাতে এখনও ততটাই পারদর্শী। তবে বয়স যে বড় বালাই। সার্কাসে ভবিষ্যতে ওঁদের প্রতিনিধিত্ব থাকবে কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে আবুল হাসেমেরও। এরই মধ্যে আসার আলো দেখানোর চেষ্টা করছেন মধুসূদনবাবু। তিনি নিজের ১৫ বছরের ছেলে গৌরাঙ্গকে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেছেন। মধুবাবুর ছেলের উচ্চতা ৩ ফুট ৪ ইঞ্চি। মধুসূদনবাবুর কথায়, “এখন ওর শেখার সময়। নিজে যা শিখেছি ওকে শেখাতে চাই। ও শিখছে। শেষ পর্যন্ত ছেলে সার্কাসে আমার উত্তরসূরি হবে কি না জানি না।” নতুন প্রজন্ম না-চাইলেও তাঁরা আমৃত্যু সার্কাসে থাকতে চান। তাই কথা বলতে বলতেই দুজনে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে গেয়ে ওঠেন, ‘জিনা ইঁহা..মরনা ইঁহা...
|
তারকা জুটি
শহরের এক হোটেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি
অর্পিতা ও প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী |
|