ঘূর্ণিঝড় স্যান্ডির দাপটে থেমে যাওয়া নিউ ইয়র্কের সাবওয়েতে ট্রেনের চাকা ফের ঘুরতে শুরু করল আজ। সেই সঙ্গে ঘুরতে শুরু করেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারযন্ত্রের চাকাও। কিন্তু নির্বাচনী প্রস্তুতির কাজ যে পরিমাণ ধাক্কা খেয়েছে, সেটা সামাল দিতেই প্রশাসনের এখন কালঘাম ছোটার দশা।
ঝড়ের জন্য নির্বাচনী প্রচার বন্ধ রেখেছিলেন বারাক ওবামা ও মিট রোমনি, দু’জনেই। ত্রাণের কাজেই মন দিয়েছিলেন তাঁরা। দু’জনেই জানতেন, এখন সরাসরি ভোটের কথা না বলে মানুষের পাশে দাঁড়ালেই সহানুভূতি মিলবে। বুধবার থেকে আবার আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রচারে ফিরেছেন তাঁরা। ফ্লোরিডায় ইতিমধ্যেই দু’টি সভা করেছেন রোমনি। সেখানে অবশ্য রাজনীতির পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দানের কথা বলেছেন তিনি।
না বলে উপায়ই বা কী? এখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ৬০ লক্ষ বাড়ি ও অফিসে বিদ্যুৎ নেই। ৪০ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। মৃতের সংখ্যা ৮০ ছাড়িয়েছে। |
নিউ জার্সিতে বারাক ওবামা। পাশে নিউ জার্সির গভর্নর ক্রিস ক্রিস্টি। ছবি: রয়টার্স |
এই আবহে বুধবার নিউ জার্সি থেকে প্রচার শুরু করেছেন প্রেসিডেন্ট ওবামা। স্যান্ডিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের এক-তৃতীয়াংশই নিউ জার্সিতে। মার্কিন জনতার স্মৃতিতে স্বাভাবিক ভাবেই ফিরে আসছে চার বছর আগের কথাও। সে বারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় ক্যাটরিনা। সে সময় ঝড়-বিধ্বস্ত নিউ অর্লিয়েন্সে পা রাখতে অনেকটা সময় নিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। তাই নিয়ে প্রভূত সমালোচনাও কুড়িয়েছিলেন। সে তুলনায় ওবামার ভূমিকায় এখনও পর্যন্ত মানুষের কাছে সদর্থক ইঙ্গিতই গিয়েছে বলে মনে করছেন তাঁর সহযোগীরা। একটি সংবাদপত্রের সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, প্রেসিডেন্টের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন ৮০ শতাংশ পাঠক। এমনকী, বিরোধীরাও প্রেসিডেন্টের ভূমিকার প্রশংসা না করে পারছেন না। ওবামার সবচেয়ে কঠোর সমালোচকদের এক জন নিউ জার্সিরই মেয়র ক্রিস ক্রিস্টি। স্যান্ডির পরে প্রেসিডেন্টের আন্তরিকতার প্রশংসা করেছেন তিনিও।
কিন্তু নিউ জার্সির বাসিন্দারা আদৌ ভোট দিতে পারবেন কি? স্যান্ডির দাপটে আমেরিকার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ভোটের প্রস্তুতিই যে লন্ডভন্ড! ৬ নভেম্বর নির্বাচন। তাই কাজও এগিয়ে গিয়েছিল অনেকটাই। কিন্তু স্যান্ডির দাপটে বিদ্যুৎহীন অবস্থা আর জল জমার ফলে ভার্জিনিয়া থেকে নিউ জার্সি, ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন কি না, তা নিয়েই এখন সংশয়। সাধারণত নির্বাচনী বুথগুলো তৈরি করা হয় দমকল ভবন, স্কুল, কমিউনিটি সেন্টারের মতো ভবনে। ঝড়ে অনেকগুলি বুথ একেবারে তছনছ হয়ে গিয়েছে। মঙ্গলবারের মধ্যে বিদ্যুতের অবস্থা ঠিক না হলে অনেক ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক ভোটযন্ত্রও ব্যবহার করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।
নিউ জার্সির নির্বাচনকর্মী সংগঠনের সভাপতি ডেনিস কোবিৎজ জানিয়েছেন, জমে থাকা জল, বিদ্যুতের অভাব আর রাস্তা আটকে থাকাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। বুথে ভোটযন্ত্র পৌঁছে দেওয়ার কাজও থমকে গিয়েছে। কোবিৎজের কথায়, “অনেক বুথেই এখন ভোটযন্ত্র নেওয়ার লোকও নেই।” তবে হাল ছাড়তে রাজি নন নেওয়ার্কের মেয়র কোরি বুকার। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, নিউ জার্সি ঠিক সময়েই ভোট দিতে পারবে। প্রায় একই সমস্যা নিউ ইয়র্ক, পেনসিলভানিয়া, ভার্জিনিয়ায়। তবে এখনও পর্যন্ত ভোটের দিন পিছিয়ে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে না। ১৮৪৫ সালের আইন অনুযায়ী, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে একমাত্র মার্কিন কংগ্রেস। এমন অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সব রাজ্যেই নির্বাচনের দিন বদলাতে হবে।
নির্বাচনের ফলে স্যান্ডি ঝড় তুলবে কি? বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় শাসক এবং বিরোধী, উভয়ের সামনেই মানুষের সহানুভূতি আদায় করার রাস্তা খোলা থাকে। শাসক দল যদি মানুষের পাশে দাঁড়ায়, অনেক সময়ই তার সুফল মেলে। অতীতের অনেকটা অসন্তোষ ভুলে যান ভোটাররা। আবার, শাসকের অকর্মণ্যতা অসন্তোষকে দ্বিগুণ বাড়িয়েও দেয়। ১৯৬৫ সালে যেমন নিউ অর্লিয়েন্সে ঘূর্ণিঝড় বেটসির তাণ্ডবে মারা যান ৬৫ জন। উদ্ধারকার্যে যোগ দিয়েছিলেন বিদায়ী মেয়র ভিক্টর শিরো। আর্থিক সাহায্যের দাবি জানাতে ওয়াশিংটনে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। এমনিতে ভোটে হয়তো হেরে জেতেন শিরো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেটসির কল্যাণেই আরও পাঁচ বছরের জন্য মেয়র পদে নির্বাচিত হন তিনি।
বিপর্যয়ের মরসুমে বিরোধীদের ঝুঁকিও কম নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শাসক দল ত্রাণকার্য ভাল সামলালেও যদি বিরোধীরা তার বিরুদ্ধে প্রচার করেন, তবে তাঁরাও বিপদে পড়তে পারেন। রোমনিকে তাই এই মুহূর্তে বেশ বুঝেশুনে এগোতে হচ্ছে। ক্যাটরিনার সময় বুশের ভূমিকার দাগ যাতে তাঁর গায়ে
না লেগে থাকে, সেটাও দেখতে হচ্ছে। চিনে ১৯৭৬ সালে বিরাট ভূমিকম্প হয়েছিল। সে বার মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে জনপ্রিয় হয়েছিলেন মাওয়ের উত্তরসূরি হুয়া গুয়োফেং। তার পরেই কুখ্যাত ‘গ্যাং অফ ফোর’কে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেন তিনি।
ইতিহাস বলছে, ওবামা ও রোমনি, দু’জনের সামনেই তাই কড়া চ্যালেঞ্জ। |