অভিযোগ ছিল, আমেরিকান সেন্টারের সামনে জঙ্গি হানায় দোষী সাব্যস্ত ফাঁসির আসামি আফতাব আনসারি আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে বসে পাকিস্তানে বউয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলে। আনন্দবাজারে সে খবর প্রকাশের পরে আফতাবের সেল এমন ভাবে সাফ করল কারারক্ষীরা যে, খবরের কাগজ তো দূরের কথা, জীবনযাত্রার জন্য না হলেই নয়, এমন কিছু জিনিসপত্র ছাড়া সবই সরিয়ে ফেলা হল সেখান থেকে। এক
ধাক্কায় তিন গুণ করা হল নজরদারি রক্ষীর সংখ্যাও।
কারা দফতর সূত্রের খবর, আবতাবের সেলে এত দিন চেয়ার, ক্যারম বোর্ড, বেশ কিছু পোশাকআশাক ছিল। তার প্রায় সবই ঝেঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের ওই সেলের তিনটি পৃথক খুপরিতে আফতাব ছাড়া আরও দু’জন ফাঁসির আসামি রয়েছে। এক জন আমেরিকান সেন্টারের সামনে জঙ্গি হানায় দোষী জামালদ্দিন নাসের। অন্য জন অন্য একটি খুনের মামলার আসামি বলবীর সিংহ। এর আগে ওই তিন জনের পাহারায় এক জন মাত্র কারারক্ষী থাকতেন। সেন্ট্রাল জেল সূত্রের খবর, এখন সেই জায়গায় তিন জন কারারক্ষী ওই সেলের বাইরে ডিউটিতে থাকছেন। তাঁরা সকাল ৬টা থেকে বিকেল পর্যন্ত সলিটারি সেলের পাহারার দায়িত্বে রয়েছেন। রাতেও টহলদারি কারারক্ষীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এখানেই শেষ নয়। ওই সেলে নজরদারির জন্য এক ঘণ্টা পরপর এক জন ডেপুটি জেলার অথবা এক জন সাব জেলার নিয়ম করে টহল দিচ্ছেন। কারা দফতরের দাবি, নিরাপত্তার যাতে কোনও গাফিলতি না থাকে সে জন্য জেল সুপার, এমনকী কারা দফতরের উচ্চপদস্থ কর্তাদেরও মাঝেমধ্যে টহল দিতে বলা হয়েছে আফতাবের সেলের বাইরে। এর আগে কেমন ছিল নজরদারি? কারা দফতরের কর্তারাই স্বীকার করছেন, ২৪ ঘণ্টায় বড়জোর এক বার কোনও অফিসার যেতেন সেই সেলের সামনে। এখন যে আঁটুনি বাড়ানো হয়েছে, সে কথা জানিয়ে কারা দফতরের আইজি রণবীর কুমার বলেন “নিরাপত্তায় যাতে কোন গাফিলতি না থাকে, সে জন্য আফতাব আনসারির সেলের বাইরের প্রহরা সম্প্রতি বাড়ানো হয়েছে।”
গোয়েন্দাদের দাবি, তার পর থেকে মোবাইল ফোনে কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছে আফতাবের। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইনটেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি), কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ), সিআইডি এবং রাজ্য গোয়েন্দা শাখার মতো সংস্থাগুলি মোবাইল ফোনে আড়ি পেতে আফতাবের কথা রেকর্ড করে। গোয়েন্দারা এ ক্ষেত্রে জোগাড় করেছিলেন একাধিক মোবাইল ফোনের নম্বর, যেগুলি আফতাব ব্যবহার করত বলে গোয়েন্দাদের দাবি। কিন্তু ওই নম্বরগুলির সব ক’টিই গত ১০-১২ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে বলে জানাচ্ছেন গোয়েন্দারা। আফতাব যে মোবাইলে কথাও বন্ধ করে দিয়েছে বা করাচিতে তার স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে, গোয়েন্দারা অবশ্য এখনও সেই সিদ্ধান্তে পৌঁছতে চাইছেন না।
কারা দফতর সূত্রের খবর, করাচিতে স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার খবর চাউর হওয়ার পরে আফতাবের সেল ঝাড়পোছ করা হয়। তবে কোনও মোবাইল ফোন মেলেনি।
আইবি-র এক কর্তার কথায়, “মাথায় রাখতে হবে, আফতাব জেলের মধ্যে বসে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট-ও খুলে ফেলেছে। এমনকী, তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ‘প্রোফাইল পিকচার’ সেলের মধ্যেই মোবাইল ফোনে তোলা। কে বলতে পারে, আফতাব ফেসবুকে ওর স্ত্রী এবং অন্য কারও সঙ্গে ‘চ্যাট’-এর মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছে না? যে নম্বরগুলিতে আমরা আড়ি পাততাম, সেগুলির জায়গায় অন্য নম্বর এবং অন্য মোবাইল সেট-ও হয়তো ইতিমধ্যেই পেয়ে গিয়েছে সে।” তবে সর্বক্ষণ নজরদারির ঘেরাটোপে থাকলে আফতাব হয়তো এখনই এতটা করতে সাহস পাবে না বলেই ধারণা তাঁর। তিনি বলেন, “আমরা সতর্ক আছি।” |