জন্মলগ্ন থেকেই কলকাতা বইমেলার সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য যোগ ছিল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের। বইমেলার নতুন আকর্ষণ কলকাতা সাহিত্য উৎসবকে আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরতেও বড় ভরসা ছিলেন তিনিই।
সুনীলের প্রয়াণ তাই বইমেলার জন্য বড় ধাক্কা বলেই মনে করছেন উদ্যোক্তারা। বিশ শতকের দ্বিতীয় অর্ধের গোড়ায় কলকাতার কফি হাউসের আড্ডার মহিমা এ বার তুলে ধরার পরিকল্পনা রয়েছে। কলকাতা সাহিত্য উৎসবের (কলকাতা লিটারারি মিট) অধিকর্তা মালবিকা চক্রবর্তী বলেন, “গত বারই এ নিয়ে সুনীলদার সঙ্গে আমাদের কথা হয়ে যায়। কিন্তু তখন দেরি হয়ে গিয়েছিল। ২০১৩ সালে দেশ-বিদেশের অতিথিদের নিয়ে কফি হাউস-বিষয়ক আলোচনাচক্র করার কথা আছে। ভেবেছিলাম সুনীলদাই তার মধ্যমণি থাকবেন।”
গত বার কলকাতা সাহিত্য উৎসবের প্রথম বছরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন সুনীলই। আগামী বার সেখানে শুরু হবে সুনীল-স্মারক বক্তৃতা। সাহিত্য জগতের
কোনও আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বকেই এই বক্তৃতার জন্য আমন্ত্রণ করা হবে বলে শনিবার জানিয়েছেন মালবিকা। ইংরেজি ভাষার ভারতীয় গদ্যকার বিক্রম শেঠ গত বার সুনীলের সঙ্গে উৎসবের উদ্বোধনী আসরে ছিলেন। আগামী বারও বিক্রমকে ডাকার পরিকল্পনা রয়েছে সংগঠকদের। এ ছাড়া, কফি হাউস নিয়ে আলোচনার জন্য লেখক ডেবোরা বেকারেরও আসার কথা। ইংরেজি ভাষার বাঙালি লেখক অমিতাভ ঘোষের স্ত্রী ডেবোরা বিট প্রজন্মের কবিদের নিয়ে লেখা একটি বইয়ে (আ ব্লু হ্যান্ড) কলকাতার কফি হাউসের কথাও লিখেছেন।
বইমেলা ও সাহিত্য উৎসবের সংগঠকদের সকলেরই আফশোস, বাঙালির সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চায় সুনীলের মতো বড় আইকন আগামী বছর থাকবেন না। পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড-এর তরফে গত বারই নবীন ও প্রবীণ লেখকদের জন্য পুরস্কার চালু করা হয়েছে।
গিল্ড-এর সম্পাদক ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় বললেন, “ঠিক হয়েছে, প্রতিশ্রুতিমান লেখকদের পুরস্কারটি সুনীলদার নামাঙ্কিত করা হবে।” অনুজ লেখকদের অন্যতম প্রধান পৃষ্ঠপোষক বলে পরিচিত সুনীলের নামে এই পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তাব দেন সমরেশ মজুমদার। এ বারের বইমেলায় যথাযোগ্য ভাবে তাঁকে স্মরণের আলোচনাও চলছে।
১৯৭৬ সালে কলকাতার আন্তর্জাতিক বইমেলার পথ চলার শুরু থেকেই ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে ছিলেন সমরেশ বসু ও সুনীল। সমরেশ বসু মারা গিয়েছেন আগেই। চলে গেলেন সুনীলও। তবে না থেকেও তিনি থাকছেন, ২০১৩ সালের বইমেলা থাকবে সুনীলময়। |