ভোগান্তি ও বিশৃঙ্খলায় বেসুরো দিল্লির পুজো
হালয়া থেকে বিসর্জন। প্রশাসনের অসহযোগিতা, পুলিশি অতি-সক্রিয়তা ও চরম অব্যবস্থার জেরে চরম দুর্ভোগের মুখে পড়তে হল রাজধানীর সমস্ত পুজো কমিটিকে।
মাস কয়েক আগে জন্মাষ্টমী উৎসবের সময়ে পঞ্জাবী বাগ জন্মাষ্টমী কমিটি রাস্তা আটকে মণ্ডপ নির্মাণ করায় পুলিশের সঙ্গে বিবাদের সূত্রপাত। পুজো কমিটিগুলির অভিযোগ, এরই খেসারত দিতে হয়েছে তাদের। সমস্যার শুরু মহালয়া থেকে। প্রথমে আপত্তি না করলেও একেবারে পুজোর ঠিক আগে দিল্লি পুলিশ ফরমান দেয়, রাস্তা বা ফুটপাথ অধিগ্রহণ করে পুজোর মণ্ডপ তৈরি তো দূর অস্ত, প্রবেশদ্বার পর্যন্ত নির্মাণ করা যাবে না। ফলে বিপাকে পড়ে পুজো কমিটিগুলি। শেষ পর্যন্ত প্রবেশদ্বার সরিয়ে দিতে বাধ্য হয় তারা। কিন্তু এর জন্য প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তাদের।
এখানেই শেষ নয়, পুজো কমিটিগুলির আরও অভিযোগ, বিসর্জন পর্যন্ত পুলিশ ও প্রশাসনের এই অসহযোগিতা চলেছে। বিসর্জনের ঘাটেও একই অব্যবস্থার ছবি দেখা গিয়েছে। এর ফলে প্রতিমা নিরঞ্জনে এসে ব্যাপক অসুবিধায় পড়ে পুজো কমিটিগুলি। বিসর্জন ঘাটের এই অব্যবস্থার জন্য পুলিশের পাশাপাশি অভিযোগের আঙুল উঠেছে বিসর্জন কমিটিগুলির দিকেও। পুলিশ এবং বিসর্জন কমিটি, দুজনেই অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বিসর্জনে কী রকম অব্যবস্থা?
দিল্লিতে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য যমুনাতে দু’টি ঘাট নির্ধারিত রয়েছে। পূর্ব ও দক্ষিণ দিল্লির পুজোগুলির জন্য কালিন্দী কুঞ্জ এবং দক্ষিণ ও পশ্চিম দিল্লির জন্য গীতা ঘাট। সাধারণত শীতের শুরুতে যমুনায় জল কম থাকায় ফি বছর দু’টি বিসর্জন কমিটির পক্ষ থেকে উত্তরপ্রদেশ সরকারকে প্রতিমা বিসর্জনের সময় অতিরিক্ত জল ছাড়ার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু এ বছর যমুনায় জল ছিল না। তাই কাদার উপরেই প্রতিমা ফেলে রেখে চলে আসতে হয়েছে পুজো কমিটিগুলিকে। অনেক পুজো কমিটির সদস্য যমুনার পাড়েই প্রতিমা রেখে চলে আসে।
বিসর্জনের পরে কালিন্দী কুঞ্জ ঘাট। —নিজস্ব চিত্র
কিন্তু কেন এই অব্যবস্থা? পুজো কমিটিগুলির মতে, বিসর্জন কমিটিগুলিই এর জন্য দায়ী। তারা উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাছে জলের জন্য আবেদন না জানানোয় এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় বিসর্জন কমিটির সদস্যদের সঙ্গে তীব্র বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন একাধিক পুজো কমিটির সদস্য। ভাঙচুর করা হয় বিসর্জন কমিটির অস্থায়ী দফতর। অভিযোগ, এই সময় পুলিশ ছিল নীরব দর্শক। ওখলা এলাকার নবপল্লি পুজো কমিটির সভাপতি উৎপল ঘোষের বক্তব্য, “সম্ভবত এ বার উত্তরপ্রদেশ সেচ বিভাগ জল না ছাড়ায় যমুনায় জল ছিল না। উপরন্তু ঘাট থেকে ১০ ফুট দূরে যমুনায় ব্যারিকেড করে দেওয়ায় প্রতিমা দূরে ঠেলে পাঠানো যায়নি। ফলে কার্যত কাদার উপরেই প্রতিমা ফেলে চলে আসতে হয়েছে। আর যাঁরা ক্রেনের মাধ্যমে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, তাঁদের অনেকেরই প্রতিমা দু’টুকরো হয়ে গিয়েছে।”
এর পাশাপাশি ঘাটে মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে। অন্ধকারে ঘাটে উপস্থিত মহিলারা নিরাপত্তার অভাবে ভোগেন বলেও অভিযোগ চিত্তরঞ্জন পার্কের পুজো কমিটিগুলির। পুজো কমিটিগুলির বক্তব্য, বিসর্জনের ঘাটে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হল, তাতে সার্বিক ভাবে দিল্লি প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
বিসর্জনের দায়িত্বপ্রাপ্ত দক্ষিণ দিল্লি জয়েন্ট প্রসেশন কমিটির সভাপতিএম কে রায় অবশ্য এই অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁর বক্তব্য, “আমাদের অনুরোধে উত্তরপ্রদেশ সরকার বিসর্জনের সময় জল জোগাতে দু’টি স্লুইস গেট খুলে দিয়েছিল। কিন্তু এখন যমুনায় জল কম থাকায় অন্য বারের তুলনায় নদীর পাড়ের কাছে জল কম ছিল। তার মধ্যেই দশমীতে প্রায় দু’শোর বেশি মূর্তি বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। সকালের দিকে সমস্যা না হলেও শেষ বেলায় বিসর্জন দিতে আসা প্রতিমাগুলির (মূলত চিত্তরঞ্জন পার্কের বড় প্রতিমা) জন্য পর্যাপ্ত জল ছিল না।” যদিও নিবেদিতা এনক্লেভ পুজো কমিটির সচিব সুব্রত দাস বা ময়ূরবিহার ফেজ ১-এর মিলনী পুজো সমিতির সভাপতি তপন রায়দের বক্তব্য, “দুপুর নাগাদ বিসর্জন দিতে এসেও একই সমস্যায় পড়তে হয়েছে। সরকারের উচিত বিসর্জনের ঘাটের সংখ্যা বাড়ানো।” বাঁশের ব্যারিকেডের কারণে গীতা ঘাটেও সমস্যায় পড়ে পুজো কমিটিগুলি। দিলশাদ গার্ডেনের পুজো পরিষদের উদ্যোক্তা সীতাংশু ব্রহ্ম বলেন, “প্রতিমা নিয়ে গভীর জলে যাওয়ার উপায় ছিল না।” বিসর্জন কমিটির যুক্তি, “যমুনায় দুর্ঘটনা রুখতেই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। তা ছাড়া আদালত ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশ অনুযায়ী গভীর জলে প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে যমুনা নোংরা করার উপরেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.