সম্পাদকীয় ২...
গর্বিত স্বৈরতন্ত্র
চিনা ঔপন্যাসিক মো ইয়ান-এর নোবেল সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্তি নিঃসন্দেহে গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের সাহিত্য-সংস্কৃতির ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। ইতিপূর্বে যে দুই জন প্রথিতযশা চিনা সাহিত্যিক নোবেল পাইয়াছেন, সেই পার্ল বাক এবং গাও ঝিংজিয়ানকে ‘বিদেশিনি’ কিংবা ‘দেশত্যাগী’ শনাক্ত করিয়া চিনা সরকার সেই প্রাপ্তিকে উদযাপন করে নাই। আসলে ওই দুই মহান সাহিত্যিকের কেহই চিনা কমিউনিস্ট পার্টির তাঁবেদারি করেন নাই। শেষোক্ত জনকে তো সাংস্কৃতিক বিপ্লবের উৎপাতের সময় আপন পাণ্ডুলিপি পুড়াইয়া দেশত্যাগ করিতে হয়। তুলনায় মো ইয়ানকে লইয়া উচ্ছ্বসিত হওয়া অনেক নিরাপদ। তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য, সরকারি লেখক সমিতির সভাপতি (স্তালিনের রাশিয়ায় ম্যাক্সিম গোর্কি যেমন ছিলেন)। তা ছাড়া, পার্টি ও সরকারের প্রতি আপন আনুগত্যের প্রমাণ দিতে তিনি বিক্ষুব্ধদের সংশ্রব সন্তর্পণে এড়াইয়া চলেন।
লিউ জিয়াওবো কমিউনিস্ট স্বৈরাচারের সমালোচনা করার দায়ে কারারুদ্ধ। তাঁহার এগারো বছরের কারাদণ্ড ধার্য হইয়াছে। চিনা সরকার তাঁহাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহণ করিতে সুইডেনে যাইতেও দেয় নাই এবং প্রতিনিয়ত তাঁহার নামে কুৎসা প্রচার করিয়া চলিয়াছে। তাঁহাকে নোবেল দেওয়ার পিছনে চিনা কমিউনিস্টরা ‘সাম্রাজ্যবাদের ষড়যন্ত্র’ লক্ষ করিলেও মো ইয়ানের নোবেলপ্রাপ্তিকে স্বাগত জানাইতে তাঁহাদের অসুবিধা হয় নাই। বস্তুত, দল ও সরকারের তরফ হইতে মো ইয়ানের পক্ষে ইন্টারনেট মারফত রীতিমত প্রচার-অভিযান চালানো হয়। সেই প্রচার এবং বৃহৎশক্তি হিসাবে চিনের উত্থানের বাস্তবতা নিঃসন্দেহে মো ইয়ানের নোবেলজয়ের পিছনে সক্রিয় উপাদান। তাহার অর্থ এই নয় যে মো ইয়ান শক্তিমান লেখক নন। তাঁহার রচিত উপন্যাস লাতিন আমেরিকার জাদু-বাস্তবতার অনুরূপ বাস্তবতার কুহকে চিনা সমাজ ও ইতিহাসের বিবর্তনকে মুড়িয়া রাখে। নোবেল কমিটির বিবরণে তাঁহার সাহিত্যকে ‘অলীকদর্শনের বাস্তবতা’ বলা হইয়াছে। মো ইয়ান লেখকের ছদ্মনাম, সেনাবাহিনীতে যুক্ত থাকার সময় সেনা-কর্তাদের নজর এড়াইয়া সাহিত্যসাধনার জন্য যাহা তিনি গ্রহণ করেন। ছদ্মনামটির অর্থ‘কথা বলিও না’। একদা তাঁহার কথা বলায় বারণ নামাইতে তাঁহার ‘গার্লিক ব্যালাডস’ উপন্যাসটি সরকার নিষিদ্ধও করে। পরে অবশ্য সেই নিষেধ প্রত্যাহৃত হয়, দল ও সরকারের সহিত বোঝাপড়াও হইয়া যায়। সাহিত্যের নোবেল পুরস্কারও যে এখন রাজনৈতিক বিবেচনা হইতে মুক্ত নয়, তাহা আরও এক বার প্রমাণিত হইল।
অন্য নোবেলজয়ী চিনাদের প্রতি সরকার ও সমাজের ঔদাসীন্য ও বিরূপতার নিরিখে ভারতের বিপরীত অভিজ্ঞতাটি প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায়। সি ভি রমন, হরগোবিন্দ খুরানা, সুব্রহ্মণ্যম চন্দ্রশেখর কিংবা বেঙ্কটরামন রামকৃষ্ণনের মতো ভারতীয় নোবেলজয়ী বিজ্ঞানীদের অনেকেই স্থায়ী ভাবে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় বা গবেষণাগারে কাজ করার সময়, এমনকী বিদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণের পরে পুরস্কৃত হন। কিন্তু সে জন্য তাঁহাদের কৃতিত্বে উচ্ছ্বসিত হইতে ভারতের সরকার ও জনগণের বিন্দুমাত্র দ্বিধা থাকে নাই। ভারতীয় বংশোদ্ভূত সাহিত্যিক ভি এস নয়পলের জন্য ভারতীয়দের গর্ব কম নয় (তিনি প্রায়শ ভারতীয় সমাজ ও রাষ্ট্রের তীব্র সমালোচক হওয়া সত্ত্বেও)। নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী মাদার টেরিজাকে ভারতীয়রা কখনও ‘বিদেশিনি’ ভাবে নাই। এমনকী ম্যালেরিয়া মারণ-রোগের প্রতিষেধক উদ্ভাবক রোনাল্ড রস কিংবা ইংরাজি ভাষার বিশিষ্ট সাহিত্যিক রাডইয়ার্ড কিপলিং-এর মতো নোবেলজয়ীর গৌরবেও ভারতীয়রা গৌরবান্বিত বোধ করিয়া থাকে, সাম্রাজ্যবাদী বলিয়া তাঁহাদের দূরে সরাইয়া রাখে না। ইহাই সম্ভবত চিনা স্বৈরতন্ত্রের সহিত ভারতীয় গণতন্ত্রের বৃহৎ তফাত।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.