সম্পাদকীয় ১...
ভুল বিপ্লব
হিংসা বস্তুটি তো কেবল গোলাগুলি নহে, খুনজখম নহে। হিংসা একটি মানসিকতা। এবং বাঙালি সেই মানসিকতার চিরকালীন ধারক ও বাহক। এবং প্রেসিডেন্সি কলেজ সেই বাঙালি চরিত্রের আদি ও অকৃত্রিম চিত্রপট। সম্প্রতি প্রেসিডেন্সির ‘বারিস্তা-বিপ্লব’-এর মধ্যে আবারও সেই ঐতিহ্যের স্পষ্ট প্রকাশ, দিশাহীন হিংসা ও নৈরাজ্যের ধারাটি পুনর্জাগ্রত করিবার অভ্রান্ত প্রয়াস। যে ছাত্রছাত্রীরা এই বিপ্লবের মূল পরিচালক, তাহারা অতি-বাম রাজনীতির ভাবধারায় স্নাত বলিয়া শোনা যায়। কিন্তু কেবল এইটুকুই নহে। কলেজ চত্বরে বলপূর্বক বারিস্তা দোকানটির শাখা বন্ধ করিয়া দিবার মধ্যে তাহাদের যে কর্মপদ্ধতি, তাহাতেও হিংসাত্মক দিকটি প্রকাশিত। যে যুক্তিতে তাহারা এ কাজ করিতেছে, সেগুলি সবই কুযুক্তি, এ কথা ধরিয়া লইয়াও বলা যাইতে পারে নব্যতরুণ ছাত্রছাত্রীদের নিজেদের মতামত, পছন্দ-অপছন্দ জানানোর অধিকার নিশ্চয়ই আছে, প্রয়োজনে তাহারা সেই মতামতকে রাজনীতির মোড়কে মুড়িলেও আপত্তি করা চলে না। কিন্তু যে ভাবে ‘দোকান খুলিতে দিব না’ স্লোগানে কলেজ প্রাঙ্গণে তাহারা বাহুবলের মহিমা প্রদর্শন করিতেছে, তাহাকে কোনও ভাবেই সুস্থ গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রকরণ বলা যাইবে না। যুক্তি অযুক্তি প্রতিযুক্তি সবই থাকিতে পারে, কিন্তু এই অসুস্থ বাহুবলীয় রাজনীতিকে কোনও কিছুর দ্বারা সমর্থন করা চলে না। ইহা হিংসার রাজনীতি।
অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, রাজ্যের যে কলেজটিকে উৎকর্ষের প্রাণকেন্দ্র করিবার অভিলাষে তাহাকে বহু কাঠখড় পুড়াইয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করা হইয়াছে, রাজ্যের ভাণ্ডারে যাহা-কিছু শ্রেষ্ঠ, সেই সকল সুযোগসুবিধা দেওয়া হইতেছে, সেই প্রতিষ্ঠানেরই ছাত্রসমাজের মানসিকতার এই হাল! রাজনীতি-সচেতনতার নামে হিংসা তথা গুন্ডামির এই শ্বাসরোধী শোভা। বাম, অতি-বাম, দক্ষিণ, ইত্যাদি তো পরের কথা। রাজ্যের তথাকথিত শ্রেষ্ঠ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শিক্ষালাভের অধিকার যাহারা অর্জন করিয়াছে, তাহাদের নিকট অন্তত এইটুকু প্রত্যাশিত ছিল যে তাহারা বুঝিবে নিজের মত প্রকাশ করা এবং সেই মত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বলপ্রয়োগ করার মধ্যে একটি বড় তফাত রহিয়াছে, এবং সেই তফাতের উপরই ভর দিয়া দাঁড়াইয়া আছে মুক্ত গণতন্ত্র, উদার যুক্তিবাদ। এই তফাত রাজ্যের বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলির পেশি-সবল বন্ধুরা না বুঝুক, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বুঝিবার কথা। আলোচনা, পর্যালোচনার রাস্তা খোলা রাখিয়া অবস্থান লইবার দায়টি জানিবার কথা।
সেই রাস্তায় হাঁটিলে হয়তো এই কথাটি বাহির হইয়া আসিতে পারিত যে, বারিস্তা ব্যবসায়িক বিপণি যে অর্থে সাম্রাজ্যবাদের চর, পশ্চিমি বাজার-অর্থনীতির প্রতিভূ, বহুজাতিক বাজার সংস্কৃতির মূল্যবোধের প্রতীক, সেই অর্থে কোক, পেপসি, ফেসবুক, টুইটার, হাজারো ব্র্যান্ডের ছাত্রপ্রিয় পোশাক, এমনকী হার্ভার্ড-কেম্ব্রিজ-অক্সফোর্ড-ইয়েল, সকলই প্রায় একই দোষে দুষ্ট। সম্প্রতি দেশব্যাপী এফ ডি আই বিরোধী প্রতিবাদের সঙ্গে সুর মিলাইয়া এই পশ্চিমি ব্র্যান্ড-বিরোধিতা চলিতে পারে, কিন্তু সামগ্রিক সমাজের স্বার্থে এই বিরোধিতার পথই ঠিক পথ কি না, এই প্রশ্ন অত্যন্ত গুরুতর, ইহা স্থানিক হিংসার ভিত্তিতে সমাধানযোগ্য নহে। ইহার সমাধান যে স্তরে হওয়া বাঞ্ছনীয়, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উজ্জ্বল ছাত্ররা হয়তো সেখানে পৌঁছাইতেই পারে, কিন্তু মনে রাখা দরকার, সেখানে পৌঁছাইবার রাস্তাটি গিয়াছে সারস্বত-চর্চার অঙ্গনের মধ্য দিয়া, শস্তা বাহুবলী যথেচ্ছাচারিতার পরিসর দিয়া নহে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.