অসৌজন্য, বলছে তৃণমূল
এইমস হবে রায়গঞ্জেই, সংঘাত বাড়ালেন আজাদ
বিচ্ছেদের পরে প্রথম ধাক্কা হিসেবে গ্লোবাল পার্টনারশিপ সামিট কলকাতা থেকে সরেছিল আগরায়। তার পর জমি বিলে সরকারি অধিগ্রহণের এক্তিয়ার বাড়িয়ে আর পঞ্চায়েত ভোট এগোনোর জন্য ভোটার তালিকা সংশোধন স্থগিত রাখার অনুরোধ ফিরিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে সংঘাতে গিয়েছিল কেন্দ্র। রবিবার সেই তালিকা দীর্ঘতর হল। নয়া সংযোজন: রায়গঞ্জে প্রস্তাবিত এইমস ধাঁচের হাসপাতাল।
এই বিষয়টি ঘিরে তৃণমূলের সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেসের টানাপোড়েন চলছিলই। রায়গঞ্জে হাসপাতাল না করে সেটাকে কল্যাণীতে নিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায়। যার প্রতিবাদ করেন রায়গঞ্জের কংগ্রেস সাংসদ দীপা দাশমুন্সি। এ দিন রাজ্যে এসে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদ ঘোষণা করলেন, “ওই হাসপাতাল হবে রায়গঞ্জেই।”
ঘটনাচক্রে এ দিনই মুখ্যমন্ত্রীর আরও একটি অনুরোধ উপেক্ষা করে দমদম বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল উদ্বোধন জানুয়ারিতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহ। মমতা চেয়েছিলেন, পুজোর আগেই চালু হোক ওই টার্মিনাল। কিন্তু বিমানমন্ত্রীর সাফ কথা, তাঁরা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনে উদ্বোধন হবে বলে ধরে নিয়ে এগোচ্ছেন।
গুলাম নবি আজাদ এ দিন রাজ্যে এসেছিলেন জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ছেলে অভিজিতের হয়ে প্রচার করতে। সেই প্রচারসভাতেই এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল রায়গঞ্জেই গড়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি। তৃণমূল নেতাদের মতে, এটা কংগ্রেসের অসৌজন্য। কারণ, জোট ভেঙে গেলেও জঙ্গিপুরে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রার্থী দেওয়া হয়নি। সুতরাং সেখানে প্রচারে এসে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই খোঁচাটা না দিলেই পারতেন।
প্রচারের ফাঁকে গুলাম নবির সঙ্গে আলোচনা অধীর চৌধুরীর। মুর্শিদাবাদের নবগ্রামে। —নিজস্ব চিত্র
পাশাপাশি, গুলাম নবির ঘোষণা উড়িয়ে দিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেছেন, “উনি ভোট-বাজারে সস্তা জনপ্রিয়তা কুড়োনোর চেষ্টা করছেন। হাসপাতাল ওখানে হবে না।”
রায়গঞ্জে এইমস ধাঁচের হাসপাতাল গড়ার জন্য চেষ্টা শুরু হয় চার বছর আগে থেকে। তখন সেখানে সাংসদ ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। পরে তাঁর স্ত্রী সাংসদ দীপা দাশমুন্সিও একই চেষ্টা চালাচ্ছেন। ২০০৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় সরকার রায়গঞ্জে ১০০ একর জমিতে ৮২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯৬০ শয্যার হাসপাতাল গড়ার অনুমোদন দেয়। তবে একই সঙ্গে জানায়, হাসপাতাল তৈরির জন্য রাজ্যকে বিনামূল্যে জমি দিতে হবে। ২০১২ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়।
জেলা প্রশাসন পানিশালায় ১২৫ একর জমি চিহ্নিত করে। ২০১০ সালে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল প্রস্তাবিত জমি পরিদর্শন করে সবুজ সঙ্কেতও দেয়। গত বছর ২২ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদ রাজ্যের তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী, বর্তমানে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রকে চিঠি দিয়ে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করার অনুরোধ করেন। কিন্তু পরে বিধানসভা ভোট ঘোষণা হওয়ায় জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া আটকে যায়। রাজ্যে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট সরকার গঠন হওয়ার পরে এই হাসপাতাল কোথায় হবে তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়।
গুলাম নবি এ দিন জানিয়েছেন, তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর তাদের রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল গড়ে তোলার জন্য জমি অধিগ্রহণ করার কথা বলা হয়েছিল। তাঁর কথায়, “কিন্তু তারা জমি অধিগ্রহণ করে দিতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয়।” রাজ্য সরকারের যুক্তি ছিল, তারা জোর করে জমি অধিগ্রহণ করবে না। অতএব যেখানে তাদের হাতে জমি আছে, সেখানেই হাসপাতাল গড়া হবে।
কিন্তু ঘটনা হল, গত ৩০ অগস্ট ইটাহারে মমতা জোর করে জমি না নেওয়ার কথা বলার পরের দিনই পানিশালায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন হাসপাতালের জন্য জমি দিতে ইচ্ছুক চাষিরা। সেই অবরোধে আটকে পড়ে রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবের গাড়ি। তাঁদের ঘিরে বিক্ষোভকারীরা বলেন, হাসপাতালের জন্য যে জমি চিহ্নিত করা হয়েছে, তার মালিক ৯০ জন চাষি। তাঁরা সকলেই জমি দিতে ইচ্ছুক। ক্ষতিপূরণ নিয়েও তাঁরা কোনও চাপ সৃষ্টি করেননি। সরকার যে ক্ষতিপূরণ দেবে সেটাই মেনে নেবেন।
কংগ্রেস সমর্থক চাষি তোফিল মহম্মদের আড়াই বিঘে জমি রয়েছে। এ দিন তিনি বলেন, “হাসপাতালের স্বার্থে আমরা দলমত নির্বিশেষে জমি দিতে প্রস্তুত।” একই মত তৃণমূল সমর্থক আমজাদ আলির। তিনিও জমি দিতে আগ্রহী। সিপিএম সমর্থক নতুব আলি বলেন, “বৃহত্তর স্বার্থে ওই হাসপাতালের খুব প্রয়োজন রয়েছে।”
গুলাম নবিও এ দিন বলেন, “রায়গঞ্জে এইমস ক্যাম্পাস হলে উত্তর-পূর্ব ভারত, বিহার এবং এই রাজ্যের মানুষ উন্নত চিকিৎসা পরিষেবার সুযোগ পাবেন।” সেই সঙ্গেই তাঁর বক্তব্য, “রায়গঞ্জের পাশাপাশি রাজ্যের অন্যত্র বাড়তি একটি এইমস ক্যাম্পাস গড়ে তোলার জন্য রাজ্য যদি আবেদন জানায়, সে ক্ষেত্রে কেন্দ্র সবুজ সঙ্কেত দেবে।”
গুলাম নবির মন্তব্য শুনে দীপা বলেন, “২০০৯ সাল থেকেই কেন্দ্র রায়গঞ্জে এইমস করার কথা বলছে। মাঝখানে বাদ সেধেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার! কিন্তু কেন্দ্র নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় আমরা আমাদের আন্দোলনের ফসল পাব বলেই আশা করছি।” তাঁর বক্তব্য, “রায়গঞ্জেই এইমসের দাবিতে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে আন্দোলন চলছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলার পরেও রাজ্য সরকার রায়গঞ্জে জমি অধিগ্রহণের নির্দেশ না-দিলে গোটা রাজ্যে এইমসের জন্য আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়া হবে। পাশাপাশি, দিল্লির সঙ্গে কথা বলে একে কার্যকর করার ব্যবস্থা করতে হবে।” চন্দ্রিমাদেবী অবশ্য সরকারের যুক্তিতে অনড়। এ দিন তাঁর মন্তব্য, “আমরা বারবার বলে আসছি, এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল চাই এমন জায়গায়, যেখানে আমাদের জমি রয়েছে। এবং যাতায়াতের দিক থেকেও সুবিধাজনক। সেই অনুযায়ীই আমরা এগোচ্ছি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর হয়তো ভূগোলের জ্ঞান সামান্য কম। তাই হয়তো বিষয়টি না বুঝেই এমন মন্তব্য করেছেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.