অনির্বাণ রায় • জলপাইগুড়ি |
কোথাও দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের লালসার শিকার হয়েছে কোনও কিশোরী। আবার কোথাও বাড়ির চেলেদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হলেও মেয়েকে কলেজের পরে পড়তে দেওয়া হয়নি। এমন দৃষ্টান্তও রয়েছে পরিচারিকার কাজ করতে গিয়ে নানা ভাবে হেনস্থা হতে হয়েছে। এমন নির্যাতিাতের পাশে দাঁড়ানোর জন্য একজোট হয়েছেন জলপাইগুড়ির একদল মহিলা।
শনিবার সন্ধ্যায় জলপাইগুড়ির সুভাষ ফাউন্ডেশনে তাঁদের সভা হয়েছে। নবগঠিত সংস্থার নাম দিয়েছেন ‘আমরা অপরাজিতা’। নানা প্রয়োজনে মহিলারা যাতে ফোন করতে পারেন, সে জন্য একটি ‘হেল্পলাইন’ খোলার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন সদস্যারা। হেল্পলাইনে ফোন করলেই নির্যাতিত মহিলার পাশে দাঁড়ানো হবে। কোনও মহিলাকে পরিবারের সদস্যের কাছে নির্যাতিত হওয়ার অভিযোগ পেলে সেই পরিবারের সদস্যদের কাছে গিয়ে খোলামেলা ভাবে বিষয়টি আলোচনা করা হবে বলে স্থির করেছেন অপরাজিতার সদস্যারা। তাতেও কাজ না হলে সংগঠনের তরফেই পুলিশে অভিযোগ করা হবে বলে জানানো হয়েছে। শুধুমাত্র মেয়ে হওয়ার কারণেই বাড়ি থেকে পড়াশোনার প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলে মনোবিদ এবং সমাজকর্মীদের দিয়ে পরিবারের সদস্যদের ‘কাউন্সিলিং’ করাবে সংস্থাটি। অভিভাবকদের রাজি করাতে প্রয়োজনে কাউন্সিলার, পঞ্চায়েত সদস্য অথবা সেই এলাকার প্রভাবশালী নেতা নেত্রীদের সাহায্য নেওয়া হবে। নবগঠিত সংস্থার যুগ্ম আহ্বায়ক রীতা রায় সেনগুপ্ত বলেন, “নির্যাতন বললেই সব কিছু বোঝানো সম্ভব নয়। ছোট থেকে বড় হওয়ার বিভিন্ন বয়সেই হাজারো নির্যাতনের শিকার হতে হয়। যেগুলি অনেক ক্ষেত্রেই মহিলারা চলার পথের সঙ্গী বলে ভেবে নেয়। জলপাইগুড়ি শহরের অনেক পরিবারে এই সময়েও ছেলেকে উচ্চশিক্ষার জন্য পাঠানো হলেও মেয়েকে সেই সুযোগ দেওয়া হয় না। এটাও কম অপরাধ নয়।”
একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রীতা দেবী বলেন, “আমাদের সকলেরই ব্যক্তিগত স্তরে এমন অনেক ঘটনার সামনাসামনি হতে হয়েছে। এবার আমরা স্থির করেছি, মুখ বুজে ঘরে বসে থাকলে চলবে না। দলবদ্ধ ভাবে সব রকম নির্যাতনের শিকার হওয়া মহিলাদের পাশে দাড়াতে হবে।” স্কুল-কলেজের শিক্ষিকা, বিমা কর্মী, চিকিৎসক, আইনজীবী, সমাজকর্মী সব ধরনের পেশাতে যুক্ত ৫৯ জন মহিলাকে নিয়ে তৈরি অপরাজিতা আগামী মাসে শহরে গণ কনভেনশন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সংগঠনের উদ্দেশ্য কাজকর্মের পদ্ধতি এবং যোগাযোগের নম্বর জানাতে শহরে হোর্ডিং, ফেস্টুন লাগানো সহ পথ সভাও করা হবে বলে জানানো হয়েছে। সংগঠনের হেল্প লাইনের নম্বর জানিয়ে দেওয়া হবে শহরের এবং লাগোয়া এলাকার স্কুল ছাত্রীদেরও। শহরের প্রসন্নদেব মহিলা কলেজের শিক্ষিকা কোয়েলা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “রাজনীতির একেবারে বাইরে এই সংগঠন। রাজ্য এবং দেশের বিভিন্ন এলাকায় মহিলাদের ওপর অত্যাচারের ঘটনা বেড়ে যাওয়াতে আমাদের মনে হয়েছে এই ধরনের একটি সংগঠন তৈরি করা খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। ভবিষ্যতে আমরা মহিলাদের আত্মরক্ষার বিভিন্ন প্রশিক্ষণও দেব। যেমন রাস্তায় কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি হলে কিভাবে মানসিক শক্তি বজায় রেখে মোকাবিলা করতে হবে তার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।”
জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদ হলে সংগঠনের কনভেনশনে সর্বস্তরের মহিলাদের য়োগ দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। সেই কনভেনশনে কিভাবে সংগঠনরে কাজকর্ম পরিচালনা করা হবে তার চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হবে। আপাতত ১০ জনের একটি কোর কমিটিও তৈরি করা হয়েছে। কোর কমিটির সদস্য মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস বলেন, “শহরের যে কোনও মহিলা যারা কোনও না কোনও ভাবে প্রতিনিয়ত অত্যাচারিত হচ্ছেন, তাঁদের কাছে একটি বার্তাই আমরা পৌছে দিতে চাইছি। তাঁরা মোটেই একা নন। তাঁদের হয়ে লড়াই করতে আমরাও পাশে রয়েছি।” |