সৌমিত্র কুণ্ডু • শিলিগুড়ি |
বাইক রাখলে ঘণ্টায় ২ টাকা, চার চাকার গাড়ি রাখলে ৫ টাকা করে নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। অথচ কিছুক্ষণের জন্য বাইক রাখলেই ৬ টাকা এবং গাড়ি রাখলে ১০ টাকা করে জবরদস্তি পার্কিং ফি সংগ্রহের অভিযোগ উঠেছে। শিলিগুড়ি দুই মাইলে একটি শপিং মল লাগোয়া সেবক রোডের ধারে পার্কিং ফি সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারের বিরুদ্ধে এমনই একাধিক অভিযোগ পৌঁছেছে পুর কর্তৃপক্ষের কাছে। তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার মিন্টু করকে সতর্ক করেও কাজ না-হওয়ায় ক্ষুব্ধ পুর কর্তৃপক্ষ। পার্কিং ফি দিতে গিয়ে বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে দেখে বাসিন্দাদের কয়েকজন প্রতিবাদ করে পুর কর্তৃপক্ষকে জানানোর কথা বলেন। উত্তরে ‘কেউ কিছু করতে পারবে না’ বলে ঠিকাদারের লোকজন হুমকি দেন বলে অভিযোগ। মেয়র এবং দায়িত্বে থাকা কাউন্সিলরদের নাম করে তাঁদের নিয়মিত টাকা দেন বলেও প্রকাশ্যে জানান। একই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে বারবার এ ধরনের অভিযোগ ওঠায় বরাত খারিজ করে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে বলে পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
পার্কিং বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন মেয়র। তাঁর হয়ে কাজের তদারকি করেন ট্রেড লাইসেন্স বিভাগের মেয়র পারিষদ দেবশঙ্কর সাহা। দেবশঙ্করবাবু বলেন, “ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ উঠছে। ইতিমধ্যেই তাঁকে ২ বার সতর্ক করা হয়েছে। নিয়ম ভেঙে এ ভাবে পার্কিং ফি সংগ্রহের জন্য ওই ঠিকাদারের বরাত খারিজ করার কথাও ভাবা হচ্ছে।” মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত জানিয়েছেন, পুরসভার ঠিক করা নির্দিষ্ট হারেই পার্কিং ফি সংগ্রহ করার কথা। কেউ বেশি টাকা আদায় করলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বরাত খারিজ করা হবে।
পার্কিং বিভাগের কাজকর্ম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের কাউন্সিলরদের একাংশও। সম্প্রতি মেয়র-সহ কংগ্রেসের মেয়র পারিষদদের অধীনে থাকা বিভিন্ন দফতরের কাজকর্ম নিয়ে তাঁরা যে অভিযোগ তুলেছেন তার মধ্যে পার্কিংয়ের বিষয়টিও রয়েছে। ২০১১-২০১২ সালে বরাত পাওয়া ঠিকাদারদের একাংশ পুরসভার প্রাপ্য টাকা না-মেটালেও তাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে তাঁরা সরব হন। তাঁদের মেয়র পারিষদ কৃষ্ণ পাল বলেন, “কিছু ঠিকাদার পার্কিং ফি সংগ্রহের নামে ইচ্ছে মত টাকা তুলছে। এ ব্যাপারে মেয়রকে বারবার আমাদের দলনেতা তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী সতর্ক করেছেন। কিন্তু, মেয়র গয়ংগচ্ছ মনোভাব দেখিয়েছেন। অবিলম্বে এর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে লেনদেনের অভিযোগ বাড়তেই থাকবে। যা কখনই কাঙ্খিত নয়।”
সেবক রোডের একটি সিনেমা হলের সামনে থেকে চেকপোস্ট মোড় পর্যন্ত পার্কিং ফি সংগ্রহের দায়িত্বে রয়েছেন মিন্টুবাবু। ফি সংগ্রহের ক্ষেত্রে অনিয়ম হচ্ছে বলে তাঁকে পুরসভা থেকে একাধিকবার সতর্ক করার বিষয়টি তিনি নিজেও স্বাকীর করেছেন। তার পরেও পার্কিং ফি সংগ্রহের ক্ষেত্রে অনিয়ম কেন? মিন্টুবাবু বলেন, “যে কর্মচারীরা কাজ করেন তাদের কেউ বেশি টাকা আদায় করে থাকতে পারেন। তবে এই ভুল যাতে আর না হয় তা দেখা হবে। নিয়ম মেনেই পার্কিং ফি আদায় করা হবে।”
বাসিন্দাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা অবশ্য অন্য কথা বলছে। তাঁদের কয়েকজন জানান, ১০/১৫ মিনিটের জন্য বাইক রাখায় ৬ টাকা পার্কিং ফি চাওয়া হচ্ছে দেখে তাঁরা বাধা দেন। তাতে ঠিকাদারের লোকজন জবরদস্তি শুরু করে। পুরসভাকে জানানো হবে বলা হলে তারা পাল্টা জবাব দেন, তাতে কোনও লাভ নেই। কেন না সকলকেই তারা টাকা দেন। পুরসভার বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম জানান, শহরের বিভিন্ন জায়গায় পার্কিংয়ের নামে কার্যত তোলা তুলছে ঠিকাদারের লোকজন। পুর কর্তৃপক্ষ কিছুই করছেন না। |