মাওবাদীরা ঘাঁটি গেড়েছে বাসস্ট্যান্ডে। তাদের শায়েস্তা করতে মোতায়েন করা হয়েছে যৌথবাহিনী। মাঝেমধ্যে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসছে মাওবাদীরা। তাদের হামলায় আটকে পড়ছে ট্রেন। যৌথবাহিনীর সঙ্গে চলছে গুলির লড়াই। কানে তালা লেগে যাওয়ার মতো আওয়াজ। তটস্থ গ্রামবাসী।
বসিরহাটের বদরতলা রিক্রিয়েশন ক্লাবের এ বারের পুজোর থিম এটাই। প্রায় চার হাজার বর্গফুট এলাকায় গড়ে তোলা হচ্ছে ‘স্টেশন জঙ্গল মহল’। এ জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে আস্ত একটা পুকুর এবং বাসস্ট্যান্ড। মাওবাদীদের ঘাঁটি হচ্ছে ওই বাসস্ট্যান্ডে। বুক চিরে চলে গিয়েছে রেলের লাইন। দু’পাশে ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ট্রেন ছুটছে। মাঝেমধ্যে বেশ কিছুটা ফাঁকা জায়গা জুড়ে স্কুলবাড়ি, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, গ্রামীণ ব্যাঙ্ক এবং গরিব মানুষের ঘর। হঠাৎ ট্রেন থামিয়ে মাওবাদীদের হামলা। এলএমজি হাতে প্রত্যুত্তর দিচ্ছে যৌথবাহিনীর জওয়ানরা। হুগলির বাঁশবেড়িয়ার শিল্পী মৃন্ময় ঘোষ বিশ্বাসের পরিকল্পনায় পুজোয় জঙ্গলমহলের এমনই দৃশ্য দেখবেন দর্শকেরা। প্রস্তুতিতে বেজায় ব্যস্ত ৪০ জন কলাকুশলী। ক্লাবের সম্পাদক প্রিয়ব্রত সরকারের কথায়, “দর্শনার্থীদের আনন্দ দেওয়ার জন্যই এত আয়োজন। প্রায় ৬ লক্ষ টাকা খরচ করা হচ্ছে।” |
বসিরহাটে এ বার পশ্চিমের ক্লাবগুলির সঙ্গে জোর লড়াই পূর্বের। এক দিকে যখন মণ্ডপের কারুকাজে জোর দেওয়া হচ্ছে। অন্য প্রান্তের ক্লাবগুলি অভিনব প্রতিমা তৈরিতে এগিয়ে থাকার চেষ্টা করছে। পিছিয়ে নেই উত্তর-দক্ষিণের পুজো উদ্যোক্তারাও। চট এবং প্লাস্টার অব প্যারিস দিয়ে দিল্লির অক্ষরধামের আদলে জাতীয় পাঠাগার ব্যায়ামপীঠের মণ্ডপ তৈরি করছেন শিল্পী বিলাস দেবনাথ। বাহারি আলোর মালায় সাজছে এলাকা। ক্লাবের সম্পাদক জয়ন্ত কুণ্ডু বলেন, “কুমোরটুলির প্রতিমা, চন্দননগরের আলো এবং মণ্ডপ তৈরি নিয়ে বাজেট প্রায় সাত লক্ষ টাকা। আশা করি দর্শকদের ভাল লাগবে।”
বিশেষ মণ্ডপ এবং প্রতিমা উপহার দেওয়ার চেষ্টায় দু’মাসেরও বেশি সময় দিনরাত এক করে খেটে চলেছে ‘উই দ্য গ্রিন’ ক্লাবের সদস্যরা। এ বার থিম ‘পৃথিবী জ্বলছে’। দেখা যাবে গায়ে গা লাগিয়ে হাসি-ঠাট্টা করছে কঙ্কাল, অর্ধেক-পোড়া মানুষ এবং বতর্মান দিনের ছেলেমেয়েরা। তাদের মধ্যে আগুনে ঝলসে যাওয়া মানুষও আছে। এখানে মণ্ডপের সামনে রাখা হবে বড় আকারের একটা মোষ। মণ্ডপের মাঝে জ্বলন্ত আগুনের উপর আস্ত একটা পৃথিবী। তার উপর অসুরদলনী দেবী দুর্গা। শিল্পী সৌমেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মূল ভাবনায় রূপ পেতে চলেছে সমস্ত পরিকল্পনা।
শিল্পী দেবব্রত মণ্ডলের হাতে ধীরে ধীরে সেজে উঠছে নৈহাটি তরুণ সঙ্ঘের মণ্ডপ। বিভিন্ন সময়ে টেরাকোটা, মায়া সভ্যতা, তাসের দেশ কিংবা কুলোর ডালায় যামিনী রায়ের শিল্পকলা ফুটিয়ে তোলার পর এ বারের থিম ‘মধুবনী কারুকাজে আদ্যাশক্তি ত্রিশূল সাজে’। বিশাল দেহী মহাদেবের নীচে পঁয়ত্রিশ ফুট উচ্চতার দেবীমূর্তিকে ঘিরে রাখবে চার-পাঁচশো ত্রিশূল। মধুবনী শিল্পকলার সৌন্দর্য মণ্ডপসজ্জাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যাবে বলে বিশ্বাস উদ্যোক্তাদের। দক্ষিণ ভারতের বিজয়নগর রাজবাড়ির আদলে মণ্ডপ তৈরি করেছে বদরতলার শক্তি সঙ্ঘ।
বসিরহাট শহরে এ বার পুজোর সংখ্যা প্রায় একশো। প্রভাতীর এ বারের পরিকল্পনা দর্শকদের আলোর ভেলকি দেখানো। দক্ষিণ ভারতের আদলে মন্দির তৈরি করে দর্শকদের তাক লাগাতে চায় বিদ্যুৎ সঙ্ঘ। দেখা যাবে সতীর দেহত্যাগ, অকালবোধন। ‘গামছার উপকথা’ তুলে ধরতে বদ্ধপরিকর নবশ্রী। গামছার নানা কারুকাজে মণ্ডপ সাজানোই এ বার পরিকল্পনা তাদের। দর্শকদের মন জয় করতে আসরে নেমে পড়েছে দেশবন্ধু অ্যাথলেটিক্স। সুন্দর প্রতিমা মণ্ডপ এবং আলোয় পিছিয়ে নেই মহুয়া সঙ্ঘ, যুবক সঙ্ঘ, আমরা সবাই, নিউ উদয়, বিধান স্মৃতি সঙ্ঘ, ইয়ং স্টার, প্রগতি, অমর সঙ্ঘ, সবুজ সঙ্ঘ বা বিধান সঙ্ঘ।
সুদৃশ্য মণ্ডপ এবং প্রতিমা নিয়ে বেশ বড় বাজেটের পুজো এ বার প্রান্তিকের। সাধ্যমতো বাজেটে দশর্কদের মুগ্ধ করার চেষ্টায় মিলন সঙ্ঘ, রামকৃষ্ণ সঙ্ঘ, অর্ঘ্য সঙ্ঘ, টাউন ক্লাব, প্রগ্রেসিভ রিজেন্ট ক্লাব, ১১-র পল্লি, রত্নদীপ। নকশি কাঁথায় বাংলার রূপ তুলে ধরবে ইউনাইটেড ক্লাব। কেরলের বজরায় দেবী দুর্গার আগমন দেখতে যেতে হবে ঘড়িবাড়ি এলাকার অনির্বাণ সঙ্ঘের পুজোয়। পুরনো জমিদার বাড়ির সামনে আলোর মেলায় পুজোর উদ্যোগ নবারুণ সঙ্ঘের। দেবদূত সঙ্ঘের আকর্ষণ কাল্পনিক রাজবাড়িতে কৃষ্ণনগরের শিল্পীর তৈরি নান্দনিক প্রতিমা। সমুদ্র মন্থনে অষ্টাদশভুজা মুন ক্লাবের আকর্ষণ। আটচালার ঘরে মা দুর্গার আরাধনার আয়োজন করেছে বাজারপাড়া সর্বজনীন। |