দশভুজা
বাহন সাইকেল, দিন বদলেছে অনিতার
ছর কয়েক আগে বাড়িতে অতিথি এলে এক কাপ চা দিতে গিয়ে রীতিমত বিড়ম্বনায় পড়তেন অনিতা নন্দী। রং চটে যাওয়া, হাতল ভাঙা কাপে চা দেওয়ার সময় যেন লজ্জায় মাথা কাটা যেত তাঁর। কিন্তু এখন সেই নুন আনতে ভাত ফুরনো সংসারের পালে লেগেছে দিনবদলের হাওয়া। হেঁশেলে এসেছে সুদৃশ্য কাপ, প্লেট। অনিতা তাঁর বাহন সাইকেলকে নিয়ে এগিয়ে চলেছেন। ভরদুপুরে মেঠোপথ ধরে সাইকেল ঠেলে যাওয়ার সময় দূর থেকে ভেসে আসে ‘চানাচুর, আচার, বিস্কুট, লজেন্স আছে গো’।
বেলডাঙা পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বছর ছেচল্লিশের অনিতা নন্দীকে চেনেন না এমন লোক ওই তল্লাটে খুব কমই আছেন। তাঁর এই দীর্ঘ লড়াইকে কুর্নিশও করেন এলাকার মানুষ। পুরসভার কাউন্সিলর বিজেপির অলোক ঘোষ যেমন স্পষ্ট বলছেন, “এতগুলো বছর ধরে চোখের সামনে দেখে আসছি, কী ভাবে একা লড়াই করে সংসারটাকে দাঁড় করালেন ওই মহিলা। পরিশ্রমের সঙ্গে ওকে কোনদিন আপোস করতে দেখিনি।”
পড়াশোনাতে ছোট থেকেই চৌখস ছিলেন অনিতা। একাদশ শ্রেণী পর্যন্ত তাঁর রোল নম্বর থাকত এক থেকে দশের মধ্যেই। কিন্তু সেই বছরেই বিয়ে হয়ে যায় তাঁর। এদিকে সংসারে অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। ইতি টানতে হয় লেখাপড়াতে। স্বামী কোনও নিয়মিত রোজগার করতে পারছিলেন না। অনিতা বলেন, “সংসারের একমাত্র রোজগেরে লোকটাই যদি বাড়িতে বসে থাকে, তাহলে সেই সংসারের হাল কী হতে পারে বলুন? এদিকে ছেলে মেয়েও বড় হচ্ছে এই অবস্থায় চুপ করে আর বসে থাকা সম্ভব হয়নি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘অভাব যে কী সাংঘাতিক হতে পারে, তা আমি খুব ভাল করেই জানি। মাঝেমধ্যে চা-চিনিটুকু পর্যন্ত প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে ধার করে আনতে হত।’’
অনিতা বলেন, ‘‘তখনই ঠিক করি চায়ের ব্যবসাটাই শুরু করব। কিন্তু টাকা কোথায়? এরপর পরিচিত কয়েকজনের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চা বিক্রি শুরু করি।’’ আজ থেকে বছর দশেক আগে এইভাবেই জীবন যুদ্ধে টিঁকে থাকার লড়াইটা শুরু করেন অনিতা। তিনি বলেন, ‘‘চা বিক্রি করে সামান্য যা আয় হচ্ছিল, তা এতবড় সংসারের পক্ষে যথেষ্ট ছিল না। এটা বুঝতে পেরেছিলাম যে পাশাপাশি অন্য কিছু করা দরকার। তারপর আরও কিছু টাকা ধার করে একটা সাইকেল কিনে ফেলি। চায়ের পাশাপাশি অন্য জিনিসপত্রও ফেরি করতে লাগলাম। তারপর থেকেই একটু একটু করে লাভের মুখ দেখতে শুরু করি।’’ একা সংসারের যাবতীয় কাজ, টিউশন, সাইকেলে ফেরি করে এইভাবেই সংসারকে ধরে রেখেছেন অনিতা। লেখাপড়া শিখিয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে জ্যোতিপ্রসাদ এখন একাদশ শ্রেণীর ছাত্র। অনিতা বলেন, ‘‘বছর দুয়েক আগে স্থানীয় শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে একটা কাজও পেয়েছি। পাশাপাশি ফেরিও করি। কিন্তু কপালে সুখ বোধহয় সহ্য হল না। ধীরে ধীরে যখন সংসারে শ্রী ফিরতে শুরু করল, তখনই একেবারে একা হয়ে গেলাম। হঠাৎ মারা গেলেন স্বামী।’’
তাই বলে হাল ছেড়ে দেননি তিনি। সারাদিনের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পর ঘুমে দু’চোখ জুড়িয়ে আসে, কিন্তু তিনি ঘুমোতে পারেন না। গভীর রাত পর্যন্ত ছেলে পড়াশোনা করে আর অনিতা ছেলের পাশে বসেই প্যাকেটবন্দী করেন চানাচুর, বিস্কুট, আচার। ভোরের আলো ফুটলেই যে তাকে ফের ছুটতে হবে মেঠোপথ ভেঙে এগিয়ে চলে অনিতার সাইকেল চানাচুর, আচার, বিস্কুট, লজেন্স নিয়ে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.