তেত্রিশ বছর পর বিশ্ব ক্রিকেটে আবার ক্যালিপসো সুর
গেইলের ‘অ্যান্টিডোট’ আবিষ্কার করেও
লজ্জার হার টিম জয়বর্ধনের

তিরিশ বছর আগে যে টিম শেষবার কোনও বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছে, যে টিমের এক নম্বর ব্যাটসম্যান পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগেই ডাগআউটে ফিরে গিয়েছে, প্রথম দশ ওভারে যে টিমের রান রেট ছিল তিনসুপার সানডে-র রাতে সেই টিমটাই কি না শেষ হাসি হাসল! তেত্রিশ বছর বাদে ফের কোনও বিশ্বকাপ জেতার হাসি!
অবাক লাগতে পারে। কিন্তু এর নামই টি-টোয়েন্টি। মাহেলাদের উৎসব নয়, বদলে টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ল অবিশ্বাস্য সব ছবি। গেইলের চিকেন ডান্স। স্যামুয়েলসের পাগলের মতো নাচ। চিৎকার। ঘোর লাগছিল ভেবে যে, তা হলে কি ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের পুনর্জন্ম দেখে ফেলল প্রেমদাসা? নাহ, এখনই সেটা বলতে পারছি না। লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজের যে ঐতিহ্য ছিল, তা গেইলরা ধরে রাখতে পারবে কি না, সময় বলবে। কারণ এখানে কুড়িটা ওভার ঠিকঠাক খেললেই কেল্লা ফতে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বে নিঃসন্দেহে অন্যতম ‘সুপার-পাওয়ার’ এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটকে ঠিক রাস্তায় নিয়ে যাবে রবিবারের এই জয়। মার্লন স্যামুয়েলস, সুনীল নারিনের মতো ক্রিকেটার আছে। সবার উপরে আছে গেইল। স্যামিদের টিমস্পিরিটও অসাধারণ।
রবিবার টস জেতাটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা সেমিফাইনালই বুঝিয়ে দিয়েছিল, এই উইকেটে রান তাড়া করাটা মোটেও সহজ নয়। ১৩৭ দুর্দান্ত স্কোর না হলেও ক্যারিবিয়ানদের পাল্টা লড়াই দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। প্রথম দশ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিজেরা যেমন বেশি রান তুলতে পারেনি, তেমনই আবার শ্রীলঙ্কাকেও নিজেদের পাওয়ার প্লে-র সুযোগ নিতে দেয়নি।
কলম্বোয় ক্যারিবিয়ান পার্টি। ছবি: এপি
শ্রীলঙ্কার যেখানে ভাল শুরু দরকার ছিল, সেখানে পাওয়ার প্লে-র শেষে ওদের স্কোর দাঁড়াল ৩০-১। সঙ্গকারা-জয়বর্ধনে জুটি জয়ের আশা দেখালেও শেষ পর্যন্ত রানরেটের ফাঁসে আটকে গেল শ্রীলঙ্কা। পাওয়ার প্লে-টাকে কাজে লাগাতে পারেনি বলে পরের দিকে একটা ডট বল হলেও আস্কিংরেট প্রচণ্ড বেড়ে যাচ্ছিল। মাঝে আবার ডাকওয়ার্থ-লুইস নিয়মে ম্যাচ হারার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল বলে বোধহয় শ্রীলঙ্কার উপর চাপটাও অসহ্য হয়ে দাঁড়াল।
এই নিয়ে পরপর চারটে বিশ্বকাপ ফাইনালে মুখ চুন করে ফিরতে হল শ্রীলঙ্কাকে। কিন্তু তার পরেও যদি ড্রেসিংরুমে ফিরে জয়বর্ধনে দেখে বিভিন্ন দেশের ক্রিকেট অধিনায়কের ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ মেসেজে ওর মোবাইল ভর্তি, আমি অন্তত অবাক হব না। গেইলকে আটকানোর ফর্মুলাটা অন্তত বের করে ফেলেছে টিম জয়বর্ধনে। গেইলের বিরুদ্ধে জয়বর্ধনের ‘অ্যান্টিডোট’ ছিলযত পারো স্লোয়ার ডেলিভারি করো। বাইরে বাইরে বল করে যাও। হাতে মালিঙ্গার মতো পেসার থাকতেও জয়বর্ধনে শুরু করল ম্যাথেউজকে দিয়ে। কারণ একটাই। ম্যাথেউজের বলে সে রকম গতি নেই। আর স্লোয়ার ক্রিস গেইলের পছন্দের মেনুতে কোনও দিনই ছিল না। আইপিএলেও সেটা দেখেছি। অস্ট্রেলিয়ান বোলাররা কেউই ওকে স্লোয়ার দেয়নি। তাই গেইলও মস্তানি দেখিয়েছে। কিন্তু ম্যাথেউজ-কুলশেখরা এ দিন স্রেফ স্লোয়ার দিয়ে দিয়ে গেইলের দম আটকে দিয়েছিল। ফিনিশিং টাচটা দিল অজন্তা মেন্ডিস। আর একটা প্রশ্নও না তুলে পারছি না। গেইলও কি সচিন-সিনড্রোমে ভুগছে? ফাইনালের মতো বিরাট মঞ্চে তো দেখছি সচিন তেন্ডুলকরের মতো গেইলের রেকর্ডটাও আহামরি কিছু নয়। আইপিএলেও তো দু’বার রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে ফাইনালে তুলেও ট্রফিটা দিতে পারেনি।
গেইল-শো ফ্লপ। কিন্তু মার্লন-ম্যাজিক সুপারহিট বললেও কম বলা হয়। গেইল তাড়াতাড়ি ফিরে গেলে যে ক্যারিবিয়ান ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ডটাও ভেঙে যায়—রবিবারের পর সেই থিওরি অচল আধুলি। ফাইনালের অসম্ভব চাপ একার কাঁধে নিয়ে স্যামুয়েলস যে ইনিংসটা খেলল, তার জন্য যে কোনও সার্টিফিকেট কম পড়বে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে এটাই আমার দেখা সেরা ইনিংস। ভেবে দেখুন, উল্টো দিক থেকে ওকে সামান্য নির্ভরতা দেওয়ারও কেউ ছিল না। তার উপর রান রেট ধুঁকছে। পরের পর উইকেট পড়ছে। এই অবস্থায় ৫৬ বলে ৭৮ মুখের কথা নয়।
আসলে এই টিমটাই এমন। গেইল না পারলে, কোনও স্যামুয়েলস এসে হাজির হবে। এরা কেউ না পারলে হয়তো কোনও কায়রন পোলার্ড। মনে আছে, সেমিফাইনালে ওঠার পর ড্যারেন স্যামি বলেছিল, লন্ডন অলিম্পিকে বোল্ট-ব্লেকের সাফল্যই নাকি এ বার বিশ্বকাপে গেইলদের টোটকা। সত্যিই তো, যে টিমের ‘আইডল’ উসেইন বোল্ট, সেই টিমের দৌড়কে ক’জন আটকাতে পারে?

মেয়েদের বিশ্বসেরা অস্ট্রেলিয়া
ওয়াটসনরা পারেননি। পারল মেয়েদের অস্ট্রেলিয়া।
ইংল্যান্ডকে ৪ রানে হারিয়ে মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতল অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে অস্ট্রেলীয় মেয়েরা ২০ ওভারে ১৪২ রান তোলেন চার উইকেট হারিয়ে। ৪৫ রান করে সর্বোচ্চ স্কোরার জেস ক্যামেরন। ১৪৩ তুলতে নেমে ইংল্যান্ড করে ১৩৮-৯। শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১৬ রান প্রয়োজন ছিল তাদের। হারলেও টুর্নামেন্টের সেরা নির্বাচিত হন ইংল্যান্ড অধিনায়ক শার্লট এডওয়ার্ডস। টুর্নামেন্টে পাঁচ ইনিংসে ১৭২ রান পাওয়া এডওয়ার্ডস এ দিনও দলকে জেতানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ২৮ রানে তিনি আউট হতেই ইংল্যান্ডের লড়াই প্রায় শেষ হয়ে যায়।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.